রুখ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে এনরয়েডটির দিকে তাকিয়ে রইল, একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, তুমি সত্যি বলছ?
হ্যাঁ। আমি মিথ্যা বলতে পারি না
এই যারা বুদ্ধিমান এনরয়েড, তারা–মানে তারা কী রকম?
তারা অসম্ভব বুদ্ধিমান। সত্যি কথা বলতে কী তুমি কিংবা আমি সেটা কল্পনা করতে পারব না। তুমি নিজেই দেখবে।
আমার কি কোনো বিপদ হতে পারে?
এনরয়েডটা কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। রুখ ভয়–পাওয়া গলায় বলল, কী হল? কথা বলছ না কেন?
বিপদ?
হ্যাঁ।
তুমি যদি স্বাভাবিক একজন মানুষ হও–তোমার চিন্তা–ভাবনা যদি খুব সাধারণ হয়, তোমার কোনো বিপদ নেই। কিন্তু যদি তোমার মাঝে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকে তারা তোমাকে নিয়ে কৌতূহলী হতে পারে।
কৌতূহলী হলে তারা কী করে?
তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শেষবার একজনের মস্তিষ্ক খুলে দেখেছিল।
রুখ আতঙ্কে শিউরে উঠল, বলল, কী বলছ? এটা তো নিষ্ঠুরতা!
আমি যদি তোমার মস্তিষ্ক খুলে নিই সেটা হবে নিষ্ঠুরতা। বুদ্ধিমত্তায় যারা অনেক উপরে তাদের জন্যে এটা নিষ্ঠুরতা নয়। তুমি কি ল্যাবরেটরিতে ইঁদুর কেটে দেখ নি? সেটা কি নিষ্ঠুরতা ছিল?
কিন্তু
আর কথা নয়। চুপ করে শুয়ে থাক কিছুক্ষণ। তোমার প্রিয় কোনো জিনিসের কথা ভাব।
রুখের ক্রীনার কথা মনে পড়ল। তার কান, চোখ, কোমল ত্বক। সতেজ দেহ। তার নরম কণ্ঠস্বর। কুখ চোখ বন্ধ করে ক্রীনাকে দেখতে চাইল কিন্তু একটু পর পর তার মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল–বুকের ভিতর এক অজানা আশঙ্কা কেঁপে কেঁপে উঠছিল।
.
রুখ যে–ঘরটির ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বিশাল এবং গোলাকার। ঘরের দেয়াল ঈষৎ আলোকিত এবং অর্ধস্বচ্ছ কিন্তু দেয়ালের অন্যপাশে কী আছে সেটা দেখার কোনো উপায় নেই। রুখ দেয়ালের দিকে এগিয়ে গিয়ে আবিষ্কার করেছে দেয়ালটি তার কাছ থেকে সরে যাচ্ছে। সম্ভবত তাকে ঘিরে কোনো দেয়াল নেই, সম্ভবত সে ছোট একটা
• প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে এবং সে হাঁটলে প্ল্যাটফর্মটি উলটোদিকে সরতে থাকে, কাজেই সে আসলে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে নড়তে পারে না। হয়তো আসলে এখানে কোনো ঘর নেই, পুরো ব্যাপারটি এক ধরনের দৃষ্টিবিভ্রম। হয়তো সে আসলে একটা ছোট অর্ধগোলকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে, যার বাইরে থেকে কিছু বুদ্ধিমান এনরয়েড তাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঘুঁটিয়ে ঘুঁটিয়ে দেখছে। কেউ তাকে লক্ষ করছে। অনুভূতিটি এত তীব্র যে রুখের মনে হতে থাকে অনেকে যেন নিচু গলায় কথা বলছে। কুখ তার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে কথা শোনার চেষ্টা করে। একটি–দুটি কথা সে শুনতে পায় কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না।
রুখ যখন কথা শোনার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিচ্ছিল তখন কে যেন খুব কাছে থেকে বলল, মানব–সদস্য।
রুখ চমকে উঠল, কে?
