না ওস্তাদ। আমি পারুম না। এইটা নিশ্চয়ই ঘাউড়া ছগিরের কাটা হাত। আল্লাহর গজব লাগছে, কাটা হাত চইলা আইছে
ওস্তাদ অনেক কষ্ট করে একটা হাত ছুটিয়ে আনল কিন্তু তাতে ফল হল আরো ভয়ানক। হাতটা ছুটে গিয়ে এবারে সামনে দিয়ে গলায় চেপে ধরল এবং ওস্তাদ আ-আ করে সারা ঘরে ছুটে টেবিলে ধাক্কা লেগে দড়াম করে পড়ে গেল। নিচে পড়ে গিয়ে সে দুই হাত দুই পা ছুঁড়তে থাকে-বিকট গলায় চিৎকার করতে থাকে, কাউলারে কাউলা, বাচা আমারে আল্লাহর কসম লাগে-
কাউলা এবারে তার কাটা রাইফেল তাক করে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। চিৎকার করে হাত দুটিকে বলল, খামোস, খামোস বলছি-গুলি কইরা দিমু, বেরাশ মারমু।
ওস্তাদ হাত তুলে চিৎকার করে বলল, কাউলা হারামজাদা গুলি করে আমারে মারবি নাকি-খবরদার।
কাউলা বুঝতে পারল গুলি করায় সমস্যা আছে–তখন কাটা রাইফেলটা লাঠির মতো ধরে হাতটাকে মারার চেষ্টা করল, ঠিকভাবে মারতে পারল না, রাইফেলের বাটটা লাগল ওস্তাদের মাথায়, ঠাস করে একটা শব্দ হল আর চোখের পলকে মাথার এক অংশ গোল আলুর মতো ফুলে উঠল।
ওস্তাদ গগনবিদারী একটা চিৎকার করে দুই পা ছুঁড়ে একটা লাথি দিয়ে কাউকে ঘরের অন্য মাথায় ফেলে দেয়। কাউলা আবার উঠে আসে, কাটা রাইফেলটা দিয়ে আবার হাতটাকে আঘাত করার চেষ্টা করল, ওস্তাদ ক্রমাগত ছটফট করছিল বলে এবারেও আঘাতটা লাগল মুখে এবং শব্দ শুনে মনে হল তার চোয়ালটা বুঝি ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গেছে। কাউলা অবিশ্যি হাল ছাড়ে না, ওস্তাদের গলার মাঝে চেপে ধরে রাখা হাতটাকে আবার তার কাটা রাইফেল দিয়ে মারার চেষ্টা করল। এবারে সত্যি সত্যিই মারতে পারল কিন্তু তার ফল হল ভয়ানক!
কাটা হাতটা এতক্ষণ মালিশ করার চেষ্টা করছিল রাইফেলের বাটের আঘাত খেয়ে তার যন্ত্রপাতি গোলমাল হয়ে গেল, সেটা তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে থাকে এবং যেটাকেই হাতের কাছে পেল সেটাকেই ধরার চেষ্টা করতে লাগল। কাউলা ব্যাপারটা বুঝতে পারে নাই হঠাৎ করে হাতটা তার উরুর মাঝে খামছে ধরে, কাউলা যন্ত্রণায় চিৎকার করে ঘরময় লাফাতে থাকে আমার খাটের সাথে পা বেধে সে আছাড় খেয়ে পড়ল, বেকায়দায় পড়ে তার নাকটা থেতলে গেল এবং আমি দেখলাম নাক দিয়ে ঝরঝর করে আধ লিটার রক্ত বের হয়ে এল।
দুইজন নিচে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে, আমি সাবধানে বিছানা থেকে নেমে প্রথমেই অস্ত্রগুলো আলাদা করলাম, ওস্তাদের পিস্তল, কাউলার কাটা রাইফেল আর আমার রান্নাঘরের চাকু। তখন শুনতে পেলাম কে যেন আমার ঘরের দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, এখানকার ভয়ংকর নর্তন-কুর্দন শুনে এই বিল্ডিঙের সবাই নিশ্চয়ই চলে এসেছে। দরজা খুলতে যাবার আগে আমার মালিশ মেশিনের হাতগুলো সামলানো দরকার। আমি তিনবার হাততালি দিলাম, দুইবার সাথে সাথে, তৃতীয়বার একটু পরে, ঠিক যেরকম সায়রা শিখিয়ে দিয়েছিল। সাথে সাথে হাতগুলো নেতিয়ে পড়ে যায়। আমি সাবধানে হাতগুলো নিয়ে খাটের নিচে রেখে দরজা খুলতে ছুটে গেলাম, আর একটু দেরি হলে মনে হয় দরজা ভেঙে সবাই ঢুকে যাবে। তখন বাড়িওয়ালাকে ব্যাপারটা বোঝানো খুব কঠিন হয়ে যাবে।
কাউলা এবং ওস্তাদের যে অবস্থা তারা আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না।
.
