গল্প শেষ হওয়ার আগেই শাহনাজ নিজেই হি হি করে হাসতে থাকে। ক্যাপ্টেন ডাবলুও গল্প শুনে হোক আর শাহনাজের হাসি দেখেই হোক, জোরে জোরে হাসতে শুরু করে।
দুজনে হাসতে হাসতে আরো কিছুদূর এগিয়ে যায়, মহাজাগতিক প্রাণীগুলোকে এখনো দেখা যাচ্ছে না। না–দেখা গেলে নাই, শাহনাজ ঠিক করেছে তারা দুজন হাসতে হাসতে স্পেসশিপে ঘুরে বেড়াবে। ক্যাপ্টেন ডাবলুর অনেক জ্ঞান থাকতে পারে কিন্তু হাসির গল্প বলায় একেবারে যাচ্ছেতাই, কাজেই মনে হচ্ছে শাহনকেই চেষ্টা করে যেতে হবে। সে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে জিজ্ঞেস করল, ডাবলু তুই নাপিতের গল্পটা জানিস?
নাপিতের গল্প? না।
একদিন একজন লোক নাপিতের কাছে চুল কাটাচ্ছে। সে দেখল তার পায়ের কাছে একটা কুকুর খুব শান্তভাবে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা নাপিতকে জিজ্ঞেস করল, এইটা বুঝি খুব পোষা কুকুর, ভাই এ রকম শান্তভাবে বসে আছে? নাপিত বলল, আসলে আমি যখন কারো চুল কাটি তখন এইভাবে ধৈর্য ধরে শান্তভাবে বসে থাকে। চুল কাটতে কাটতে হঠাৎ যখন কানের লতিটাও কেটে ফেলি তখন সেগুলো খুব শখ করে খায়।
গল্প শুনে ক্যাপ্টেন ডাবলু এক মুহূর্তের জন্য চমকে উঠে শাহনাজের দিকে তাকাল, তারপর হি হি করে হাসতে রু করল।
শাহনাজ হাসি থামিয়ে বলল, বুঝলি ডাবলু আমাদের পাশের বাসায় বাচ্চা একটা ছেলে থাকে, নাম রুবেল, তাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছি–রুবেল, তুমি কী পড়? সে বলল, হাফপ্যান্ট পরি! আমি হাসি চেপে জিজ্ঞেস করলাম, না মানে কোথায় পড়? সে শার্ট তুলে দেখিয়ে বলল, এই যে নাভির ওপরে!
ক্যাপ্টেন ডাবলু হি হি করে হাসতে হাসতে হঠাৎ করে থেমে গেল। শাহনাজ জিজ্ঞেস করল, কী হল?
ক্যাপ্টেন ডাবলু চোখের কোনা দিয়ে সামনে দেখিয়ে বলল, ঐ দেখ!
শাহনাজ তাকিয়ে দেখে চারটা মহাজাগতিক প্রাণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহনাজ মুখ হাসি–হাসি রেখে চাপা গলায় বলল, ডাবলু মুখ হাসি হাসি রাখ। আর হাসতে চেষ্টা কর।
ক্যাপ্টেন ডাবলু হাসার চেষ্টা করে বিদ্ঘুটে একরকম শব্দ করল। শাহনাজ একটা নিশ্বাস ফেলে মহাজাগতিক প্রাণীগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, আগের বার তোমরা ছিলে দুই জন, এখন দেখছি চার জন! এইভাবে বাড়তে থাকলে কিছুক্ষণেই তো আর এখানে জায়গা হবে না।
মহাজাগতিক প্রাণীগুলো কোনো শব্দ করল না। শাহনাজ দুই পা এগিয়ে বলল, তোমাদের সাথে যখন দেখা হয়েই গেল, একটা গল্প শোনাই। দেখি শুনে তোমাদের কেমন লাগে! কী বলিস ডাবলু?
ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নেড়ে বলল, হ্যা আপু বল।
দুই জন মাতাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এক জনের হাতে একটা টর্চলাইট, সে লাইটটা জ্বালিয়ে আলো আকাশের দিকে ফেলে বলল, তুই এটা বেয়ে উপরে উঠতে পারবি? অন্য মাতালটা আলোটার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল, তুই আমাকে বেকুব পেয়েছিস? আমি উঠতে শুরু করি আর তুই টর্চলাইট নিভিয়ে দিবি। পড়ে আমি কোমরটা ভাঙি আর কি!
ক্যাপ্টেন ডাবলু হি হি করে হেসে উঠতেই চারটা মহাজাগতিক প্রাণীই চমকে উঠে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। শাহনাজ দেখতে পেল পিটপিট করে চার জনেই চোখের পাতা ফেলছে।
পছন্দ হয়েছে তোমাদের গল্পটা?
মহাজাগতিক প্রাণীগুলো এবারে ঘুরে শাহনাজের দিকে তাকাল, এই প্রথমবার প্রাণীগুলোর ভিতরে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, আগেরবার কোনোরকম প্রতিক্রিয়াই ছিল না! শাহনাজ একটু উৎসাহ পেয়ে বলল, তোমাদের তা হলে আরেকটা গল্প বলি একজন মহিলা গেছে ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারকে বলল, আমার স্বামীর ধারণা সে রেফ্রিজারেটর। কী করি ডাক্তার সাহেব? ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনার স্বামী যদি মনে করে সে রেফ্রিজারেটর সেটা তার সমস্যা আপনার তাতে কী? মহিলা বললেন, সে মুখ হাঁ করে ঘুমায় আর ভিতরে বাতি জ্বলতে থাকে, সেই আলোতে আমি ঘুমাতে পারি না।
গল্প শুনে প্রথমে ক্যাপ্টেন ডাবলু এবং তার সাথে সাথে শাহনাজও খিলখিল করে হেসে উঠল, হাসতে হাসতে বলল, গল্পটা মজার না?
মহাকাশের প্রাণীগুলো এবারে নিজেদের দিকে তাকাল এবং মনে হল নিজেরা নিজেরা কিছু একটা নিয়ে আলোচনা শুরু করল। শাহনাজ খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থেকে, গলা নামিয়ে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে বলল, মনে হচ্ছে কাজ হচ্ছে। কী বলিস?
হ্যা শাহনাপু। থেমো না। আরেকটা বল।
শাহনাজ কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, তোমাদের আরেকটা গল্প বলি শোন। একদিন একটা পাগল একটা ডোবার কাছে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে, পাঁচ পাঁচ পাঁচ। একজন লোক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি পাঁচ পাঁচ বলে চিৎকার করছ কেন? পাগলটা বলল, তুমি কাছে আস তোমাকে দেখাই। লোকটা পাগলের কাছে যেতেই পাগলটা ধাক্কা দিয়ে তাকে ডোবার মাঝে ফেলে দিয়ে চিৎকার করতে থাকল, ছয় ছয় ছয়।
গল্প শেষ করার আগেই শাহনাজ নিজেই খিলখিল করে হাসতে থাকে, আর তার দেখাদেখি ক্যাপ্টেন ডাবলুও নিজের হাতে কিল দিয়ে হাসা শুরু করে। আর কী আশ্চর্য! হঠাৎ করে মনে হল মহাজাগতিক প্রাণী চারটিও খিকখিক করে হেসে উঠেছে। মহাজাগতিক প্রাণী চারটির একটি হঠাৎ করে শাহনাজের দিকে তাকিয়ে একেবারে পরিষ্কার বাংলায় বলল, বিচিত্র।
সাথে সাথে অন্য তিনটি মহাজাগতিক প্রাণীও মাথা নেড়ে বলল, বিচিত্র।