সাংবাদিকরা এবারে চঞ্চল হয়ে উঠল, কয়েকজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, কে তৈরি করেছে?
ঠিক জানি না। হাবাগোবা টাইপের একজন মানুষ নিয়ে এসেছিল পত্রিকায় রিপোর্ট করার জন্য, বলেছিল একটা মহিলা সায়েন্টিস্ট তৈরি করেছে। আমি তাকে ঠকিয়ে রেখে দিয়েছি।
একজন মেয়ে সাংবাদিক দাঁড়িয়ে বলল, আপনি এটা আবিষ্কার করেন নাই? এটা আরেকজনের আবিষ্কার?
ঠিকই বলেছেন। আমার মেধা খুব কম। চা চামচের এক চামচ থেকে বেশি হবে না। তবে আমার ফিচলে বুদ্ধি অনেক। মানুষ ঠকিয়ে খাই। টাকাপয়সা নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপাই–ব্ল্যাকমেইল করি।
বয়স্ক একজন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি যে সবার সামনে এগুলো বলছেন আপনার সম্মানের ক্ষতি হবে না?
সম্মান থাকলে তো ক্ষতি হবে। আমি একজন চোর। আমার কথা বিশ্বাস না করলে আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন। আমি যে কবিতা লিখেছি, ছবি এঁকেছি, গান গেয়েছি সব এই যন্ত্র দিয়ে। আমার নিজের কোনো প্রতিভা নাই!
গজনফরের স্ত্রী এতক্ষণ চোখ বড় বড় করে এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন, এবারে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি কী করছ? সবকিছু বলে দিচ্ছ কেন?
আমার কোনো কন্ট্রোল নাই! দেখছ না আমার সত্যি কথা বলার রোগ হয়েছে।
না, তুমি আর কিছু বলবে না। গজনফরের স্ত্রী তার স্বামীর দিকে ছুটে এলেন, তার মুখ চেপে ধরার চেষ্টা করলেন। গজনফর আলী হঠাৎ করে বললেন, ভয়ের কিছু নেই, সত্যি কথা বলতে কোনো ভয় নেই। তুমিও পারবে।
না, খবরদার, চুপ কর।
ঠিক আছে তা হলে এই হেলমেটটা পর–তা হলে পারবে। এবং কেউ কিছু বোঝার আগে গজনফর আলী হেলমেটটা তার স্ত্রীর মাথায় পরিয়ে দিলেন। তার স্ত্রী একবার চোখ ঘুরিয়ে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিকই বলেছিস, চামচিকার বাচ্চা চামচিকা, তুই হচ্ছিস চোর ডাকাত গুণ্ডা বদমাশ! মানুষ ঠকানো তোর স্বভাব। তোকে দেখলে পাপ হয়
সায়রা ফিসফিস করে বলল, মহিলাকে একটু রাগিয়ে দেওয়া যাক।
এমনিতেই তো রেগে আছে!
এটা কি রাগ হল? দেখেন মজা। সায়রা রাগের সুইচ টিপে দিল, তারপর যা একটা কাও হল সেটা দেখার মতো দৃশ্য। গজনফর আলীর স্ত্রী একটা হুঙ্কার দিয়ে গজনফর আলীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন, নাকে এবং পেটে ঘুসি মেরে একেবারে ধরাশায়ী করে দিলেন। গজনফর আলীকে বাঁচানোর জন্য কয়েকজন স্টেজে ওঠার চেষ্টা করছিল, চেয়ার দিয়ে তাদের পিটিয়ে তিনি তাদের লম্বা করে ফেললেন। মাইকের স্ট্যান্ড ঘুরিয়ে ছুঁড়ে মারলেন। ট্রান্সক্রেনিয়াল স্টিমুলেটর ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেললেন। আঁ আঁ করে বুকে থাবা দিয়ে চেয়ার ঘুরাতে ঘুরাতে তিনি স্টেজ থেকে নিচে নেমে এলেন।
চেয়ারে বসে থাকা দর্শক এবং সাংবাদিকরা কোনোভাবে সেখান থেকে পালিয়ে রক্ষা পেল! আমিও সায়রার হাত ধরে টেনে কোনোভাবে সেই ভয়াবহ কাণ্ড থেকে পালিয়ে এসেছি।
পরের দিন সব পত্রিকায় খবরগুলো খুব বড় করে এসেছিল।
মোল্লা গজনফর আলীর কুকীর্তি শিরোনামে দৈনিক মোমের আলোতে নিয়মিত ফিচার বের হতে শুরু করেছে।
সব সাংবাদিক এখন যে হাবাগোবা লোকটি এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি মোল্লা গজনফর আলীর কাছে প্রথম নিয়ে গিয়েছিল তাকে খুঁজছে।
নিজেকে হাবাগোবা মানুষ বলে পরিচয় দিতে ইচ্ছে করে না বলে কাউকে আর পরিচয় দিই নি– তা না হলে এবারে বিখ্যাত হবার খুব বড় একটা সুযোগ ছিল।
তবে সায়রা সায়েন্টিষ্টের সাথে যোগাযোগ রাখছি। সে নিশ্চয়ই আরেকটা সুযোগ করে দেবে। ঠিক করেছি সেই সুযোগটা আমি আর কিছুতেই গুবলেট করে ফেলব না।