আমি।
আমি কে?
তুমি আমাকে চিনবে না।
আপনি কি বুদ্ধিমান এনরয়েড?
কে যেন নিচু গলায় হাসল, বলল, বুদ্ধিমত্তা অত্যন্ত আপেক্ষিক ব্যাপার।
কিন্তু বুদ্ধিমত্তার একটি পরিমাপ তৈরি হয়েছে। সেই পরিমাপ অনুযায়ী আপনি সম্ভবত মানুষ থেকে বুদ্ধিমান।
সম্ভবত।
আমি মানুষ থেকে বুদ্ধিমান কোনো অস্তিত্ব কখনো দেখি নি। আমি কি আপনাকে দেখতে পারি?
মানুষ বুদ্ধিমত্তার যে পর্যায়ে আছে সেখানে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য আকৃতির একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে। তুমি সম্ভবত আমার আকৃতিকে গ্রহণ করতে পারবে না।
আমি–আমি তবু একবার দেখতে চাইছিলাম।
ঠিক আছে।
খুব ধীরে ধীরে অর্ধগোলাকৃতির ঘরটির বাইরে আলোকিত হয়ে গেল এবং রুখ দেখতে পেল তার খুব কাছাকাছি একটি কদাকার এনরয়েড দাঁড়িয়ে আছে। এনরয়েডটি দেখতে অস্পষ্ট জ্বণের মতো, মানুষের অনুকরণে তৈরি ছোট একটি দেহের উপরে একটি বড় মাথা। মাথার ভিতর থেকে অনেকগুলি ছোট ছোট নল বের হয়ে শরীরের নানা জায়গায় প্রবেশ করেছে। মাথার ভিতরে শক্তিশালী কপোট্রনটিকে শীতল করার জন্য নিশ্চয়ই সেখানে কোনো ধরনের তরল প্রবাহিত হচ্ছে। এনরয়েডটির দুটি হাত, হাতের প্রান্তে আঙুলের মতো সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি। যে দুটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো শক্তিশালী এবং জটিল। এনরয়েডটির মাথার কাছে দুটি চোখ, রুথ সেদিকে তাকিয়ে শিউরে ওঠে, সেখানে এক ধরনের অমানুষিক দৃষ্টি। এনরয়েডটি নিচু গলায় বলল, আমি বলেছিলাম তুমি আমার আকৃতিকে গ্রহণ করতে পারবে না। আমার হিসাব অনুযায়ী তুমি আমাকে কদাকার এবং কুৎসিত মনে করছ।
না মানে
তাতে কিছু আসে–যায় না। প্রাণিজগতে অক্টোপাসকে বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অক্টোপাস যদি বিবর্তনে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে গড়ে উঠত তারা সম্ভবত মানুষকে অত্যন্ত কুৎসিত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করত।
আপনি ঠিকই বলেছেন মহামান্য—
আমার কোনো নাম নেই।
আপনি যদি অনুমতি দেন আমি আপনাকে কি একটা প্রশ্ন করতে পারি?
কর।
আপনাদের দেহের আকৃতি মানুষের কাছাকাছি। পুরোপুরি মানুষের আকৃতি না নিয়ে তার কাছাকাছি কেন?
মানুষের আকৃতির যে সকল বিষয় উন্নত শুধু সেগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।
মহামান্য এনরয়েড, আপনার ভিতরে কি মানুষের অনুভূতি আছে?
হ্যাঁ আছে। অনেক তীব্রভাবে আছে।
আপনার ভিতরে কি ক্রোধ, ঘৃণা বা হিংসা আছে?
হ্যাঁ আছে।
আমি ভেবেছিলাম বুদ্ধিমত্তা যখন বিকশিত হয় তখন মানুষের নিচু প্রবৃত্তিগুলো লোপ পায়।