শাহনাজ উজ্জ্বলমুখে বলল, স্পেসশিপের ভিতরে গিয়ে আমরা সেই প্রাণীদের খুঁজে বের করব, তারপর তাদের সামনে হা হা হি হি করে হাসব। পারবে না?
ক্যাপ্টেন ডাবলুর মুখে ভয়ের একটা ছায়া পড়ল। যখন কোনো প্রয়োজন নেই তখন হেসে ফেলা কঠিন কোনো ব্যাপার নয়, কিন্ত যখন হাসির ওপর জীবন–মরণ নির্ভর করছে তখন কি এত সহজে হাসতে পারবে? যদি তখন হাসি না আসে? শাহনাজ অবশ্য ডাবলুর ভয়কে গুরুত্ব দিল না, হাতে কিল দিয়ে বলল, ডাবলু, তুই পুরো ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দে, আমি এমন সব জিনিস জানি শুনলে তুই হেসে লুটোপুটি খেতে থাকবি।
শাহনাজ যে উত্তেজনার কারণে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে শুধু ডাবলু বলে তুই তুই করে বলতে শুরু করেছে সেটা দুজনের কেউই লক্ষ করল না। উত্তেজনায় ক্যাপ্টেন ডাবলুও শাহনাজের নামটা আরো সংক্ষিপ্ত করে ফেলল। বলল, ঠিক আছে শাহনাপু, যদি আমার হাসি না আসে তা হলে আমি ঠিক তোমার মাথায় কীভাবে পাখিটা পিচিক করে বাথরুম। করে দিল সেই কথাটা চিন্তা করব, দেখবে আমিও হেসে লুটোপুটি খেতে থাকব।
কথাটা যে সত্যি সেটা প্রমাণ করার জন্য ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার হি হি করে হাসতে থাকল। শাহনাজ চোখ পাকিয়ে বলল, এখন হাসবি না খবরদার, মাথা ভেঙে ফেলব।
তার মাথার পাখির বাথরুম কীভাবে পরিষ্কার করবে সেটা নিয়ে সে একটু চিন্তা করে ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে বলল, ডাবলু, নে আমার মাথায় পানি ঢাল। নোংবাটা ধুয়ে ফেলতে হবে। সাবান থাকলে ভালো হত।
না ধুলে হয় না? তা হলে যখনই হাসার দরকার হবে তুমি আমাকে তোমার মাথাটাকে দেখাবে–এটা দেখলেই আমার মনে পড়বে, আর আমার হাসি পেয়ে যাবে!
ফাজলেমি করবি না। যা বলছি কর। ক্যাপ্টেন ডাবলু খানিকটা অনিচ্ছা নিয়ে শাহনাজের মাথায় বোতল থেকে পানি ঢালতে থাকে।
০৭. প্রথমবার স্পেসশিপে ঢোকার সময়
প্রথমবার স্পেসশিপে ঢোকার সময় যেরকম ভয়–ভয় করছিল এবার তাদের সেরকম ভয় লাগল না। প্রাণীগুলো আগে দেখেছে সেটি একটি কারণ, তাদেরকে বঁটা দিয়ে বের করার সময় তাদের একটুও ব্যথা না দিয়ে স্পেসশিপের ভিতর থেকে পাহাড়ের নিচে নামিয়ে দিয়েছে সেটি আরেকটি কারণ, তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে শাহনাজ যেরকম কল্পনা করেছিল তার সাথে হুবহু মিলে যাওয়ার ব্যাপারটি। শাহনাজের কল্পনা মহাজাগতিক প্রাণী খুব মধুর স্বভাবের, কাজেই এই প্রাণীগুলোও নিশ্চয়ই মধুর স্বভাবেরই হবে এ ব্যাপারে শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলুর মনে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই।
স্পেসশিপের সেই অদৃশ্য পরদা ভেদ করে ভিতরে ঢুকেই এবারে শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু হাসাহাসি করার চেষ্টা করতে শুরু করল। প্রাণীগুলো নিশ্চয়ই তাদের দেখছে, কাজেই তাদের খুঁজে বের করার কোনো দরকার নেই। শাহনাজ বলল, বুঝলি ডাবলু, আমাদের ক্লাসে। একটা মেয়ে পড়ে, তার নাম মীনা–সবাই তাকে ডাকে মিনমিনে মীনা। কেন বল দেখি?
