শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু একসাথে চমকে ওঠে। কী আশ্চর্য! মহাজাগতিক প্রাণীগুলো কথা বলছে। শাহনাজ চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, কী বিচিত্র?
হাসি। তোমাদের হাসি।
কেন? বিচিত্র কেন?
এটি একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম, জটিল, দুর্লভ, বিমূর্ত এবং ব্যাখ্যার অতীত প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি আমরা অন্য কোনো প্রাণীর মাঝে দেখি নি।
তোমরা মানে আপনারা হাসেন না?
তোমরা আমাদের তুমি–তুমি করে বলতে পার।
তোমরা হাস না?
না, আমরা হাসি না।
কী আশ্চর্য! শাহনাজ অবাক হয়ে বলল, তোমরা কখনো কিছু নিয়ে হাস নাই? তোমাদের কোনো বন্ধু কোনোদিন তোমাদের সামনে কলার ছিলকায় আছাড় খেয়ে পড়ে নাই?
না। মহাজাগতিক প্রাণী গম্ভীর গলায় বলল, প্রকৃতপক্ষে আমরা তোমাদের মতো প্রাণী নই। আমাদের আলাদা অস্তিত্ব নেই।
কী বলছ, তোমাদের আলাদা অস্তিত্ব নেই? এই যে তোমরা আলাদা আলাদা চার জন?
এটি আমাদের একটি রূপ। তোমাদের সুবিধের জন্য। আসলে আমরা এক এবং অভিন্ন।
গুল মারছ। শাহনাজ মুখ শক্ত করে বলল, আমাদের ছোট পেয়ে তোমরা আমাদের গুল মারছ!
গুল? প্রাণীটি দ্রুত কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে বলল, গুল কীভাবে মারে?
গুল মারা কী জান না? শাহনাজ হি হি করে হেসে বলল, গুল মারা হচ্ছে মিথ্যা কথা বলা। অর্থাৎ একটা জিনিস করে যদি অন্য জিনিস বল তা হলে সেটাকে বলে গুল মারা।
বিচিত্র। অত্যন্ত বিচিত্র।
কী জিনিস বিচিত্র?
গুল মারা। কেন একটি তথ্যকে অন্য একটি তথ্য দিয়ে পরিবর্তন করা হবে? কেন গুল মারা হবে?
শাহনাজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, গুল মারতে হয়। বেঁচে থাকতে হলে অনেক সময় গুল মারতে হয়। তাই নারে ডাবলু?
ডাবলু এতক্ষণ শাহনাজ এবং মহাজাগতিক প্রাণীর মাঝে যে কথাবার্তা হচ্ছে সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, নিজে থেকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না। শাহনাজের প্রশ্ন শুনে জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। হ্যাঁ। মাঝে মাঝে গুল মারতে হয়। কয়দিন আগে বাসায় আমার ল্যাবরেটরিতে একটা বিশাল বিস্ফোরণ হল, সবকিছু ভেঙেচুরে একাকার। আম্মার কাছে তখন আমার গুল মারতে হল। না হলে অবস্থা একেবারে ডেঞ্জারাসিন হয়ে যেত।
মহাজাগতিক চারটি প্রাণীই পুতুলের মতো মাথা নাড়তে লাগল, তাদের মাঝে একটা ফোঁস করে একটা শব্দ করে বলল, বিচিত্র, অত্যন্ত বিচিত্র।
শাহনাজ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে প্রাণীগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, তার মানে তোমরা বলতে চাইছ তোমরা কখনো একজন আরেকজনের কাছে গুল মার নি?
আমি বলেছি আমাদের আলাদা অস্তিত্ব নেই। সব মিলিয়ে আমাদের একটি অস্তিত্ব। এক এবং অভিন্ন।
এই যে তোমরা চার জন আছ– শাহনাজের কথা শেষ হবার আগেই দেখা গেল চার জনের জায়গায় আটটি মহাজাগতিক প্রাণী বসে আছে!
