শাহনাজ ডক্টর জিজিকে ধাক্কা দিয়ে বলল, ঐ দেখ, সোমা আপু হাসছে! তাড়াতাড়ি রেকর্ড কর।
ডক্টর জিজি বলল, আমি তথ্য সংরক্ষণ করতে শুরু করেছি। অত্যন্ত বিচিত্র।
শাহনাজ উবু হয়ে বসে সোমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, দেখতে দেখতে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।
০৯. ভাসমান যানটা শহরের উপর ঘুরছে
ভাসমান যানটা শহরের উপর ঘুরছে। খুব উপর থেকে নয়, মাটির কাছাকাছি মানুষজন গাড়ি দালানকোঠা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। কেউ তাদের দেখতে পাচ্ছে না, ভারি মজার একটা ব্যাপার। সোমার হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে সবার মনে খুব আনন্দ। ডক্টর জিজি যে আসলে মহাজাগতিক একটা প্রাণী, তার গায়ের রং সবুজ, বিশাল বড় মাথা, বড় বড় চোখ, নাকে দুটি গর্ত এবং কোনো মুখ নেই তবুও কথা বলে যাচ্ছে, হাতে তিনটি করে আঙুল, কোনো কাপড় পরে নেই কিন্তু তবু ন্যাংটা মনে হচ্ছে না এবং এই পুরো ব্যাপারটি প্রায় অসম্ভব একটি ঘটনা; কিন্তু শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলুর কাছে কোনোকিছুই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। প্রয়োজনে ডক্টর জিজির শরীরে তারা থাবা দিয়েও দেখছে, তুলতুলে নরম। ঠাণ্ডা একটি শরীর, হাত দিলে প্রথমে একটু চমকে উঠলেও একটু পরে বেশ অভ্যাস হয়ে যায়।
শাহনাজ ডক্টর জিজিকে বলল, ডক্টর জিজি, সোমা আপুকে ভালো করে দেওয়ার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
ডক্টর জিজি বলল, আমরা যখন নিচুশ্রেণীর সভ্যতায় যাই সেখানে কোনো বিষয়ে হাত দিই না। কিন্তু এই ব্যাপারটা অন্যরকম ছিল–
শাহনাজ চোখ পাকিয়ে বলল, আমাদের সভ্যতা নিচুশ্রেণীর?।
হ্যাঁ। সভ্যতা নিচুশ্রেণীর না হলে কেউ তাদের পরিবেশের এত ক্ষতি করে? এত মানুষকে না–খাইয়ে রাখে? নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করে এত মানুষকে মেরে ফেলে?
শাহনাজ কী বলবে বুঝতে পারল না। ডক্টর জিজি তো সত্যি কথাই বলেছে, আসলেই তো মানুষ অপকর্ম কম করে নি। একটা নিশ্বাস ফেলে সে বিষয়বস্তু পাল্টে ফেলার চেষ্টা করল, ডক্টর জিজি, তুমি তো সোমা আপুর হাসি রেকর্ড করেছ। সেটা হচ্ছে এক ধরনের হাসি। সোমা আপু হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ, তার মাঝে কোনো খারাপ জিনিস নেই। পৃথিবীতে যে কোনো খারাপ জিনিস থাকতে পারে সেটা সোমা আপু জানেই না, দেখলেও বিশ্বাস করবে না। কাজেই তার হাসিটা হচ্ছে একেবারে খাঁটি আনন্দের হাসি। কিন্তু পৃথিবীতে আরো অন্যরকম হাসিও আছে।
সেটা কীরকম?
যেমন মনে কর আমার কথা। আমি তো সোমা আপুর মতো ভালো না। আমার ভিতরে রাগ আছে, হিংসা আছে, কাজেই আমার হাসি হবে অন্যরকম।
সেটা কীরকম?
যেমন মনে কর ঝিনু মস্তান কিংবা মোরব্বা স্যারের কথা। এই দুইজনকে আমি দুই চোখে দেখতে পারি না। যদি তাদেরকে কোনভাবে আমি একটু মজা টের পাওয়াতে পারি তা হলে আমার এত আনন্দ হবে যে আমি খিলখিল করে হাসতেই থাকব, সেটাও এক ধরনের হাসি!
