এটাকে আঘাত করার চেষ্টা করাটাই মনে হয় বিপজ্জনক।
আমারও তাই ধারণা। কিন্তু এর উদ্দেশ্য অত্যন্ত ভয়ানক।
এর কী উদ্দেশ্য?
আমাদের এনরয়েডদের এক জন এক জন করে ধ্বংস করা।
ক্রীনা অবাক হয়ে রয়েডের দিকে তাকাল, বলল, তুমি কেমন করে জান?
আমরা জানি, কারণ এটি আমাদের নিজস্ব কোডে সেটি বলছে। আমরা বুঝতে পারছি।
আর কী বলছে?
আর বলছে– রয়েডকে হঠাৎ কেমন যেন বিপর্যস্ত দেখাল।
কী বলছে?
বলছে, তোমাকে কোনোভাবে স্পর্শ করা হলে সে পুরো নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ধ্বংস করে দেবে।
ক্রীনা সবিস্ময়ে কিছুক্ষণ রয়েডের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, তাই যদি সত্যি হয় তা হলে আমাকে বের হতে দাও। আমাকে দেখলে নিশ্চয়ই এটি শান্ত হবে।
রয়েড মাথা নাড়ল। বলল, আমারও তাই ধারণা।
দেখা যাক চেষ্টা করে। ক্রীনা কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে একটু সাহস সঞ্চয় করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা স্পর্শ করামাত্র সেটি নিঃশব্দে খুলে যায়। সামনে একটি দীর্ঘ করিডোর, করিডোরের শেষপ্রান্তে বিশাল ভয়ঙ্করদর্শন রোবটটি দাঁড়িয়ে আছে। রোবটটি তার অস্ত্র ক্রীনার দিকে উদ্মত করতেই ক্রীনা হাত তুলে চিৎকার করে বলল, আমি ক্রীনা।
ক্রীনার কথাটিতে প্রায় মন্ত্রের মতো কাজ হল। রোবটটি থেমে যায়, তার নৃশংস–মুখে এক ধরনের কোমলতা ফিরে আসে। রোবটটি হাতের অস্ত্রটি নামিয়ে নেয় এবং হঠাৎ করে ঘুরে দীর্ঘ করিডোর ধরে হেঁটে ফিরে যেতে শুরু করে। কিছুক্ষণ আগে যে এই পুরো এলাকাটিতে এক ভয়ঙ্কর নারকীয় তাণ্ডব ঘটে গেছে সেটি আর বিশ্বাস হতে চায় না। খোলা দরজা দিয়ে প্রথমে রয়েড এবং তার পিছু পিছু বুদ্ধিমান এনরয়েডগুলো বের হয়ে আসে। ক্রীনা রয়েডের দিকে তাকিয়ে বলল, রয়েড।
বল।
আমার মনে হয় তোমরা রুখকে যেতে দাও।
এই মুহূর্তে এ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
একটা স্কাউটশিপে করে আমাদের দুজনকে তোমরা মানুষের বসতিতে পৌঁছে দাও।
বেশ। কিন্তু একটা জিনিস মনে রেখো–
কী জিনিস?
তুমি যাকে মানুষের বসতিতে নিয়ে যাচ্ছ সে তোমার বন্ধু রুখ নয়।
ক্রীনা একমুহূর্ত রয়েডের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, হয়তো তোমার কথা সত্যি। কিন্তু
কিন্তু কী?
তার ভিতরে নিশ্চয়ই রুখ লুকিয়ে আছে। আমি তাকে খুঁজে বের করব।
আমি তোমার সৌভাগ্য কামনা করছি না। তবে জেনে রেখো
কী?
মেতসিসের নিয়ন্ত্রণ এখন আর আমাদের হাতে নেই।
.
রুখের হাত–পায়ের বাধন খুলে দেওয়ামাত্র সে ধড়মড় করে উঠে বসে ক্রীনার হাত আঁকড়ে ধরে কাতর গলায় বলল–
ক্রীনা!
ক্রীনা সবিস্ময়ে রুখের দিকে তাকিয়ে রইল, নরম গলায় বলল, রুখ! তুমি আমাকে চিনতে পারছ?