কেন?
সবসময় মিনমিন করে কথা বলে তো, তাই। একদিন স্কুলে আমাদের নববর্ষের অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাই সবাই গান শিখছি। একটা গান ছিল রবীন্দ্রনাথের। গানের কথাটা এইরকম : বল দাও মোরে বল দাও, সেই গানটা শুনে মিনমিনে মীনা কী বলে জানিস?
কী?
বলে, কবি রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই ফুটবল খেলার সময় এই গানটা লিখেছিলেন! রাইট আউটে খেলছিলেন, গোলপোস্টের কাছাকাছি গিয়ে সেন্টার ফরোয়ার্ডকে বলেছিলেন, বল দাও মোরে বল দাও আমি গোল দেই। শাহনাজ কথা শেষ করেই হি হি করে হাসতে লাগল।
ক্যাপ্টেন ডাবলুকে একটু বিভ্রান্ত দেখাল, ভুরু কুঁচকে বলল, ফুটবল কেন? ক্রিকেটও তো হতে পারত!
শাহনাজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ, তোর যেরকম বুদ্ধি, তাতে ক্রিকেটও হতে পারত?
কেন শুধু ফুটবল না হয়ে ক্রিকেটও হতে পারত সেটা নিয়ে ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা তর্ক শুরু করে দিচ্ছিল, শাহনাজ তাকে ধমক দিয়ে থামাল। বলল, তুই থাম আরেকটা গল্প বলি, শোন। আমরা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। ইতিহাস ক্লাসে স্যার শেরশাহের জীবনী পড়াচ্ছেন। স্যার বললেন, শেরশাহ প্রথমে ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করলেন। ঝিনু মস্তান তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন স্যার, তার আগে ঘোড়ারা ডাকতে পারত না?
শাহনাজের কথা শেষ হতেই দুজনেই হি হি করে হেসে উঠল। হাসি থামার পর শাহনাজ জিজ্ঞেস করল, তুই কোনো গল্প জানিস না?
ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নাড়ল, বলল, জানি।
বল, শুনি।
এ্যা, এই গল্পটা খুব হাসির। একদিন একটা মানুষ গেছে চিড়িয়াখানাতে, ক্যাপ্টেন ডাবলুকে একটু বিভ্রান্ত দেখায়, মাথা নেড়ে বলল, না, চিড়িয়াখানা না, মিউজিয়ামে। সেই মিউজিয়ামে গিয়ে–ইয়ে–মানুষটা– ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার থেমে যায়। তারপর আমতা আমতা করে বলে, না, আসলে চিড়িয়াখানাতেই গেছে। সেখানে মানুষটা কী একটা জানি করেছে–বানরের সাথে। আমার ঠিক মনে নাই, বানরটা তখন কী জানি করেছে সেটা এত হাসির–হি হি হি– ক্যাপ্টেন ডাবলু হি হি করে হাসতেই থাকে।
এইটা তোর হাসির গল্প?
হ্যাঁ। আমার পুরো গল্পটা মনে নাই, কিন্তু খুব হাসির ঘটনা। হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবে
শাহনাজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে। এবারে আমি বলি শোন। এক ট্রাক ড্রাইভার অ্যাকসিডেন্ট করে হাসপাতালে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল কেমন করে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, সে বলল, আমি ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ দেখি রাস্তা দিয়ে সামনে থেকে একটা গাড়ি আসছে–আমি তখন তাকে সাইড দিলাম। আরো খানিকদূর গিয়েছি তখন দেখি একটা ব্রিজ আসছে, সেটাকেও সাইড দিলাম। তারপর আর কিছু মনে নাই।