কী আশ্চর্য! শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু একসাথে চিৎকার করে উঠলকীভাবে করলে এটা?
শাহনাজ অবাক হয়ে বলল, একেবারে ম্যাজিকের মতো। টিভিতে দেখালে লোকজন অবাক হয়ে যাবে!
একটি প্রাণী বলল, আমি তোমাদেরকে বলেছি, আমরা এক এবং অভিন্ন। তোমাদের জন্য এই রূপটি নিয়েছি। আমরা ইচ্ছে করলে অনেকগুলো হতে পারি। আবার ইচ্ছে করলে একটি হয়ে যেতে পারি।
হও দেখি।
শাহনাজের কথা শেষ হবার আগেই আটটি প্রাণী অদৃশ্য হয়ে মাত্র একটি প্রাণী রয়ে গেল–একেবারে ম্যাজিকের মতো। শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠল।
মহাজাগতিক প্রাণীটি বলল, এখন বিশ্বাস করেছ?
শাহনাজ বলল, এখনো পুরোপুরি করি নাই।
কেন পুরোপুরি কর নি?
এইটা কীভাবে সম্ভব যে সবাই মিলে একটা প্রাণী? তা হলে কীভাবে সবাই মিলে গল্পগুজব করবে, হাসিঠাট্টা করবে? নিজের সাথে নিজে কি হাসিতামাশা করতে পারে?।
প্রাণীটি ফোঁস করে একটা শব্দ করে বলল, আমরা ভিন্ন ধরনের প্রাণী, তোমাদের মতো নই। সেই জন্য তোমাদের অনেক কিছু আমাদের কাছে অজানা।
শাহনাজ হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নড়ে বলল, কিন্তু তোমরা যদি হাসতেই না পার তা হলে বেঁচে থেকে কী লাভ?
প্রাণীটি মাথা নেড়ে বলল, আমরা ঠিক করেছি পৃথিবী থেকে আমরা হাসি নামক প্রক্রিয়াটি আমাদের সাথে নিয়ে যাব।
হাসি কি একটা জিনিস যে তোমরা সেটা পকেটে ভরে নিয়ে যাবে?
প্রাণীটা গম্ভীর গলায় বলল, যে জিনিস ধরা–ছোঁয়া যায় না–সেই জিনিসও নেওয়া যায়। আমরা নিতে পারি তবে সে ব্যাপারে তোমাদের একটু সাহায্যের প্রয়োজন হবে।
শাহনাজ একগাল হেসে বলল, সাহায্য করতে পারি, কিন্তু এক শর্তে।
কী শর্তে?
আমার ভাই ইমতিয়াজকে তোমরা ধরে এনেছ, তাকে ছেড়ে দিতে হবে।
প্রাণীটা এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, ঠিক আছে, ছেড়ে দেব।
শাহনাজ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
ক্যাপ্টেন ডাবলু বলল, শাহনাপু, আমরা আরো একটা কাজ করতে পারি।
কী কাজ?
আমরা ওদেরকে কেমন করে গুল মারতে হয় সেটাও শিখিয়ে দিতে পারি! একসাথে দুটি জিনিস শিখে যাবে। হাসি এবং গুল মারা।
শাহনাজ ভুরু কুঁচকে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকাল, বলল, কিন্তু সেটা কি ভালো হবে? হাসি তো ভালো জিনিস, কিন্তু গুল মারা তো ভালো না।
ক্যাপ্টেন ডাবলু একগাল হেসে বলল, শিখতে তো দোষ নাই। ব্যবহার না করলেই হল। তাই না?
মহাজাগতিক প্রাণী মাথা নাড়ল, বলল, ভালো খারাপ এই ব্যাপারগুলো তোমাদের। আমরা যেহেতু এক এবং অভিন্ন, আমাদের কাছে ভালো এবং খারাপ বলে কিছু নেই।