ভৌতিক? দিনদুপুরে ভৌতিক? সায়রা রেগে গিয়ে বলল, আপনি সত্যিই মনে করেন পৃথিবীতে ভৌতিক জিনিস থাকা সম্ভব?
ভূত আছে কি নেই সেটা নিয়ে একটা তর্ক শুরু হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাব, তাই আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, এইগুলি আপনি নিজে তৈরি করেছেন?
ভাঙা টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি তুলতে তুলতে সায়রা মুখ বাঁকা করে বলল, না, এগুলো তো কিনতে পাওয়া যায় তাই আমি ধোলাইখাল থেকে কিনে এনেছি!
আমিও লণ্ডভণ্ড ঘরটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে করতে বললাম, আই অ্যাম সরি- হঠাৎ করে দেখে এত ভয় পেয়ে গেলাম!
সায়রা কঠিন মুখ করে বলল, আপনি যখন এরকম ভীতু মানুষ আপনার ঘর থেকেই বের হওয়া উচিত না। দরজা বন্ধ করে বসে থাকবেন, একটু পরে পরে আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফুঁ দিবেন। আরো ভালো হয় কোনো পীর সাহেবকে ধরে গলায় একটা তাবিজ লাগিয়ে নিলে-
সায়রা রেগে গেছে, আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললাম, আমাকে শুধু শুধু দোষ দিচ্ছেন। হাত দুটো এমন চমৎকারভাবে আমার ঘাড় মালিশ করছিল যে আমি একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর ছিলাম যে এগুলো আপনার হাত! যখন তাকিয়ে দেখি আপনি সামনে-আর হাত দুটো কনুই পর্যন্ত-ভয়ে আমার পেটের ভাত চাল হয়ে গেল। আপনি আমার জায়গায় থাকলে আপনারও হত
আমার কথা শুনে সায়রার রাগ একটু কমল মনে হল, বলল, তা হলে আপনি বলছেন এটা একেবারে সত্যিকারের হাতের মতো?
সত্যিকার থেকে ভালো। কেমন করে তৈরি করলেন?
অনেক যন্ত্রণা হয়েছে। আঙুল কীভাবে নড়াব, কতটুকু চাপ দেবে, কতটুকু ঘষা দেবে সবকিছু হিসাব করে বের করতে হয়েছে। তারপর যান্ত্রিক একটা হাত তৈরি করতে হয়েছে, সেটার সাথে মাইক্রো প্রসেসর ইন্টারসেফ লাগাতে হয়েছে। প্রোগ্রামিং করতে হয়েছে, পুরো প্রোগ্রামটি ডাউনলোড করে ই-প্রম ব্যবহার করে ভেতরে বসাতে হয়েছে।
এত কষ্ট করে এটা তৈরি করলেন?
সায়রা উদাস গলায় বলল, খালি গায়ে একজন তেল মেখে বসে আছে আরেকজন তাকে দলাইমলাই করছে দৃশ্যটা এত কুৎসিত- তাই এটা তৈরি করলাম। যে কেউ পড়াশোনা করতে করতে, টিভি দেখতে দেখতে কিংবা গান শুনতে শুনতে শরীরের যে কোন জায়গা ম্যাসেজ করাতে পারবে।
আমি বললাম, কী সাংঘাতিক!
হ্যাঁ। সায়রা বলল, আমি এটা তৈরি করেছিলাম আপনার জন্য কিন্তু আপনি যা একটা কাণ্ড করলেন, এখন মনে হচ্ছে বাক্সে তালা মেরে রাখতে হবে।
আমি চমকে উঠে বললাম, আ-আ-আমার জন্য তৈরি করেছেন? আ-আ-আমার জন্য?
