ভেরি গুড। দেখা যাক সত্যি আপনি সাহসী থাকতে পারেন কি না।
গজনফর আলী কন্ট্রোলটা নিয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে সুইচটা টিপে ধরতেই মানুষটা দুই হাত দুই পা নিজের ভেতরে নিয়ে এসে ভয় পাওয়া গলায় এমন চিৎকার দিল যে উপস্থিত যারা ছিল সবাই চমকে উঠল। গজনফর আলী মানুষটাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি ভয় লাগছে?
মানুষটা দুই হাত দিয়ে নিজের চোখ ঢেকে একটা বিকট আর্তনাদ করে উঠল। গজনফর আলী সবার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে সুইচটা ছেড়ে দিয়ে বললেন, আপনারা সবাই নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন যে, ভয়ের অনুভূতিটি কিন্তু এই যন্ত্র থেকে এসেছে।
দর্শক এবং সাংবাদিকরা আবার হাততালি দিতে শুরু করে। গজনফর আলী মাইক্রোফোনটা হেলমেট মাথায় মানুষটির হাতে দিয়ে বললেন, আপনার অনুভূতির কথাটি শুনি?
মানুষটা তখনো দরদর করে ঘামছে, মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে পাংশু মুখে বলল, কী ভয়ংকর একটা অভিজ্ঞতা! আমি নিশ্চিত ছিলাম পুরো ব্যাপারটা আসলে বানানো। একেবারেই বিশ্বাস করি নি। চেয়ারে বসেছিলাম হঠাৎ করে এমন একটা অমানুষিক ভয় এসে ভর করল যে ভাষায় সেটার বর্ণনা করা যায় না। মনে হল এটা অন্ধকার একটা শ্মশান, চারপাশে ভূতপ্রেত, আর বিজ্ঞানী গজনফর আলী একজন দৈত্য!
খুব মজার একটা রসিকতা হয়েছে এরকম ভান করে গজনফর আলী হা হা করে হাসতে হাসতে বললেন, আমার মনে হয় এখন নতুন কোনো ভলান্টিয়ার পাওয়া খুব মুশকিল হবে! কাজেই আমিই হব ভলান্টিয়ার। এই যন্ত্রটা আমি মাথায় দেব এবং আমার স্ত্রী কন্ট্রোলটা দিয়ে আমার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন।
একজন জিজ্ঞেস করল, আপনার কীসের অনুভূতি?
গজনফর আলী চেয়ারে বসে মাথায় হেলমেটটা পরে বললেন, এতক্ষণ আপনাদের যা দেখানো হয়েছে সেটা মজার ব্যাপার হতে পারে, কৌতূহলের ব্যাপার হতে পারে কিন্তু তার কোনো বাস্তব গুরুত্ব নেই। এখন আপনাদের দেখাব কীভাবে এই যন্ত্রটি দিয়ে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটানো যায়। মানুষের ভেতরে গাণিতিক প্রতিভা কীভাবে বের করে নেওয়া যায়! আমি একজন সাধারণ মানুষ আপনাদের চোখের সামনে গাণিতিক প্রতিভা হয়ে যাব।
গজনফর আলী তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, সুইচটা টিপে দাও।
গজনফর আলীর স্ত্রী কন্ট্রোলটা হাতে নিয়ে ঠিক সুইচটা টিপে ধরলেন। গজনফর আলীর মুখ হঠাৎ করে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, আপনারা আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন না, কিন্তু আমি হঠাৎ করে একটা গাণিতিক প্রতিভা হয়ে গেছি! আমি ইচ্ছে করলে এখন মুখে মুখে ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন সলভ করতে পারি। পাইয়ের গঠন শত ঘর পর্যন্ত বলতে পারি। মুখে মুখে বড় বড় গুণ ভাগ করে ফেলতে পারি।
সায়রা তার ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে তার শাড়ির আঁচলে ঢেকে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, বাছাধনকে এখন বোঝাব মজা।।
আমিও ফিসফিস করে বললাম, কীভাবে?
গজনফরের ওয়াইফের কাছে যে কন্ট্রোলটা আছে সেটা এখন জ্যাম করে দিয়ে আমি কন্ট্রোল করব।
আমি উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী কন্ট্রোল করবেন?
