আঙুলের।
ক্যাপ্টেন ডাবলু ঠোঁট উন্টে বলল, আঙুল তো মোটেই ইন্টারেস্টিং না। ব্রেনের ভিতরে যেতে পারি না? সব নিউরনগুলোকে দেখতে পেতাম।
শাহনাজ কঠিন গলায় বলল, ডাবলু, তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে বুঝি পর্যটনের বাসে করে রাঙ্গামাটি বেড়াতে এসেছিস! যে কাজের জন্য এসেছি সেটা শেষ করে ভালোয় ভালোয় ফিরে যা।
কিন্তু শাহপু! এ রকম সুযোগ জীবনে আর কয়বার আসে তুমি বল? আমরা একজনের শরীরের ভিতরে ঢুকে সবকিছু নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি।
আমার এত সুযোগের দরকার নেই। শাহনাজ ডক্টর জিজির দিকে তাকিয়ে বলল, ডক্টর জিজি। তুমি ক্যাপ্টেন ডাবলুর কথা শুনো না। যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে চল।
ডক্টর জিজি তার যন্ত্রপাতিতে হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই ভাসমান যানটা একবার কেঁপে উঠে তারপর হঠাৎ দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করে। বাইরের স্নাজমা, লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা, আর্টারির দেয়াল সবকিছু অস্পষ্ট হয়ে আসে। এভাবে তারা কতক্ষণ গিয়েছিল কে জানে, হঠাৎ করে ভাসমান যানটা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ডক্টর জিজি বলল, এসে গেছি।
কোথায় এসে গেছি?
হৃৎপিণ্ডে।
শাহনাজের পেটের ভিতরে কেমন জানি পাক খেয়ে ওঠে, কী আশ্চর্য, তারা সোমার হৃৎপিণ্ডের মাঝে হাজির হয়েছে! গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তারা দেখতে পায়, চকচকে ভিজে এবং গোলাপি রঙের বিশাল একটা জিনিস থরথর করে কাঁপছে, পুরো জিনিসটা হঠাৎ সংকুচিত হতে শুরু করে, এক সময় প্রচণ্ড শব্দ করে আবার ফুলে ওঠে, তার ধাক্কায় পুরো ভাসমান যানটি শূন্যে কয়েকবার ওলটপালট খেয়ে আসে। শাহনাজ তার সিট থেকে ছিটকে পড়ে গেল, কোনোমতে সোজা হয়ে বসে বলল, কী হয়েছে?
ক্যাপ্টেন ডাবলু সিটের তলা থেকে বের হয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, হার্ট বিট করছে।
শাহনাজ নিশ্বাস ফেলে বলল, সোমা আপুর হার্ট ঠিক করতে গিয়ে আমাদেরই তো মনে হচ্ছে হার্টফেল হয়ে যাবে!
ডক্টর জিজি বলল, পুরো হার্টটা একবার দেখে আসি, তারপর কাজ শুরু করব।
শাহনাজ ভয়ে ভয়ে বলল, বেসি কাছে যেয়ো না ডক্টর জিজি। হার্টটা যখন বিট করে একেবারে বারটা বেজে যায় আমার্দের।
ডক্টর জিজি তার ভাসমান যান নিয়ে হার্টটা পর্যবেক্ষণ করে আসে। শাহনাজ কিংবা ক্যাপ্টেন ডাবলু ঠিক বুঝতে পারল না, কিন্তু ডক্টর জিজি নিজে নিজে কিছু হিসাব করে কাজ শুরু করে দিল। ইনফেকশনের অংশটুকুতে কিছু খুব ছোট ছোট ভাইরাস ছিল, সেগুলোর। পিছনে ডক্টর জিজি কী সব লেলিয়ে দিল। ভয়ঙ্কর দর্শন কিছু ব্যাকটেরিয়া ছিল, শ্বেতকণিকা তাদের সাথে যুদ্ধ করে খুব সুবিধে করতে পারছিল না, ডক্টর জিজি তার কিছু রোবটকে শ্বেতকণিকার পাশাপাশি যুদ্ধ করতে পাঠিয়ে দিল। হার্টের কোষগুলোর