সায়রা গলা নামিয়ে বলল, আস্তে আস্তে বলেন। জরিনি বেটি শুনতে পেলে দেমাগে মাটিতে পা পড়বে না! যাই হোক যেটা বলছিলাম, বুদ্ধির পরীক্ষায় এবারে যেগুলো পাস করল আবার সেগুলোকে নিয়ে নতুন ইঁদুরের সংসার! আবার তাদেরকে নতুন রেডিয়েশন ডোজ-নতুন মিউটেশন নতুন বুদ্ধির পরীক্ষা! বুঝতে পেরেছেন?
যারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে তারা বিশ্বাস নাও করতে পারে কিন্তু আমি সত্যি সত্যি টেকনিকটা বুঝে গেলাম। চোখ বড় বড় করে বললাম, এভাবে অনেকবার করে ইঁদুরদের আইনস্টাইনকে বের করে ফেলেছেন?
মেয়েটি ফিক করে হেসে বলল, বলতে পারেন ইঁদুরদের আইনস্টাইন। শুধু একটা সমস্যা
কী সমস্যা?
বুদ্ধির পরীক্ষা যখন কঠিন থেকে কঠিন হতে লাগল তখন পরীক্ষায় পাস করতে লাগল অল্প অল্প ইঁদুর। সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পাস করেছে মাত্র একটা ইঁদুরী।
ইঁদুরী?
হ্যাঁ। মানে মেয়ে ইঁদুর। তার সাথে সংসার করবে সেরকম বুদ্ধিমান ছেলে ইঁদুর আর পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই আমি আর আগাতে পারছি না। একটা মেয়ে ইঁদুরী নিয়ে বসে আছি। সেই ইঁদুরী মহা ফাজিল, আমার সাথে এমন সব কাণ্ড করে সেটা আর বলার মতো নয়!
কী কাণ্ড করে সেটা না বলে মেয়েটা খুব একটা হতাশার ভঙ্গি করে মাথা নাড়তে লাগল। আমি এবারে ইঁদুরের খাঁচাটার দিকে এগিয়ে গেলাম, ছোট একটা নেংটি ইঁদুর দুই হাত বুকে ভাজ করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে তড়াক করে ভেতরে ঢুকে গেল। সেখানে ছোট একটা ঘরের মতো, তার দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে টুক করে লাইট জ্বালিয়ে দিল। একটু পরে শুনলাম ভিতর থেকে একটা হিন্দি গানের সুর ভেসে আসছে, লটপট লটপট সাইয়া সাইয়া কাহা…।
সায়রা আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, আপনাকে নতুন মানুষ দেখেছে তো তাই একটু রঙ দেখাচ্ছে!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, হঠাৎ করে অন্য পাশ দিয়ে একটা দরজা খুলে গেল আর একটা খেলনা গাড়িতে করে ইঁদুরটা বের হয়ে এল-ধাচার চারপাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে সেটা আবার ভেতরে কোথায় অদৃশ্য হয়ে যায়। হিন্দি গান বন্ধ হয়ে এবারে ইংরেজি গান ব্রু হয়ে গেল। সায়রা বলল, চলেন এখান থেকে যাই। আপনি যতক্ষণ থাকবেন ততক্ষণ এই বেটি ঢং করতেই থাকবে!
আমি বললাম, কানে দুল পরেছে। গলায় মালা?
কানের দুলটি আমি পরিয়েছি-ওটা আসলে একটা মাইক্রোওয়েভ ট্র্যাকিং ডিভাইস। মালাটা নিজেই পরেছে। চলেন বের হই।
আমি একেবারে হতবাক হয়ে মেয়েটার পিছু পিছু বের হয়ে এলাম, নিজের চোখে না দেখলে এটা বিশ্বাস করা একেবারে অসম্ভব ব্যাপার! একটা ইঁদুরকে যদি এরকম বুদ্ধিমান করে ফেলা যায় তা হলে মানুষকে কী করে ফেলা যাবে?
