ক্যাপ্টেন ডাবলু ঠোঁট সুচালো করে বলল, পিকুইলাইটিস! ভেরি ভেরি পিকুইলাইটিস!
শাহনাজ মহাজাগতিক প্রাণীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি সোমা আপুর কথা কী জানি বলছিলে?
আমরা বলেছিলাম
আমরা কোথায়? তুমি তো এখন একা।
আমি এবং আমাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা এক ও অভিন্ন। আমাদের ভিন্ন সত্তা নেই–
শাহনাজ মাথা চেপে ধরে বলল, অনেক হয়েছে, আর ওসব নিয়ে বকবক কোরো না, আমার মাথা ধরে যাচ্ছে। হ্যাঁ, সোমা আপুকে নিয়ে তুমি কী যেন বলছিলে?
বলছিলাম যে সোমার হাসি সংক্রান্ত তথ্য সগ্রহ করতে কোনো সমস্যা নেই।
কীভাবে সগ্রহ করবে?
আমরা স্থান এবং সময়কে নিয়ন্ত্রণ করি। আমরা যে কোনো স্থানে যেতে পারি।
শাহনাজ আনন্দে চিৎকার করে বলল, তা হলে আমরা সোমা আপুর কাছে যেতে পারব?
সে যদি এই গ্যালাক্সিতে থাকে তা হলে পারব?
শাহনাজ হি হি করে হাসতে গিয়ে থেমে গেল।। তার আবার মনে পড়েছে সোমা আপুর শরীর ভালো নয়। মুখ কালো করে বলল কিন্তু সোমা আপু কি হাসবে? তার তো শরীর ভালো না!
মানুষের শরীরে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই শরীর ভালো না–থাকা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। তার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে তোলা যেতে পারে।
শাহনাজ আবার চিৎকার করে উঠল, তার মানে তোমরা সোমা আপুকে ভালো করে তুলতে পারবে? তোমাদের কাছে ভালো ডাক্তার আছে?
ডাক্তার? মহাজাগতিক প্রাণী মাথা নেড়ে বলল, একেকজনকে একেক বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তোলার এই প্রবণতার সাথে আমরা পরিচিত নই। আমরা এক ও অভিন্ন, আমাদের জীবন্ত সত্তা–
ব্যস ব্যস ব্যস শাহনাজ বাধা দিয়ে বলল, অনেক হয়েছে, আবার এক ও অভিন্ন। সত্তা নিয়ে বক্তৃতা শুরু করে দিও না। তুমি ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাবে, না ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে চিকিৎসা করাবে সেটা তোমার ব্যাপার। সোমা আপু ভালো হলেই হল।
তা হলে আমরা কি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি?
হ্যাঁ। চল যাই, দেরি করে লাভ নেই।
মহাজাগতিক প্রাণী বলল, তুমি পূর্বশর্ত হিসেবে যে মানুষটিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলে তাকে কি এখন ছেড়ে দেব? তাকে কি আমরা সাথে নিয়ে নেব?
না, না, না– শাহনাজ মাথা নেড়ে বলল, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? সাথে নিলে উপায় আছে? ঠিক তোমরা যাবার সময় তাকে ছেড়ে দিও। তার আগে না।
ঠিক আছে।
শাহনাজ হঠাৎ ঘুরে মহাজাগতিক প্রাণীর দিকে তাকাল, বলল, আচ্ছা তোমরা কি একটা জিনিস করতে পারবে?
শাহনাজ কথাটি বলার আগেই মহাজাগতিক প্রাণী মাথা নাড়ল, বলল, পারব।
শাহনাজ ভুরু কুঁচকে বলল, আমি কী বলতে যাচ্ছি তুমি বুঝেছ?