অত্যন্ত বিচিত্র!
এর মাঝে তুমি কোন্ জিনিসটাকে বিচিত্র দেখছ?
একজনকে মজা দেখিয়ে অন্যজনের মজা পাওয়া।
এটা মোটেও বিচিত্র না। এটা সবচেয়ে স্বাভাবিক। এটা দুনিয়ার নিয়ম
শাহনাজের কথা শেষ হবার আগেই হঠাৎ করে ভাসমান যানটি দাঁড়িয়ে গেল। শাহনাজ চমকে উঠে বলল, কী হয়েছে?
মোবারক আলী স্যারের বাসায় এসেছি।
শাহনাজ অবাক হয়ে বলল, সে কী! কখন এলে? কীভাবে এলে? চিনলে কীভাবে?
আমি সব চিনি, আমি দেখতে চাই তুমি মজা দেখিয়ে কীভাবে মজা পাও।
কিন্তু আমি কীভাবে মজা দেখাব?
সেটা তুমি ঠিক কর।
শাহনাজ নিশ্বাস ফেলে বলল, তুমি বুঝতে পারছ না ডক্টর জিজি। মোর স্যার। আসলে মানুষ না, কোনো দৈত্য–দানব। শুধু ওপরের চামড়াটা মানুষের। আমি যদি তাকে মজা দেখাতে যাই তা হলে আমাকে ধরে কাঁচা খেয়ে ফেলবে।
ডক্টর জিজি মাথা নাড়ল, বলল, সে যেন তোমাকে খেতে না পারে আমি সেটা দেখব। আমি তোমাকে সবরকম সাহায্য করব।
শাহনাজ চোখ বড় বড় করে বলল, সবরকম?
হ্যাঁ। সবরকম।
আমি যদি বলি, স্যার আপনার নাকটা এক হাত লম্বা হয়ে যাক–তা হলে স্যারের নাকটা এক হাত লম্বা হয়ে যাবে?
যা। তা হলে আমি তার নাকের মাঝে গিয়ে কোষ বিভাজন অনেক দ্রুত করে দেব যেন তোমাদের মনে হয় নাকটা লম্বা হয়ে গিয়েছে।
শাহনাজ নিশ্বাস বন্ধ করে বলল, আমি যদি বলি আপনি শূন্যে ঝুলে থাকবেন তা হলে স্যার শূন্যে ঝুলে থাকবে?
হ্যাঁ, আমাকে ছোট একটা স্কাউটশিপ পাঠিয়ে তাকে উপরে তুলে রাখতে হবে।
শাহনাজ হাততালি দিয়ে বলল, ইশ! কী মজা হবে! আমাকে এক্ষুনি নামিয়ে দাও ডক্টর জিজি! শাহনাজ ক্যাপ্টেন ডাবলুকে জিজ্ঞেস করল, ডাবলু, তুই যাবি?
না, শাপু। তুমি যাও আমি এখান থেকে দেখি ডক্টর জিজি কী করে!
শাহনাজ চোখ বড় বড় করে বলল, কী বললি? শাপু? আমার নামটা ছোট করতে করতে এখন শাপু করে ফেলেছিস!
ক্যাপ্টেন ডাবলু হি হি করে হেসে বলল, কেন শাপ, তোমার আপত্তি আছে?
না নেই। আমি দেখতে চাই ছোট হতে হতে শেষ পর্যন্ত কী হয়! শাহনাজ ডক্টর জিজির দিকে তাকিয়ে বলল, এখন আমাকে নামিয়ে দাও। যখন বলব তখন আবার আমাকে তুলে নিও, ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
শাহনাজ ভাসমান যান থেকে নেমে এদিক–সেদিক তাকাল, কেউ তাকে দেখতে পায় নি। যদি দেখত তা হলে ভয়ে চিৎকার শুরু করৎ, একেবারে অদৃশ্য থেকে হঠাৎ একজন মানুষ হাজির হলে ভয়ে চিৎকারই করার কথা। শাহনাজ স্যারের বাসার দরজায় শব্দ করল, প্রায় সাথে সাথেই একজন দরজা খুলে দেয়। শাহনাজদের স্কুলের একটা মেয়ে, তাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, শাহনাজ আপু, তুমি?