রুখ অনুনয় করে বলল, মহামান্য এনরয়েড, আমি আপনার কাছে আমার প্রাণ ভিক্ষা চাইছি।
আমি তোমাকে বলেছি মানব–সদস্য। নির্বোধ প্রাণীদের জন্য আমাদের ভিতরে কোনো সমবেদনা নেই। তুমি কি কখনো অবলীলায় নিচু স্তরের প্রাণী হত্যা কর নি? করেছ। আমরাও করি। এস।
» ০৫. মেতসিসের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রটি
মেতসিসের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রটি বিশাল, সেখানে বুদ্ধিমান এনরয়েডরা থাকে বলে পুরো এলাকাটি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য বিশাল করিডোর রয়েছে, এই সকল করিডোরে চৌম্বক–ক্ষেত্র ব্যবহার করে ভাসমান অবস্থায় বুদ্ধিমান এনরয়েড কিংবা তাদের যন্ত্রপাতিগুলো আসা–যাওয়া করছে। রুখ অনুমান করল করিডোরের নিচে সম্ভবত সুপার কন্ডাক্টিং কয়েল রয়েছে, তাপ–নিরোধক ব্যবস্থা থাকার পরও সুপার কন্ডাক্টরগুলো পুরো করিডোরকে হিমশীতল করে রেখেছে। রুথ একটি ভাসমান প্ল্যাটফর্ম করে বুদ্ধিমান এনরয়েডটার সাথে সাথে মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের গভীরে এসে উপস্থিত হয়েছে। এই এলাকায় মানুষ সম্ভবত কখনোই আসে না, কোথাও খুব ঠাণ্ডা আবার কোথাও উষ্ণ। বাতাসের চাপেরও তারতম্য রয়েছে বলে মনে হল।
নানা করিডোর ধরে এগিয়ে গিয়ে বুদ্ধিমান এনরয়েডটি রুখকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি বিশাল হলঘরের মতো জায়গায় হাজির হল। বোতাম চেপে ভারী দরজাটি সরিয়ে রুখ ভিতরে ঢুকে হঠাৎ করে আতঙ্কে শিউরে ওঠে। ভিতরে যতদূর দেখা যায় মানুষের দেহ। হিমশীতল ঘরটিতে হালকা নীল আলোতে সারি সারি মানুষের দেহগুলো দেখে রুখের প্রথমে মনে হল এগুলো মৃতদেহ। কিন্তু একটু ভালো করে তাকিয়েই বুঝতে পারল মানুষগুলো। জীবন্ত, নিশ্বাসের সাথে সাথে তাদের বুক ওঠা–নামা করছে। হঠাৎ করে দেখলে মনে হয়। মানুষগুলো শূন্যে ভেসে আছে কিন্তু একটু ভালো করে দেখলেই টাইটেনিয়ামের সূক্ষ্ম তার, শিরায় প্রবাহিত পুষ্টিকর তরলের টিউব এবং অক্সিজেনের প্রবাহ চোখে পড়ে। মানুষগুলো পুরোপুরি নগ্ন এবং ঘুমন্ত। শূন্যে ঝুলে থাকা এই মানুষগুলোর মাঝে অল্প কয়েকজন শিশু এবং কিশোর–কিশোরী, তবে বেশিরভাগই তরুণ–তরুণী।
রুখ কিছুক্ষণ নিশ্বাস বন্ধ করে থেকে ভয়–পাওয়া–গলায় বলল, এরা কারা?
এনরয়েডটি একটু রহস্যের মতো ভঙ্গি করে বলল, তুমিই বল।
আমি? আমি কেমন করে বলব?