চিনতে পারব না কেন? কী বলছ তুমি?
না, মানে–
এখানে কী হচ্ছে ক্রীনা? আমাকে এরকম করে বেঁধে রেখেছিল কেন? আর একটু আগে কী বলছিল আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তথ্যকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে না দিলে তোমাকে হত্যা করবে–এর কী অর্থ? কেন বলছে এসব?
ক্রীনা একদৃষ্টে রুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে কি কিছুই জানে না?
ক্রীনা! রুখ কাতর গলায় বলল, তুমি এরকমভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন? কী হচ্ছে এখানে?
কিছু হচ্ছে না রুখ। মনে কর পুরো ব্যাপারটুকু একটা দুঃস্বপ্ন।
দুঃস্বপ্ন?
হ্যাঁ। ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। এখন তুমি চল।
কোথায়?
আমরা মানুষের বসতিতে ফিরে যাব।
রুখ চোখ বড় বড় করে ক্রীনার দিকে তাকিয়ে বলল, বুদ্ধিমান এনরয়েডরা আমাদের যেতে দেবে?
হ্যাঁ। যেতে দেবে।
সত্যি?
সত্যি।
রুখ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়, সে টলে পড়ে যাচ্ছিল, ক্রীনাকে ধরে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নেয়। ক্রীনা তাকে ধরে রেখে বলল, চল যাই।
চল। রুখ একমুহূর্ত থেমে বলল, ক্রীনা।
কী হল?
একটা কথা বলি? তুমি হাসবে না তো?
না। হাসব না।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি একা নই। আমার সাথে আরো কেউ আছে। আরো কোনো কিছু।
ক্রীনার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে, কিন্তু সে শান্ত গলায় বলল, তোমার মনের ভুল রুখ। তোমার সাথে কেউ নেই।
১২. স্কাউটশিপটা নামামাত্রই
স্কাউটশিপটা নামামাত্রই মানববসতির বেশকিছু মানুষ তাদের দিকে ছুটে এল। ক্রীনা রুখকে নিয়ে নেমে আসে। জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখে সবার দিকে তাকিলে বলল, তোমরা সবাই ভালো ছিলে?
হ্যাঁ। আমরা তো ভালোই ছিলাম। তোমাদের কী খবর! কিছুক্ষণ আগে মনে হল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি।
হ্যাঁ, কিছু বিস্ফোরণ হয়েছে।
কেন?
ক্রীনা একটু ইতস্তত করে বলল, বলব, সব বলব। আগে আমরা একটু বিশ্রাম নিই। তোমরা বিশ্বাস করবে না আমরা কিসের ভিতর দিয়ে এসেছি।
হ্যাঁ, চল।
রুখ আর ক্রীনাকে নিয়ে সবাই হেঁটে যেতে থাকে। ক্রীনা জিজ্ঞেস করল, রুহান কোথায়?
পরিচালনা–কেন্দ্রে। একটা ছোট সহায়তা সেল খোলা হয়েছে। সবাই খুব ভয় পাচ্ছে–তাই তাদেরকে সাহস দিচ্ছে।
তোমরা কেউ তাকে গিয়ে খবর দেবে?
ঠিক আছে, যাচ্ছি। বলে একজন কম বয়সী তরুণী পরিচালনা–কেন্দ্রের দিকে ছুটে যেতে থাকে।
ছোট দলটিকে নিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ক্রীনা আড়চোখে রুখের দিকে তাকাচ্ছিল। সে অত্যন্ত অন্যমনস্ক, মনে হচ্ছে তার চারপাশে কী ঘটছে ভালো করে লক্ষ করছে না। হাঁটার ভঙ্গিটুকুও খানিকটা অস্বাভাবিক, অতিরিক্ত উত্তেজক পানীয় খাবার পর মানুষ যেভাবে হাঁটে অনেকটা সেরকম। রুখকে নিয়ে ক্রীনা হেঁটে তাদের বাসার কাছাকাছি পৌঁছাল। বাসার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় দূরে রুহানকে দেখা গেল, সে খবর পেয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে চলে এসেছে। রুথ অন্যমনস্কভাবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে, তখন রুহান পিছন থেকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকল, রুখ।