সূর্যের আলো মহাকাশযানের যে অংশটুকুতে পড়েছে সেই অংশটুকু চকচক করছে এবং সেখান থেকে আলোর বর্ণালি ছড়িয়ে পড়ছে। পাহাড়ের ভিতরের অংশটুকু বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু মহাকাশযানের সেই অংশটুকুও যে একই রকম চমকপ্রদ হবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। শাহনাজ বুকের ভিতর থেকে একটা নিশ্বাস সাবধানে বের। করে দিয়ে বলল, এতবড় একটা স্পেসশিপ এই পাহাড়ের মাঝে এসে আছাড় খেয়ে পড়ল, কেউ টের পেল না?
না না না না না শাহনাজপু। ক্যাপ্টেন ডাবলু নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি উত্তেজিত, তা না হলে এক নিশ্বাসে এতগুলো না বলত না। শুধু তাই না, শাহনাজ আপু না বলে সেটাকে শর্টকাটে শাহনাজপু করে ফেলেছে। কিন্তু সেটা নিয়ে শাহনাজ এখন মাথা ঘামাল না। ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নেড়ে বলল, এই স্পেসশিপ বাইরে থেকে আছাড় খেয়ে পড়ে নাই। এতবড় একটা পাহাড় ফাটিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলে সারা এলাকার মানুষ টের পেতরিক্টর স্কেলে আট থেকে বেশি ভূমিকম্প হত!
তা হলে?
এটা আকাশ থেকে আসে নাই। আকাশ থেকে এসে পাহাড়ের ভিতরে ঢুকলে সামনের এই গাছগুলো আস্ত থাকতে পারত? পারত না। ভেঙেচুরে গুড়ো গুড়ো করে ফেলত।
শাহনাজ মাথা নাড়ল। ক্যাপ্টেন ডাবলু ঠিকই বলেছে, এটা আছাড় খেয়ে পড়লে সামনের এই বড় বড় গাছগুলো থাকত না। আশপাশে কোথাও কোনো ক্ষতি না করে এতবড় একটা স্পেসশিপ এই পাহাড়ের মাঝে ঢোকা অসম্ভব কিন্তু তারা নিজের চোখে দেখতে পারছে এটা ঢুকে গেছে! কীভাবে হল এটা?
ক্যাপ্টেন ডাবলু চকচকে চোখে বলল, বুঝতে পারছ না শাহনাজপু, এই মহাকাশযানটা বাইরে থেকে আসে নাই। এটা পাহাড়ের ভিতরেই ছিল, এখন পাহাড় ফেটে বের হয়ে আসছে!
ডিম ফেটে যেরকম বাচ্চা বের হয়ে আসে?
তুলনাটা শুনে ক্যাপ্টেন ডাবলু একটু হকচকিয়ে গেল। মাথা নেড়ে আমতা আমতা করে বলল, হ্যাঁ, অনেকটা ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার মতো।
তার মানে এটা জীবন্ত? ভাইয়াকে খেয়ে ফেলেছে?
ক্যাপ্টেন ডাবলু এবারে মাথা চুলকাতে শুরু করে। একটা স্পেসশিপ জীবন্ত, পাহাড়ের মতো দেখতে একটা ডিমের ভিতরে বড় হয়ে সেটা ডিম ফেটে বের হয়ে মানুষজনকে কপকপ করে খেয়ে ফেলছে, সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। তারা দুজনেই স্পোশিপের দিকে তাকাল, বিচিত্র এই স্পেসশিপটিকে আর যাই হোক, জীবন্ত প্রাণী মনে হয় না। শাহনাজ বলল, এটা ভিতরে আস্তে আস্তে বড় বড় হয় নাই। এখানে হঠাৎ করে এসেছে। হঠাৎ করে এসেছে বলে ঝরনার পানি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে।
ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নেড়ে বলল, ঠিকই বলেছ। এটা হঠাৎ করেই এসেছে। হঠাৎ করে এই পাহাড়ের নিচে হাজির হয়েছে, তাই কেউ এর কথা জানে না।
হঠাৎ করে আসা মানে কী? হঠাৎ করে তো কিছু আসে না। কোনো এক জায়গা থেকে আসতে হয়।
ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার মাথা চুলকাতে শুরু করল। শাহনাজ লক্ষ করল তার সাথে পরিচয় হবার পর এই প্রথমবার অল্প সময়ের মাঝে তাকে কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য মাথা চুলকাতে হচ্ছে। ক্যাপ্টেন ডাবলু অনেকটা জোরে জোরে চিন্তা করার। মতো করে বলল, এটা এখানে ছিল না, হঠাৎ করে এখানে এসে হাজির হয়েছে। তার মানে–
শাহনাজ তীক্ষ্ণ চোখে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে রইল, তার মানে?
তার মানে হচ্ছে এটা সম্ভব হতে পারে শুধুমাত্র যদি—
শুধুমাত্র যদি?
ক্যাপ্টেন ডাবলু চোখ পিটপিট করে বলল, ওয়ার্মহোল্!
ওয়ার্মহোল?
হ্যাঁ।
সেটা কী?
স্পেস টাইম ফুটো করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অন্য সময়ে চলে যাওয়া!
তার মানে এটা অন্য কোনো জায়গা, অন্য কোনো সময় থেকে হঠাৎ করে এখানে চলে এসেছে?
ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। এইজন্য পৃথিবীর কেউ টের পায় নাই। অন্য কোনো গ্যালাক্সি থেকে লক্ষকোটি মাইল দূর থেকে এখানে এসে হাজির হয়েছে।
শাহনাজ ভুরু কুঁচকে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে রইল, সত্যি কি এ রকম সম্ভব?
ক্যাপ্টেন ডাবলু ঠোঁট উল্টে বলল, এক জায়গায় পড়েছি যে এটা সম্ভব। সত্যি–মিথ্যা জানি না। তবে
তবে কী?
তবে সেটা যারা করতে পারে তারা নিশ্চয়ই অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী। এত বুদ্ধিমান যে তাদের বুদ্ধির তুলনায় আমরা একেবারে পোকামাকড়ের মতো।
পোকামাকড়ের মতো?
হ্যাঁ। ক্যাপ্টেন ডাবলু খানিকক্ষণ চোখ কুঁচকে মহাকাশযানটার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর আস্তে আস্তে বলল, শাহনাজপু।
কী হল?
এই স্পেসশিপে যারা এসেছে তারা নিশ্চয়ই আমাদের থেকে অনেক অনেক উন্নত। তার মানে আমরা যদি স্পেসশিপের ভিতর যাই তাহলে তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।
শাহনাজ এতটা নিশ্চিত বোধ করল না, জিজ্ঞেস করল, কেন সেটা বলছ? একটু আগে না বললে আমরা পোকামাকড়ের মতো। পোকামাকড় দেখলে আমরা মেরে ফেলি না?
কে বলেছে মেরে ফেলি?
মশা? মশা তোমার গালে বসলে ঠাস করে এক চড়ে মেরে চ্যাটকা করে ফেল না?
তার কারণ মশা কামড় দেয়। আমরা কি কাউকে কামড় দিই? তা ছাড়া একটা প্রজাপতি দেখলে তুমি কি সেটা মার?
শাহনাজ মাথা নাড়ল, তা অবশ্য মারি না। তার কারণ প্রজাপতি সুন্দর। কিন্তু এই প্রাণীদের কাছে আমরা কি সুন্দর?
ক্যাপ্টেন ডাবলু শাহনাজের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে তো সুন্দরই লাগে! শুধু যদি নাকটা_