এনরয়েডটি হঠাৎ হাসির মতো শব্দ করল, বলল, প্রবৃত্তি কখনো নিচু কিংবা উঁচু হয়। অস্তিত্বের জন্য প্রবৃত্তির প্রয়োজন আছে।
মহামান্য এনরয়েড, নিচু শ্রেণীর প্রাণীর তুলনায় আমাদের মাঝে অনুভূতি অনেক বেশি। সেরকমভাবে আমাদের তুলনায় আপনার মাঝেও কি অনুভূতি বেশি? যে অনুভূতি আমাদের নেই সেরকম কিছু কি আপনাদের আছে?
হ্যাঁ। আছে।
সেটি কী রকম মহামান্য এনরয়েড?
আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না। তবে তুমি যদি আমার চোখের দিকে তাকাও তা হলে সেই অনুভূতিটির একটু তোমাকে অনুভব করাতে পারি। তুমি কি চাও?
রুখ ভয়ে ভয়ে বলল, আমি চাই মহামান্য এনরয়েড।
তা হলে আমার কাছে এস। আমার চোখের দিকে তাকাও।
রুখ এক পা এগিয়ে এনরয়েডটির দিকে তাকাল। এনরয়েডটির চোখের গভীরে হঠাৎ একটি বিশাল শূন্যতা উঁকি দিতে শুরু করে। হঠাৎ রুখ এক ভয়াবহ আতঙ্কে চিৎকার করে দুই হাতে নিজের চোখ ঢেকে ফেলে। সে হাঁটু ভেঙে নিচে পড়ে যায়, তার সারা শরীর অনিয়ন্ত্রিতভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকে।
মানব–সদস্য এনরয়েডটি নরম গলায় বলল, তুমি সম্ভবত এখনো এই অনুভূতির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও নি।
রুখ কোনোমতে নিজের পায়ের উপর উঠে দাঁড়াল। দুই হাতে মুখ ঢেকে বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বলল, না, হই নি। এ ধরনের ভয়ঙ্কর শূন্যতার অনুভূতি আমাদের নেই।
আমরা এটিকে বলি বিস্থিতি। যখন স্থিতি হতে ইচ্ছে করে না সেটি হচ্ছে বিস্থিতি।
কী আশ্চর্য! এবং কী ভয়ঙ্কর!
মানব–সদস্য—
মহামান্য এনরয়েড, আমার নাম রুখ।
আমি জানি। তোমার সাথে পরিচয়পর্ব শেষ হয়েছে, আমরা কি এখন কাজ শুরু করতে পারি?
রুখ হঠাৎ করে নিজের ভিতরে এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করতে থাকে। সে। দুর্বলভাবে মাথা নাড়ল, বলল, পারেন মহামান্য এনরয়েড।
তোমার মস্তিষ্কের স্ক্যানটি আমি দেখেছি। সেখানে কিছু দুর্বোধ্য তথ্য রয়েছে।
দুর্বোধ্য?
হ্যাঁ। দুর্বোধ্য এবং কৌতূহলী। তোমার ধারণা মেতসিসে মানুষের উপস্থিতির প্রয়োজন আছে। তুমি কেন এই ধারণা পোষণ কর?
মহামান্য এনরয়েড–পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব নেই। মেতসিসে পাঠানোর জন্য যদি মানুষের জিনস থেকে তাদেরকে নতুন করে সৃষ্টি করা না হত তা হলে আমাদের জন্ম হত না। আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী আমরা এখানে (কালি নি, এখানে আপনারা আমাদের এনেছেন।
হ্যাঁ। কিন্তু তোমরা এখানে বাহুল্য। তোমরা মেতসিসের জন্য একটি বিশাল সমস্যা। আমরা প্রায়ই মেতসিসের জৈবজগৎটি অবলুপ্ত করে দেওয়ার কথা ভাবি। তোমরা এখানে পুরোপুরি আমাদের করুণার উপরে বেঁচে আছ। কিন্তু তোমার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জিনিস দেখতে পেয়েছি।
রুখ শুকনো গলায় বলল, কী দেখতে পেয়েছেন মহামান্য এনরয়েড?
দেখতে পেয়েছি তুমি বিশ্বাস কর মেতসিসে মানুষ না থাকলে তার উদ্দেশ্য অসম্পূর্ণ হত।
রুখ দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকাল। বলল, মহামান্য এনরয়েড, আপনি বলেছেন আপনাদের মানুষের মতো ক্রোধ এবং ঘৃণা রয়েছে। আমার কথা শুনে সম্ভবত আপনার মাঝে ক্রোধের সৃষ্টি হবে। আপনাদের অনুভূতি অত্যন্ত তীব্র হয়তো সেই ক্রোধ আমার ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনবে। সেই কথা চিন্তা করে আমি অত্যন্ত তীত মহামান্য এনরয়েড।
আমি জানি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। বুদ্ধিমত্তায় অত্যন্ত নিচু স্তরের অস্তিত্বের জন্য আমরা কখনো সমবেদনা অনুভব করতে পারি না। তোমাদের অস্তিত্বের আমার কাছে। কোনো মূল্য নেই। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে আমি তোমাদের সৃষ্টি করতে পারি কিংবা ধ্বংস করতে পারি।
রুখ কদাকার এনরয়েডটির দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠল, মাথা নিচু করে বলল, আপনার কাছে আমার সুকানোর কিছু নেই। আপনি জানেন আমি কেন মেতসিসে মানুষের অস্তিত্বকে প্রয়োজনীয় মনে করি।
তুমি মনে কর আমাদের বুদ্ধিমত্তার উন্নতি খুব দ্রুত হচ্ছে, তার পরিণতি কী হবে জানা নেই।
হ্যাঁ মহামান্য এনরয়েড। সেই তুলনায় মানুষের উন্নতি হয়েছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। বিবর্তন পরীক্ষিত একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কোনো ঝুঁকি নেই। মেতসিস কোথায় পৌঁছাবে আমরা জানি না কিন্তু মানুষকে এখানে রাখা হলে তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা সেখানে পৌঁছে দেবে।
বুদ্ধিমান এনরয়েডটি হঠাৎ খলখল করে হেসে উঠল, হাসতে হাসতে বলল, তোমার জন্য আমার করুণা হচ্ছে মানব–সন্তান।
রুখ আতঙ্কে শিউরে উঠে বলল, কেন মহামান্য এনরয়েড?
তোমার বিশ্বাস যে কত ভিত্তিহীন সেটা তুমি জান না।
কেন আপনি এটা বলছেন মহামান্য এনরয়েড। মানুষ যে–বিবর্তনের মাঝ দিয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সেটি তো ভিত্তিহীন তথ্য নয়।
কিন্তু মেতসিসে তোমরা বিবর্তনের মাঝ দিয়ে যাবে সেটি সত্য নয়।
আপনি কী বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।
তুমি আমার সাথে এস। আমি তোমাকে একটি জিনিস দেখাই। তবে
তবে কী?
তুমি যে জিনিসটি দেখবে সেটি তুমি অন্য মানব–সদস্যকে বলতে পারবে না।
রুখের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে, সে কাঁপা গলায় বলল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
তুমি যেন বলতে না পার সে জন্য আমি তোমার অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দেব।
না। রুখ কাতর গলায় বলল, না। তাহলে আমি দেখতে চাই না।
তোমাকে দেখতে হবে। এনরয়েডটি অত্যন্ত কঠোর গলায় বলল, স্বল্প বুদ্ধিমত্তার প্রাণীদের জন্য অহঙ্কার অত্যন্ত বিপজ্জনক।