তুমি পারবে। যাও, মানুষগুলোকে ভালো করে দেখে আস। চতুর্থ সারির তৃতীয় মানুষটি দেখ। সপ্তম সারির শেষ মানুষটিও দেখ। যাও।
রুখ হতচকিত হয়ে ঘুমন্ত মানুষগুলোর মাঝে দিয়ে হেঁটে যেতে থাকে, তার মনে হতে থাকে হঠাৎ করে বুঝি কেউ জেগে উঠে তার দিকে অবাক হয়ে তাকাবে। কিন্তু কেউ জেগে উঠল না, নিশ্বাসের সাথে খুব হালকাভাবে বুক ওঠা–নামা করা ছাড়া তাদের মাঝে জীবনের আর কোনো চিহ্ন নেই।
চতুর্থ সারির তৃতীয় মানুষটি একজন তরুণী। ঘুমন্ত একজনের নগ্ন দেহের দিকে তাকাতে রুখের সংকোচ হল কিন্তু মানুষটির মুখের দিকে তাকিয়ে সে আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে। তরুণীটি ক্রীনা।
রুখ কয়েক মুহর্তে হতবাক হয়ে ক্রীনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে হঠাৎ করে অনেক কিছু তার কাছে স্পষ্ট হয়ে আসে। সে পাশের ঘুমন্ত মানুষটির দিকে তাকাল, এই মানুষটিও
সে চেনে, মানুষের বসতিতে সে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ করে। ওপরে যে ঝুলে। রয়েছে সে কমিউনির তথ্যকেন্দ্র–পরিচালক। পাশের সারিতে রুহান শান্ত চোখে ঘুমিয়ে আছে। সপ্তম সারির শেষ মানুষটি কে হবে সেটাও রুখ হঠাৎ করে বুঝে গেল, তবুও সে হেঁটে গেল নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য। রুখ অবাক হয়ে দেখল মানুষটি সে নিজে। টাইটেনিয়ামের সূক্ষ্ম তার দিয়ে তাকে ওপর থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নাকের মাঝে সূক্ষ্ম অক্সিজেনের টিউব। হাতের শিরায় সূক্ষ্ম টিউবে করে পুষ্টিকর তরল প্রবাহিত হচ্ছে। মাথার মাঝে থেকে কিছু ইলেকট্রড বের হয়ে এসেছে।
রুখ কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর ক্লান্ত পায়ে বুদ্ধিমান এনরয়েডটির কাছে ফিরে এল। এনরয়েডটি হালকা গলায় বলল, তুমি নিশ্চয় এখন জান এরা কারা।
রুখ মাথা নাড়ল, জানি।
তুমি নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছ কেন এদেরকে এখানে রাখা হয়েছে?
হ্যা পারছি।
তুমি কি এখনো বিশ্বাস কর মেতসিসে মানুষের বিবর্তন হবে?
রুখ মাথা নাড়ল, না।
বুদ্ধিমান এনরয়েডটি খলখল করে হেসে উঠল, বলল, জৈবিক পদ্ধতি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তোমরা নতুন মানুষের জন্ম দেবে সেই মানুষ মেতসিসে জৈবজগতের দায়িত্ব নেবে আমরা সেই ঝুঁকি নিতে পারি না। তাই মানুষের এক দল তার দায়িত্ব শেষ করার পর তাদের আমরা অপসারণ করে ফেলি, নতুন একটি দল এসে তার দায়িত্ব নেয়।
পুরোনো দলকে তোমরা কীভাবে অপসারণ কর?
বাতাসের প্রবাহে সঠিক পরিমাণ কার্বন মনোঅক্সাইড মিশিয়ে দিয়ে। তুমি জান মানুষ অত্যন্ত দুর্বল প্রাণী, তাদের হত্যা করা খুব সহজ।
মেতসিসে আমাদের মতো কয়টি দল এসেছে?
আজ থেকে সাড়ে সাত শ বছর আগে মেতসিস এই গ্যালাক্সির কেন্দ্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। প্রতি পনের বছরে আমরা একবার করে তোমাদের নতুন করে সৃষ্টি করেছি।
তার মানে এর আগে পঞ্চাশবার আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?