ক্ষতি হয়েছিল, সেগুলো সারিয়ে তোলার জন্য ডক্টর জিজি তার কাজ আরম্ভ করে দিল। হার্টের ভিতরে একটা অংশ পরীক্ষা করে দেখা গেল কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্টারি ইনফেকশনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে, রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে হার্টের বেশকিছু কোষ নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক কোষ নষ্ট হবার পথে। ডক্টর জিজি আর্টারির পথ খুলে রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করল। হঠাৎ করে যখন। রক্তপ্রবাহ শুরু হল, রক্তের ধাক্কায় ভাসমান যানটি ওলটপালট খেয়ে একটা ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়ে গেল। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থেকেও সিটে বসে থাকা যায় না। নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষগুলো সরিয়ে সেখানে অন্য জায়গা থেকে কোষ এনে লাগানো হল, বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ দিয়ে সেগুলো জুড়ে দেওয়া হল, মৃতপ্রায় কিছু কোষকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য তার ভিতরে বিশেষ পুষ্টিকর জিনিস ঢোকানো হল।
এর সবকিছুর মাঝে সোমার হৃৎপিণ্ড যখন প্রতিবার স্পন্দন করে, তার প্রচণ্ড ধাক্কায় ভাসমান যানের ভিতরে সবাই ওলটপালট খেতে থাকে! শেষ পর্যন্ত যখন ডক্টর জিজি বলল, আমার ধারণা সোমার শারীরিক সমস্যাটি আমরা সারিয়ে তুলেছি তখন শাহনাজ আনন্দে চিৎকার করে উঠল। ক্যাপ্টেন ডাবলু হাতে কিল দিয়ে বলল, ক্যান্টাবুলাস! ফিকটুবুলাস!! চল এখন কী–মজা–হবে আপুর শরীরে একটা ট্যুর দিয়ে আসি?
শরীরে ট্যুর দিয়ে আসি!
হ্যা কিডনির ভিতরে দেখে আসি সেটা কেমন করে কাজ করে।
কিডনির ভিতরে? ডাবলু, তোর মাথা খারাপ হয়েছে?
তা হলে চল পাকস্থলিতে ঢুকে যাই, সেখানে দেখবে হাইড্রোক্লোরিক এসিড টগবগ করছে, একটু ভুল হলেই সবকিছু গলে যাবে! কী বুকাংটুকাস, নিন্টিফুটাস!
ডক্টর জিজিকে নিয়ে তুই একা যখন আসবি তখন তোর যা ইচ্ছে তাই করিস। এখন এই মুহূর্তে এখান থেকে বের হতে হবে! কখন কোথা থেকে কোন্ শ্বেতকণিকা আক্রমণ করবে, কোন্ এন্টিবডি এসে ধরে ফেলবে, কোন্ কেমিক্যাল জ্বালিয়ে দেবে, কোন্ নার্ভ থেকে ইলেকট্রিসিটি এসে শক দিয়ে দেবে, ব্লাডপ্রেশার আছাড় মারবে, তার কি কোনো ঠিক আছে? মানুষের শরীরের ভিতরের মতো ডেঞ্জারাস কোন্ জায়গা আছে?
তা ঠিক। কিন্তু এ রকম একটা সুযোগ আর কখনো আসবে?
না আসলে নাই। ডক্টর জিজি চল যাই।
ডক্টর জিজি মাথা নেড়ে বলল, চল।
কাজেই ক্যাপ্টেন ডাবলুকে তার আশা অসম্পূর্ণ রেখেই বের হয়ে আসতে হল। হৃৎপিণ্ডের কাছাকাছি একটা বড় আর্টারি ধরে রওনা দিয়ে গলার কাছাকাছি ছোট একটা কেপিলারি ধরে তারা বের হয়ে এল। ভাসমান যানটি আবার উপরে কয়েকবার পাক খেয়ে তার আগের আকৃতি নিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়াল।