পুলিশ যখন কোমরে দড়ি বেঁধে কাউলা আর ওস্তাদকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন শুনলাম ওস্তাদ ফ্যাসফ্যাসে গলায় কাউকে বলছে, তোরে কইছিলাম না-হাবাগোবা মানুষের বাসায় চুরি-ডাকাতি করতে হয় না? অহন আমার কথা বিশ্বাস করলি?
কাউলা ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, জে ওস্তাদ, করেছি। এই জন্মে আর হাবাগোবা মানুষের বাড়িতে ঢুকুম না। খোদার কসম।
মোল্লা গজনফর আলী
আমি কলিংবেলে চাপ দিয়ে বিল্টুকে বললাম, বুঝলি বিল্টু, যদি দেখা যায় সায়রা বাসায় নাই, কিংবা বাসায় আছে কিন্তু দরজা খুলছে না কিংবা দরজা খুলছে কিন্তু ভেতরে আসতে বলছে না কিংবা ভেতরে আসতে বলছে কিন্তু খেতে বলছে না তা হলে কিন্তু অবাক হবি না।
বিল্টু ভুরু কুঁচকে বলল, কেন মামা।
কারণ এইটাই সায়েন্টিস্টদের ধরন। সব সময় কঠিন কঠিন জিনিস নিয়ে চিন্তাভাবনা করে তো, তাই সাধারণ জিনিসগুলি তারা ভুলে যায়।
এইটা কি সাধারণ জিনিস হল? আমাদের খেতে দাওয়াত দিয়েছে-এখন ভুলে গেলে চলবে?
আমি মাথা নেড়ে বললাম, সাধারণ মানুষের বেলায় চলবে না-কিন্তু সায়েন্টিস্টদের বেলায় কিছু বলা যায় না। সবকিছু ভুলে যাওয়া হচ্ছে তাদের কাজ।
তুমি কেমন করে জান?
সিনেমায় দেখেছি।
আমার কথা বিল্টু পুরোপুরি বিশ্বাস করল বলে মনে হল না, সে নিজেই এবারে কলিংবেল টিপে ধরল, যতক্ষণ টিপে ধরে রাখা ভদ্রতা তার থেকে অনেক বেশিক্ষণ। এবারে কাজ হল, কিছুক্ষণের মাঝেই খুট করে দরজা খুলে গেল এবং সায়রা মাথা বের করে বলল, ও! আপনারা চলে এসেছেন?
আমি বললাম, হ্যাঁ, মানে ইয়ে, আমরা একটু আগেই চলে এলাম।
ভালো করেছেন। আপনারাও তা হলে দেখতে পারবেন।
বিল্টু জিজ্ঞেস করল, কী দেখতে পারব?
আমার রান্না করার মেশিন। সায়রা গম্ভীর হয়ে বলল, এখন পর্যন্ত তিনটা ইউনিট রেডি হয়েছে। ভাত, ডাল আর ডিমভাজি।
বিল্টুর চক্ষুলজ্জা স্বাভাবিক মানুষ থেকে অনেক কম। সে জিজ্ঞেস করল, তার মানে আমরা শুধু ভাত, ডাল আর ডিমভাজি খাব?