শাহনাজ মাথা নাড়ল, বলল, তোমাদের কথা শুনে আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। এক এবং অভিন্ন। ভালো–খারাপ নেই। আমি–তুমি নেই। আলাদা অস্তিত্ব নেই শুনে মনে হচ্ছে ভাইয়ার পোষ্ট মডার্ন কবিতার লাইন। এসব ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে বল, আমাদের কী করতে হবে।
মহাজাগতিক প্রাণী বলল, আমরা অত্যন্ত খাঁটি হাসির কিছু প্রক্রিয়ার সকল তথ্য সগ্রহ করতে চাই।
ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা চুলকে বলল, হাসাহাসির ঘটনাটা ভিডিও করবে?
না। হাসির প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রত্যেকের মস্তিষ্কের নিউরন এবং তার সিনাপ্সের সংযোগটি কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে সেটি সংরক্ষণ করব।
ক্যাপ্টেন ডাবলুর মুখ হা হয়ে গেল, বলল, সেটি কী করে সম্ভব? মস্তিষ্কের ভিতরে তোমরা কীভাবে ঢুকবে?
আমরা পারি।
কীভাবে পার!
স্থান এবং সময়ের মাঝে একটা সম্পর্ক আছে। তোমাদের একজন বিজ্ঞানী সেটা প্রথম অনুভব করেছিলেন–।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন?
সবাইকে একটি নাম দেওয়ার এই প্রবণতায় আমরা এখনো অভ্যস্ত হই নি। সেই বিজ্ঞানীর বড় বড় চুল এবং বড় বড় গোঁফ ছিল।
ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নাড়ল, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন!
যাই হোক, আমরা সময়কে ব্যবহার করে স্থানকে সংকুচিত করতে পারি, আবার স্থানকে ব্যবহার করে সময়কে সংকুচিত করতে পারি।
শাহনাজ বিভ্রান্ত মুখে বলল, তার মানে কী?
ক্যাপ্টেন ডাবলু চোখ বড় বড় করে বলল, বুঝতে পারছ না শাহনাপু? স্থান মানে হচ্ছে স্পেস! এরা স্পেস ছোট করে ফেলতে পারে! মনে কর এরা তোমার ব্রেনের ভিতরে ঢুকতে চায় তখন তারা একটা বিশেষ রকম ভাসমান গাড়ি তৈরি করল। তারপর সেই গাড়িটা যে জায়গায় আছে সেই জায়গাটাই ছোট করে ফেলল, গাড়িটা তখন এত ছোট হল যে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে হবে–সেটা তখন তোমার ব্রেনে ঢুকে যাবে, তুমি টেরও পাবে না! ক্যাপ্টেন ডাবলু মহাজাগতিক প্রাণীর দিকে তাকিয়ে বলল, তাই না?
মহাজাগতিক প্রাণী একটু ইতস্তত করে বলল, মূল ব্যাপারটি খুব পরোক্ষভাবে অনেকটা এ রকম, তবে স্থান এবং সময়ের যোগাযোগ–সূত্রে প্রতিঘাত যোজনের সম্পর্কটি বিশেষণ করতে হয়। চতুর্মাত্রিক জগতে অনিয়মিত অবস্থান নিয়ন্ত্রণের একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া আছে। শক্তি ক্ষয় এবং শক্তি সৃষ্টির একটি অপবলয় রয়েছে, সেটি নিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি রয়েছে–সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটি অনুধাবন করার মতো যথেষ্ট নিউরন তোমাদের মস্তিষ্কে নেই। তোমরা প্রয়োজনীয় সিনান্স সংযোগ করতে পারবে না।
শাহনাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কী বলছে কিছুই তো বুঝতে পারলাম না।
ডাবলু বলল, সেটাই বলেছে–যে আমরা বুঝতে পারব না।
না বুঝলে নাই। মোরব্বা স্যারের কেমিস্ট্রিই বুঝতে পারি না, আর শক্তির অপবলয়! ভাগ্যিস ভাইয়া ধারেকাছে নাই, থাকলে এই কটমটে শব্দগুলো দিয়ে একটা পোস্ট মডার্ন কবিতা লিখে ফেলত।
কিন্তু কীভাবে করে জানা থাকলে খারাপ হত না
থাক বাবা, এত জেনে কাজ নেই। শাহনাজ মহাজাগতিক প্রাণীর দিকে তাকিয়ে বলল, এখন বল আমাদের কী করতে হবে?