আপনি দেখেন।
গজনফর আলী তখনো বলছে, আপনারা ইচ্ছে করলে আমাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। বড় বড় গুণ ভাগ দিতে পারেন, যে কোনো সংখ্যার নাম জিজ্ঞেস করতে পারেন।
সামনে বসে থাকা একজন বলল, ছেচল্লিশের নামতা বলেন দেখি!
ছেচল্লিশ তো সোজা। গজনফর আলী বলতে রু করল, ছেচল্লিশ একে ছেচল্লিশ, ছেচল্লিশ দ্বিগুণে বিরানব্বই, তিন ছেচল্লিশে–
সায়রা ফিসফিস করে বললেন, এই যে, সুইচ টিপে দিলাম।
সাথে সাথে গজনফর আলী থেমে গিয়ে সোজা হয়ে বসলেন। দর্শকদের মাঝে একটা মৃদু গুঞ্জন উঠল, একজন জিজ্ঞেস করল, কী হল? থেমে গেলেন কেন?
গজনফর আলী বললেন, একটা খুব বিচিত্র ব্যাপার ঘটেছে।
কী বিচিত্র ব্যাপার?
হঠাৎ করে আমার অঙ্ক করার ক্ষমতা চলে গিয়ে অন্য একটা ক্ষমতা এসেছে।
কী ক্ষমতা?
সত্যি কথা বলার ক্ষমতা। এখন আমি কোনো সত্যি কথা বলতে ভয় পাব না।
উপস্থিত দর্শক সাংবাদিক সবাই চুপ করে গেল কিন্তু গজনফর আলী থামলেন না, সামনে বসে থাকা একজনের দিকে তাকিয়ে বললেন, যেমন আপনাকে বলতে পারি, আপনি যে দাড়ি রেখেছেন সেটাকে বলে ছাগলদাড়ি, আপনাকে তাই ছাগলের মতো দেখাচ্ছে। আর ঐ যে ডান পাশে বসে আছেন নীল শাড়ি পরে পাউডার দিয়ে না হয় আপনার কালো রঙকে ঢাকলেন, কিন্তু বোচা নাককে সোজা করবেন কীভাবে?
দর্শকদের মাঝে হঠাৎ একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। একজন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে একটু রেগে বলল, আপনি হঠাৎ করে এরকম আপত্তিকর কথা বলতে শুরু করলেন কেন? আমাদের অপমান করছেন কেন?
গজনফর আলী একটুও রাগলেন না। হাসি হাসি মুখে বললেন, আমি মোটেও অপমান করছি না, সত্যি কথা বলছি।
তা হলে আপনি নিজের সম্পর্কে কিছু সত্যি কথা বলেন।
অবশ্যই বলব। আপনি কি ভাবছেন আমি ভয় পাব? এই যে দেখছেন আমার নাক, এটা এরকম চ্যাপ্টা হয়েছে কেমন করে জানেন?
দর্শকেরা মাথা নাড়ল, তারা জানে না।
গজনফর আলী বললেন, আমার স্ত্রীর ঘুসি খেয়ে। আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন আমার স্ত্রী হচ্ছে একটা গরিলার মতো সাইজের, যখন রেগে ওঠে তখন কোনো কাণ্ডজ্ঞান থাকে না, আমাকে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে দেয়!
সবাই একেবারে বজ্রাহতের মতো চুপ করে রইল। গজনফর আলী থামলেন না, বলতেই থাকলেন, এরকম গরিলার মতো একটা বউকে আমি কেমন করে কন্ট্রোল করি জানেন? গজনফর আলী মাথায় টোকা দিয়ে বললেন, বুদ্ধি দিয়ে। আপনারা সবাই যেরকম একটু বেকুব টাইপের, হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আমার কথা শুনছেন, আমি যেটাই বলছি সেটাই বিশ্বাস করছেন আমি সেরকম না। আমি খানিকটা ধুরন্ধর। গজনফর আলী একটু দম নিয়ে বললেন, এই যে যন্ত্রটা দেখছেন আপনারা ভাবছেন সেটা আমি তৈরি করেছি?