সায়রা বলল, আপনার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই-এটা আপনাকে নিতে হবে না! এটা দেখে ভয় পেয়ে হার্টফেল করে আপনি মারা যাবেন আর পুলিশ এসে আমাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাবে! আমি তার মাঝে নেই।
আমি হড়বড় করে বললাম, না-না-না! আমি আর ভয় পাব না। একেবারেই ভয় পাব না। বিশ্বাস করেন-এই যে আমার নাক ছুঁয়ে বলছি, চোখ ছুঁয়ে বলছি
সায়রা ভুরু কুঁচকে বলল, নাক ছুঁয়ে বললে চোখ ছুঁয়ে বললে কী হয়?
আমি মাথা চুলকে বললাম, তা তো জানি না। কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়।
সায়রা হেসে বলল, তার মানে আপনি বলছেন এই রবোটিক হ্যান্ড ফর অটোমেটেড মাসল রিলাক্সিং ডিভাইস উইথ মাইক্রো প্রসেসর ইন্টারফেসটা নিতে আপনার আপত্তি নেই?
আমি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বললাম, না, কোনো আপত্তি নাই।
সায়রা বলল, আপনি কিন্তু মনে করবেন না এটা আপনাকে দিচ্ছি শুধু মজা করার জন্যে। এর পিছনে কিন্তু গভীর বৈজ্ঞানিক ব্যাপার আছে।
আমি একটু ভয়ে ভয়ে বললাম কী ধরনের ব্যাপার?
আপনি এটার ফিল্ড টেস্ট করবেন। আপনাকে একটা ল্যাবরেটরি নোটবই কিনতে হবে এবং সেখানে সবকিছু লিখে রাখতে হবে। আপনি আমার জন্যে ডাটা রাখবেন।
ব্যাপারটা কীভাবে করতে হয় সেটা নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই কিন্তু আমি তবু ঘাবড়ালাম না, মাথা নেড়ে বললাম, রাখব।
ভেরি গুড। সায়রা বলল, এখন তা হলে আপনাকে দেখিয়ে দেই এটা কীভাবে কাজ করে।
আমি বললাম, তার আগে আমার একটি কথা আছে।
কী কথা?
আপনার এই যন্ত্রকে এরকম কটমটে নাম দিয়ে ডাকতে পারব না।
তা হলে এটাকে কী ডাকবেন?
আমি এটাকে ডাকব মালিশ মেশিন।
আমার কথা শুনে সায়রা হি হি করে হেসে বলল, আমার এত কষ্ট করে তৈরি করা এরকম মডার্ন একটা যন্ত্রের এরকম মান্ধাতা আমলের নাম দিয়ে দিলেন?
আমি জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, আমি মানুষটাই তো মান্ধাতা আমলের।
ঠিক আছে? সায়রা মাথা নেড়ে বলল, আপনার যেটা ইচ্ছে হয় সেটাই ডাকেন। আগে আসেন আপনাকে শিখিয়ে দেই এটা কীভাবে কাজ করে।
আমি একটু ভয়ে ভয়ে বললাম, আমি কি শিখতে পারব?
নিশ্চয়ই পারবেন। সায়রা তার যন্ত্রের হাত দুটোকে তুলে নিয়ে বলল, আমি এটা এমনভাবে ডিজাইন করেছি যেন খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
আমি খুশি হয়ে বললাম, ভেরি গুড। তারপর সায়রার পিছু পিছু তার ল্যাবরেটরির ঘরের দিকে রওনা দিলাম।
সন্ধেবেলা আমি আমার ঘরে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসেছি। আমার কোলে একটা নোটবই এবং একটা বল পয়েন্ট কলম। নোটবইয়ের উপরে লেখা মালিশ মেশিন সংক্রান্ত তথ্য। সায়রা যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেভাবে আজকে আমি বৈজ্ঞানিক তথ্য নেব বলা যায় জীবনের প্রথম। সায়রার তৈরি করা হাত দুটো সামনে রাখা আছে আমি জানি এটা যান্ত্রিক হাত, ভেতরে যন্ত্রপাতি এবং ইলেকট্রনিক্স এবং পুরোটা এক ধরনের পলিমার দিয়ে তৈরি। তারপরেও মেঝেতে রেখে দেওয়া হাত দুটোকে দেখে আমার কেমন জানি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতে থাকে।