পোস্ট মডার্ন কবিতা লিখে ইমতিয়াজ একদিন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও লজ্জার মাঝে ফেলে দেবে এ রকম একটা কথা শাহনাজ অবশ্য আগেও শুনেছে কিন্তু এটি মনে হয় অন্য ব্যাপার। সে জানতে চাইল, কী জন্য তুমি বিখ্যাত হয়ে গেছ?
আমি এমন জিনিস আবিষ্কার করেছি যেটা সারা পৃথিবীর কেউ কোনোদিন দেখে নাই, কোনোদিন কল্পনাও করে নাই। শুধু স্বপ্ন দেখেছে! ইমতিয়াজ এই পর্যায়ে উঠে দাঁড়িয়ে একপাক ভরতনাট্যম কিংবা খেমটা নাচ দিয়ে চিৎকার করে বলল, এখন আমি বি.বি.সির সাথে ইন্টারভিউ দেব, সি. এন. এন.–এর সাথে ইন্টারভিউ দেব। টাইম, নিউজউইকের কভারে আমার ছবি ছাপা হবে, রিডার্স ডাইজেস্টে আমার ওপর লেখা বের হবে
ইমতিয়াজ কথা বন্ধ করে দুই হাত উপরে তুলে ইয়াহু বলে একটা চিৎকার দিল।
শাহনাজের হঠাৎ সন্দেহ হতে থাকে ইমতিয়াজকে পথেঘাটে কেউ কোনো ড্রাগ খাইয়ে দিয়েছে কি না। সে কাজের ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়াকে কেউ কিছু খাইয়ে দিয়েছে নাকি? ধুতুরার বীজ না হলে অন্য কিছু?
কাজের ছেলেটা ফ্যাকাসে মূর্খে বলল, সেটা তো জানি না, আমি নিচে ছিলাম। স্যার একা টিলার উপরে উঠলেন, তারপর থেকে এইরকম অবস্থা।
অন্য কোনো সময় হলে ওদের এই কথা শুনে ইমতিয়াজ রেগেমেগে চিৎকার করে একটা কাণ্ড করত, এখন বরং হা হা করে হেসে উঠল। বলল, ভাবছিস আমি নেশা করছি? শুনে রাখ এইটা এমন ব্যাপার, কেউ যদি শোনে তার নেশা জন্মের মতো ছুটে যাবে।
কেন? কী হয়েছে?
সেই পাহাড়ে আমি কী দেখেছি জানিস?
কী?
একটা জলজ্যান্ত স্পেসশিপ!
শাহনাজ ভুরু কুঁচকে বলল, কী বললে? স্পেসশিপ?
হ্যাঁ। এরিখ ফন দানিকেন যেটা বলেছিলেন সেটাই মনে হয় সত্যি। ইমতিয়াজের গলা হঠাৎ আবেগে কেঁপে ওঠে, এই পৃথিবীর মানুষেরা হয়তো এসেছে গ্রহান্তর থেকে এই চা–বাগানে পাহাড়ের নিচে লুকিয়ে আছে সেই মহাকাশযান–পৃথিবীর ইতিহাস হয়তো আবার নতুন করে লিখতে হবে, সেই ইতিহাসের মাঝে যে নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে সেটা হচ্ছে– ইমতিয়াজ ধুমসো গরিলার মতো বুকে থাবা দিয়ে বলল, ইমতিয়াজ আহমেদ।
শাহনাজ এখনো পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারছে না। সত্যি সত্যি যদি ইমতিয়াজ একটা স্পেসশিপ খুঁজে পায় সেটা নিশ্চয়ই সাংঘাতিক একটা ব্যাপার, কিন্তু ইমতিয়াজের এই নর্তনকুর্দন দেখে কোনোকিছুই ঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। পুরো ব্যাপারটাই নিশ্চয়ই এক ধরনের বিকট রসিকতা কিন্তু ইমতিয়াজকে দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই।
ইমতিয়াজ বুকে থাবা দিয়ে বলল, খালি কি বিখ্যাত হব? নো–ও–ও–ও–ও! নো নো–নো! খ্যাতির সাথে আসবে ডলার। সবুজ সবুজ ডলার। বস্তা বস্তা ডলার! এই বান্দা বড়লোক হয়ে যাবে। বিখ্যাত এবং বড়লোক। কোথায় সেটল করব জানিস? মায়ামিতে! গরমের সময় চলে যাব সিয়াটল!