হ্যাঁ। তুমি বলতে চাইছ তোমার ভাইয়ের আকার পরিবর্তন করে দিতে।
শাহনাজ মাথা নেড়ে বলল, হ্যা ছোট সাইজ করে একটা হোমিওপ্যাথিকের শিশিতে ভরে দিবে! আমি আমার জ্যামিতি–বক্সে রেখে দিব। তার খুব বিখ্যাত হওয়ার শখ এক ধাক্কায় বিখ্যাত হয়ে যাবে!
শাহনাজ হি হি করে হাসতে শুরু করে। এটা মোটামুটি খাঁটি আনন্দের হাসি, মহাজাগতিক প্রাণী তথ্য সংরক্ষণ করছে কি না কে জানে!
০৮. শাহনাজ এবং ক্যাপ্টেন ডাবলুকে নিয়ে
শাহনাজ এবং ক্যাপ্টেন ডাবলুকে নিয়ে মহাজাগতিক প্রাণীটি যে ভাসমান যানটাতে উঠল সেরকম যান সায়েন্স ফিকশানের সিনেমাতেও দেখা যায় না। সেটি একটি মাইক্রোবাসের মতো বড় আর যন্ত্রপাতিতে বোঝাই। চকচকে ধাতব রঙের, দুই পাশে ছোট ছোট দুটি পাখা, মাথাটা সুচালো। পিছনে গেলে একটা ইঞ্জিক। ভিতরে পাশাপাশি তিনটা সিট। মাঝখানে মহাজাগতিক প্রাণী বসেছে, দুই পাশে শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু। ভাসমান যানটা চলতে শুরু করার আগে শাহনাজ ভয়ে ভয়ে বলল, এটা বেশি ঝাঁকাবে না তো? আঁকুনি হলে আমার কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে যায়।
মহাজাগতিক প্রাণী বলল, না ঝাঁকাবে না।
শাহনাজ জিজ্ঞেস করল, ইয়ে তামার নাম কী?
আমি আগেই বলেছি নাম–পরিচয় ইত্যাদি ব্যাপারগুলোতে আমরা বিশ্বাস করি না।
কিন্তু তোমাকে তো কিছু একটা বলে ডাকতে হবে। বল কী বলে ডাকব?
উচ্চ কম্পনের একটা শব্দ করে ডাকতে পার।
কুকুরকে যেভাবে শিস্ দিয়ে ডাকে সেরকম?
ক্যাপ্টেন ডাবলু বলল, সেটা ভালো হবে না। যে এত সুন্দর একটা ভাসমান যান চালাবে তার একটা ফ্যান্টাবুলাস নাম দরকার। যেমন মনে করা যাক– ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা চুলকে বলল, ডক্টর জিজি?
ডক্টর জিজি?
শাহনাজ আপত্তি করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মহাজাগতিক প্রাণীটা মাথা নেড়ে বলল, ভালো নাম। আমি ডক্টর জিজি।
তোমার নামটা পছন্দ হয়েছে?
মহাজাগতিক প্রাণীটা মাথা নাড়ল, কাজেই কারোই আর কিছু বলার থাকল না। ডক্টর জিজি সামনে রাখা ত্রিমাত্রিক কিছু যন্ত্রপাতির মাঝে হাত দিয়ে কিছু একটা স্পর্শ করতেই ভাসমান যানটিতে একটা মৃদু কম্পন অনুভব করল এবং প্রায় সাথে সাথে সেটি উপরে উঠে গিয়ে প্রায় বিদ্যুদ্বেগে ছুটে যেতে রু করে। মাটির কাছাকাছি দিয়ে এটি গাছপালা ঘরবাড়ি মানুষজনের পাশ দিয়ে ছুটে যেতে থাকে। কিন্তু কী আশ্চর্য! কেউ ঘুরেও তাদের দিকে তাকাল না। ভাসমান যানের ভিতর দিয়ে তারা সবাইকে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু তাদেরকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না। কী বিচিত্র ব্যাপার!
শাহনাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ডক্টর জিজি, আমাদেরকে কেউ দেখতে পাচ্ছে কেন?