বাক্য শেষ না করে হঠাৎ করে তিনি কেন হাসলেন বুঝতে পারলাম না। বললাম, আবিষ্কারটা আমি নিয়ে আসব?
আবিষ্কার কি নিয়ে আসার জিনিস? যেটা আনলে কাজ হবে সেটা নিয়ে আসেন। একটা পেটমোটা এনভেলপ। হে হে হে।
গজনফর আলী কেন এনভেলপের কথা বললেন আর আবার কেন হাসলেন আমি বুঝতে পারলাম না। বললাম, যিনি আবিষ্কার করেছেন তাকে সহ নিয়ে আসব?
আপনি মনে হয় বুঝতে পারছেন না। গজনফর আলী একটু অধৈর্য হয়ে বললেন, আমি আপনাকে দেখব। আপনি আমাকে দেখবেন। এইটা দুনিয়ার নিয়ম। বুঝেছেন?
জি জি বুঝেছি। আমি কালকেই আপনার বাসায় চলে আসব তখন আপনি আমাকে দেখবেন আমিও আপনাকে দেখব। সামনাসামনি দেখে পরিচয় হবে।
ঠিক বুঝতে পারলাম না কেন জানি গজনফর আলী হঠাৎ করে আমার ওপর খুব বিরক্ত হয়ে উঠলেন। আমি অবিশ্যি কিছু মনে করলাম না-গরজটা যখন আমার কিছু তো সহ্য করতেই হবে! মোল্লা গজনফর আলীকে যদি নরম করতে পারি তা হলেই পত্রিকায় একটা ছবি ছাপানো যাবে। সারা জীবনের শখ পত্রিকায় একটা ছবি ছাপানো কাজেই আমি তার বিরক্তিটা হজম করে নিলাম।
তবে ঝামেলাটা হল সম্পূর্ণ অন্য জায়গায়-সায়রা বেঁকে বসল। মাথা নেড়ে বলল, আমি কোথাও যেতে পারব না।
না গেলে কেমন করে হবে? পত্রিকায় একটা নিউজ করতে চাইলে একটু কষ্ট করতে হবে না?
আমি কি খুন করেছি না মার্ডার করেছি যে পত্রিকায় নিউজ হতে হবে?
কী বলছেন আপনি? আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, এই একটা সুযোগ, পত্রিকায় আপনার সাথে আমার একটা ছবি ছাপা হত দশজনকে দেখাতাম।
সায়রা মুচকি হেসে বলল, আপনার যখন এত শখ ট্রান্সক্রেনিয়াল স্টিমুলেটর নিয়ে আপনি চলে যান।
আমি? সায়রা ঠাট্টা করছে কি না আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, বললাম, আমি যন্ত্রটার নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারি না আর আমি সেটা নিয়ে যাব?
আপনাকে আমি সব শিখিয়ে দিচ্ছি। কেমন করে চালায় সেটাও শিখিয়ে দেব।
আমি এখনো নিজে নিজে টেলিভিশন চালাতে পারি না
সায়রা হেসে বলল, ট্রান্সক্রেনিয়াল স্টিমুলেটর চালানো টেলিভিশন চালানো থেকে সোজা!
যন্ত্রপাতিকে আমি খুব ভয় পাই-কিছুতেই আমি রাজি হতাম না, কিন্তু পত্রিকায় ছবি ছাপা হবে ব্যাপারটা আমাকে এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলাম।
.
গজনফর আলীর বাসার বাইরে থেকেই ভেতরে একটা তুলকালাম কাণ্ড হচ্ছে বলে মনে হল, একজন মহিলা খনখনে গলায় বলল, তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবন বরবাদ হয়ে গেছে। আমার বাবা যদি হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দিত তা হলেই আমি ভালো থাকতাম।
শুনতে পেলাম গজনফর আলী বলছেন, তোমাকে না করেছে কে? হাত-পা বেঁধে এখন নদীতে লাফাও না কেন? আমার জানে তা হলে পানি আসে।
কী? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা? তুমি জান আমার বাবার ড্রাইভারের বেতন তোমার থেকে বেশি?
গজনফর আলী বললেন, শুধু বেতন কেন? সবকিছুই তো বেশি।
মহিলা খনখনে গলায় বললেন, কী বলতে চাইছ তুমি?
বলতে চাইছি যে তোমার মায়ের ওজন চিড়িয়াখানার হাতির ওজনের থেকে বেশি। তোমার ওজন
গজনফর আলী কথা শেষ করতে পারলেন না মনে হল তাকে কিছু একটা আঘাত করল। আরো বেশি সময় অপেক্ষা করলে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে তাই আমি কলিংবেলটা চেপে ধরলাম। ভেতরে হইচই এবং তুলকালাম কাণ্ড হঠাৎ করে থেমে গেল। গজনফর আলী নাকি গলায় বললেন, কে?
আমি।
আমি কে?
ঐ যে কালকে যে আবিষ্কার নিয়ে কথা বলেছিলাম সেটা নিয়ে এসেছি।
মনে হল ভেতরে কেউ গজগজ করে নিচু স্বরে কথা বলল, তারপর দরজা খুলে দিল। প্রফেসর গজনফর আলী একটা রুমাল দিয়ে নাক চেপে দাঁড়িয়ে আছেন। নাকের ওপর একটা আঘাত এসেছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। পাশের ভদ্রমহিলা নিশ্চয়ই তার স্ত্রী সাইজে গজনফর আলীর দ্বিগুণ। ভদ্রলোকের সাহস আছে মানতে হয়, তা না হলে কেউ এরকম একজন স্ত্রীর সাথে এভাবে ঝগড়া করে?
গজনফর আলী রুমাল দিয়ে নাক চেপে ধরে নাকি গলায় বললেন, যেটা আনতে বলেছি সেটা এনেছেন?
না, মানে ইয়ে-সায়েন্টিস্ট? তিনি আসতে রাজি হলেন না, আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
গজনফর আলী খুব বিরক্ত হয়ে বললেন, আমি কি সায়েন্টিস্টের কথা বলেছি? আমি এনভেলপের কথা বলছি। আপনাদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না, শুধু শুধু আমাদের সময় নষ্ট করেন।
আমি থতমত খেয়ে বললাম, একবার এই যন্ত্রটা দেখেন! এটার নাম হচ্ছে ট্রান্সক্রেনিয়াল স্টিমুলেটর
আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে গজনফর আলী বললেন, এটা ছাতামাতা যাই হোক আপনি রেখে যান। আমি দেখে নেব।
আপনি নিজে নিজে দেখতে পারবেন না। কীভাবে কাজ করে দেখিয়ে দিই।
গজনফর আলী মুখ বাঁকা করে বললেন, একটা সিস্টেম কীভাবে কাজ করে সেটা আপনি জানেন না–আর আপনি আমাকে এই যন্ত্র কীভাবে কাজ করে সেটা শিখাবেন?
আমি কী বলব বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেললাম, আপনাদের ফ্যামিলির জন্য এটা খুব দরকারি হতে পারত
গজনফর আলী নাক থেকে রুমাল সরিয়ে বললেন, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?
না মানে ইয়ে-বলছিলাম কী, বাইরে থেকে শুনেছিলাম দুইজনে ঝগড়া করছিলেন।
এবারে গজনফর আলীর স্ত্রী হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এক পা এগিয়ে এসে বললেন, আপনার এত বড় সাহস? দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের ব্যক্তিগত কথা শোনেন?