শাহনাজ ইমতিয়াজের প্রলাপের মাঝে একটু অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকে। যেরকম উত্তেজিত হয়েছে, মনে হয় আসলেই কিছু একটা দেখেছে। চা–বাগানের কাছে। পাহাড়ের নিচে স্পেসশিপ খুঁজে পাওয়া ব্যাপারটি প্রায় অসম্ভব, কিন্তু সত্যিই যদি হয়ে থাকে? শাহনাজ ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল, ভাইয়া, তুমি কেমন করে জান সেটা স্পেসশিপ?।
আমি জানি। তুই স্পেসশিপ দেখলে চিনতে পারবি না, কিন্তু আমি পারি। ইমতিয়াজ আবার বুকে থাবা দিল। যেভাবে খানিকক্ষণ পরপর বুকে থাবা দিচ্ছে, বুকের পাজরের এক আধটা হাড় না আবার ভেঙে যায়।
আমাকে নিয়ে যাবে সেখানে? আমিও দেখে আসি?
হঠাৎ করে ইমতিয়াজ চুপ করে গেল, তার চোখদুটো ছোট হয়ে যায়, আর সে এক ধরনের কুটিল চোখে শাহনাজের দিকে তাকাল। কিছুএকটা ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেছে এ রকম ভাব করে বলল, ও! আমাকে তুই বেকুব পেয়েছিস? ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না?
শাহনাজ অবাক হয়ে বলল, তুমি কী বোঝ না?
তোরও শখ হয়েছে বিখ্যাত হবার টাইম নিউজউইকের কভার? ইমতিয়াজ বাংলা সিনেমার ভিলেনদের মতো পা দাপিয়ে চিৎকার করে বলল, নেভার। তারপর বুকে আঙুল দিয়ে বলল, আমি এটা আবিষ্কার করেছি, বিখ্যাত হব আমি। আমি। আমি আমি। আমি একা। বুঝেছিস?
শাহনাজের সন্দেহ হতে থাকে যে তার ভাইয়ের মাথাটা মনে হয় একটু খারাপই হয়ে গেছে। সে অবাক হয়ে ইমতিয়াজের দিকে তাকাল। ইমতিয়াজ আঙুল দিয়ে চুল ঠিক করে বলল, এখন আমি সেখানে ফিরে যাব ক্যামেরা নিয়ে। সেই ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখব। এক–একটা ছবি বিক্রি হবে এক মিলিয়ন ডলারে। বুঝেছিস?
কিন্তু তুমি কি ক্যামেরা এনেছ?
কিন্তু তুই তো এনেছিস? ইমতিয়াজ চোখ লাল করে বলল, আনিস নি?
হ্যাঁ।
দে ক্যামেরা বের করে এক্ষুনি। না হলে খুন করে ফেলব।
শাহনাজ কোনো কথা বলল না। তাড়াতাড়ি সুটকেস খুলে আঘার ক্যামেরাটা বের করে দিল। ইমতিয়াজ সেটা ছোঁ মেরে নিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, পৃথিবীর ইতিহাস নতুন করে লিখবে এই ইমতিয়াজ আহমেদ!
ইমতিয়াজ ক্যামেরাটা নিয়েই ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। শাহনাজ জিজ্ঞেস করল, ছবি তুলে তুমি কি এখানে আসবে? নাকি সোজাসুজি ঢাকা চলে যাবে?
সোজাসুজি ঢাকা যাব, কেন?
আমিও ঢাকা যাব।
ইমতিয়াজ চিড়বিড় করে তেলে–বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, এখন আমার আর কোনো কাজ নেই তোকে ঘাড়ে করে ঢাকা নিয়ে যাই।
তা হলে আমি ঢাকা যাব কেমন করে?