সায়রা সায়েন্টিস্টের বাসা থেকে আমি সন্ধেবেলা ফিরে এলাম। আসার আগে আমি আমার ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বর দিয়ে বললাম, যদি জরিনিকে নিয়ে কিংবা অন্য কোনো কিছু নিয়ে কিছু একটা ঘটে আমাকে জানাতে। সায়রা আমার কাছে জানতে চাইল আমার ই-মেইল অ্যাড্রেস কী-শব্দটা বিল্টুর কাছে শুনেছি কিন্তু ব্যাপারটা কী আমি সেটাই জানি না। তাই আমতা-আমতা করে বললাম যে, খোঁজখবর নিয়ে তাকে নিশ্চয়ই জানাব।
.
আমার জটিল সমস্যা হলে আমি বিল্টুর কাছে যাই, কাজেই এবারেও আমি বিল্টুর কাছে হাজির হলাম এবারেও দেখি সে কম্পিউটারের সামনে বসে আছে। আমাকে দেখে তার মুখটা আনন্দে উজ্জ্বল হওয়ার বদলে কেমন যেন ফিউজড বাল্বের মতো নিবে গেল। শুধু তাই নয়, মুখটা প্যাঁচার মতো করে বলল, ,আমা, তুমি আবার এসেছ?
আমি একটু রেগে উঠে বললাম তোরা এমন হয়েছিস কেন? আমরা যখন ছোট ছিলাম মামারা এলে কত খুশি হতাম, তোরা আমাদের দেখলেই মুখটা ব্যাজার করে ফেলিস!
তোমাদের মামারা নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে অনেক মজার মজার জিনিস করত- তোমরা শুধু সমস্যা নিয়ে আস। বলো এখন তোমার কী সমস্যা।
আমি ভাবলাম বলি যে কোনো সমস্যা নেই, এমনিতে তাকে দেখতে এসেছি। কিন্তু সেটা বলে আরো সমস্যায় পড়ে যাব। তাই সত্যি কথাটাই বললাম, ঠিক আছে যা। তোর কাছে আর সমস্যা নিয়ে আসব না। এই শেষ।
বলো।
ই-মেইল জিনিসটা কী? তার অ্যাড্রেস কেমন করে পেতে হয়?
বিল্টু এমন ভাব করতে লাগল যেন আমার কথা শুনতেই পায় নি, কম্পিউটারে খুটখুট করতে থাকে। আমি গলা খাকারি দিয়ে বললাম, শুনেছিস আমার কথা?
শুনছি। বলে যাও।
আর এই জিনিসটার নাম ই-মেইল কেন? এটাকে অ-মেইল বা আ-মেইল, না বলে ই-মেইল কেন বলে?
বিল্টু কম্পিউটারে খুটখুট করতে থাকে। আমি মাথা চুলকে বললাম, এইটা কি রেলওয়ের ব্যাপার? কোনো মেইল ট্রেনের সাথে যোগাযোগ আছে? কোনো স্টেশনের ঠিকানা? তা হলে স্টেশনটা কোথায়?
বিল্টু চোখের কোনা দিয়ে একবার আমাকে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ছিমছাম পরিষ্কার মহিলারা তেলাপোকা দেখলে মুখটা যেরকম করে, তার মুখটা হল অনেকটা সেরকম। আমি বললাম, কী হল? মুখটা এরকম প্যাঁচার মতো করছিস কেন?
আমার অনুরোধ তুমি এইসব ব্যাপার নিয়ে কখনো কারো সাথে কথা বলবে না। আর যদি বলতেই চাও, খবরদার কোনোভাবে বলবে না তুমি আমার মামা। যদি বলো-
আমি গরম হয়ে বললাম, যদি বলি?
যদি বলো তা হলে আমার সুইসাইড করতে হবে। তুমি কি চাও তোমার একটা ভাগনে মাত্র বারো বছর বয়সে সুইসাইড করে ফেলুক?