অত্যন্ত খাঁটি একটি হাসির প্রয়োজনীয় পরিবেশের সকল তথ্য সংরক্ষণে সাহায্য করতে হবে।
ক্যাপ্টেন ডাবলু বলল, হাসি আবার খাঁটি আর ভেজাল হয় কেমন করে?
হবে না কেন? তুই যখন কিছু না–বুঝে হাসিস সেটা হচ্ছে ভেজাল হাসি। আমি যখন হাসি সেটা খাঁটি।
মহাজাগতিক প্রাণী বলল, খাঁটি একটা হাসির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে কী করতে হবে?
শাহনাজের হঠাৎ সোমার কথা মনে পড়ল এবং সাথে সাথে তার মুখ ম্লান হয়ে আসে। পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর করে হাসতে পারে তার সোন্স আপু এবং এর হাসি থেকে খাঁটি হাসি পৃথিবীতে আর নেই। কিন্তু সেই সোমা আপু এখন হাসপাতালে আটকা পড়ে আছে, তাকে তো আর এখানে আনা যাবে না।
মহাজাগতিক প্রাণীটি বলল, সোমার হাসি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে কোনো সমস্যা নেই।
শাহনাজ চমকে উঠে মহাজাগতিক প্রাণীটির দিকে তাকাল, তুমি কেমন করে সোমা আপুর কথা জান?
তোমরা ভুলে যাচ্ছ, আমরা অন্য ধরনের প্রাণী। তথ্য বিনিময় করার জন্য আমরা সরাসরি তোমার মস্তিষ্কের নিউরনের সিনান্স সংযোগ লক্ষ করতে পারি। তোমরা যেটা বল সেটা যেরকম আমরা বুঝতে পারি, ঠিক সেরকম যেটা চিন্তা কর সেইটাও আমরা বুঝতে পারি। আমরা ইচ্ছা করলে সরাসরি তোমাদের মস্তিষ্কেও কথা বলতে পারি কিন্তু তোমরা অভ্যস্ত নও বলে বলছি না।
ক্যাপ্টেন ডাবলু নাক দিয়ে বাতাস বের করে বলল, পিকুইলাইটিস।
কী বললি?
মহাজাগতিক প্রাণী বলল, সে বলছে ব্যাপারটি খুব বিচিত্র।
ক্যাপ্টেন ডাবলু বলল, এখন আমি বুঝতে পারছি তোমরা কেন সবুজ রঙের এবং তোমাদের চোখ কেন এত বড় বড় এবং টানা টানা, তোমাদের হাতে কেন তিনটা করে আঙুল–আর শাহনাপু তাদের না–দেখেই কেমন করে সেটা বলে দিল।
শাহনাজ জিজ্ঞেস করল, কেমন করে?
ক্যাপ্টেন ডাবলু শাহনাজের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এ রকম কল্পনা করেছিলে, এরা তোমার চিন্তাটা দেখে ফেলে নিজেরা সেরকম আকার নিয়েছে। সে মহাজাগতিক প্রাণীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তাই না?
মহাজাগতিক প্রাণী বলল, তুমি যথার্থ অনুমান করেছ। আমরা এমন একটি আকৃতি নিতে চেয়েছিলাম যেটি দেখে তোমরা অস্বস্তি না পাও। সেটি আমরা তোমাদের একজনের মস্তিষ্ক থেকে গ্রহণ করেছি।