রয়েড তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে রুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, এই প্রাণীটি কেমন করে সিগনাল পাঠাচ্ছে?
শরীরের মাঝে চার্জকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। চার্জকে ইচ্ছেমতো কম্পন করিয়ে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ পাঠাচ্ছে। নিখুঁত কম্পন। যখন যত দরকার।
কিন্তু আমাদের প্রতিরক্ষা সিস্টেম?
উপেক্ষা করে চলছে।
অসম্ভব।
আমি আমার কপোট্রনে কম্পন অনুভব করছি। আমাকেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।
সরে যাও। সবাই সরে যাও।
সরে যাচ্ছি।
ফ্যারাডে কেজ বাড়িয়ে দাও।
দিয়েছি।
দ্বিতীয় মাত্রার প্রতিরক্ষা সিস্টেম চালু করতে হবে।
আমার কপোট্রনের কোমল প্রতিরক্ষা আক্রান্ত হয়েছে।
সরে যাও। সবাই সরে যাও। দ্বিতীয় মাত্রার প্রতিরক্ষার আড়ালে চলে যাও।
এই মেয়েটি? এই মেয়েটিকে কী করব?
সাথে নিয়ে এস।
ক্রীনা হঠাৎ দেখল সবাই ঘর ছেড়ে সরে যাচ্ছে, প্রতিরক্ষা রোবট তাকে শক্ত করে ধরে টেনে নিতে থাকল। ক্রীনা চিৎকার করে বলল, ছেড়ে দাও আমাকে। ছেড়ে দাও!
কিন্তু তুচ্ছ মানুষের আর্তচিৎকারে কেউ কান দিল না।
ক্রীনাকে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে বুদ্ধিমান এনরয়েডরা একটা ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে রুখকে লক্ষ করা হচ্ছে। শান্ত ভঙ্গিতে সে শক্ত বিছানায় শুয়ে আছে–তার দৃষ্টিতে কোনো উত্তেজনা নেই, এক ধরনের বিচিত্র আত্মসমর্পণের ভাব।
রয়েড যান্ত্রিক ভাষায় অন্যান্য এনরয়েডদের সাথে কথা বলতে শুরু করে। এই মুহূর্তে রুখ কী করছে জানতে চাইল। একজন এনরয়েড উত্তর দিল। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সে মূল তথ্যকেন্দ্রে তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে।
সর্বনাশ! এটি খুব বিপজ্জনক ব্যাপার।
হ্যাঁ। মূল তথ্যকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া আর মেতসিসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া একই ব্যাপার।
তাকে থামাতে হবে।
আমরা কোনো উপায় দেখছি না। এটি একজন সাধারণ মানুষ নয়। এটি মহাজাগতিক প্রাণীর একটি ডিকয়।
ক্রীনা নামে মেয়েটিকে দেখিয়ে ভয় দেখানো যেতে পারে। বলা যেতে পারে তাকে মেরে ফেলব।
চেষ্টা করে দেখি।
একটি বুদ্ধিমান এনরয়েড রুখের সাথে যোগাযোগ করে তাকে জানাল সে যদি এই মুহূর্তে মূল তথ্যকেন্দ্রে তথ্য পাঠানো বন্ধ না করে তা হলে ক্রীনাকে হত্যা করা হবে। রুখকে কেমন জানি ভ্রিান্ত দেখায়, সে ছটফট করে ওঠে এবং হঠাৎ কয়েকটি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে পুরো মেতসিস কেঁপে উঠল। ঘরের ওপরে বসানো মূল মনিটরে তারা অবাক হয়ে দেখল তথ্যকেন্দ্রের মূল করিডোরে হঠাৎ করে একটি বিশাল রোবট কোথা থেকে জানি উদয় হয়েছে। রোবটটি মানুষের অনুকরণে তৈরি কিন্তু পুরোপুরি মানুষের মতো নয়। মুখমণ্ডলে এক ধরনের ভয়ঙ্কর নৃশংসতার চিহ্ন, দুটি হাত এক ধরনের সর্পিল ভঙ্গিতে নড়ছে, দেহে উচ্চচাপের বিদ্যুৎপ্রবাহ, সেখান থেকে কর্কশ শব্দে নীলাভ স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। রোবটটি তার শক্তিশালী হাতে ভয়ঙ্কর একটি অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে শুরু করেছে।
নিরাপত্তা রোবটগুলো অতিকায় রোবটটিকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু সেটি তার দেহের আকারের তুলনায় অত্যন্ত ক্ষিপ্র। তার ভয়ঙ্কর মুখমণ্ডলে এক ধরনের যান্ত্রিক নৃশংসতা খেলা করতে থাকে। সেটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে একটি একটি করে নিরাপত্তা রোবটকে ভস্মীভূত করে দেয়। নিরাপত্তা রোবটগুলো তাদের ভস্মীভূত পোড়া দেহের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে করিডোরে ইতস্তত দাঁড়িয়ে থাকে, পুরো এলাকাটি পোড়া গন্ধ এবং ধোঁয়ায় ভরে যায়। রোবটটি এক ধরনের বিজাতীয় গর্জন করতে করতে অতিকায় দানবের মতো এগিয়ে আসছে, বড় মনিটরে সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্রীনা এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করতে থাকে। সে কাঁপা গলায় বলল, রয়েড। এটি কী? কোথা থেকে এসেছে?
আমরা জানি না। মনে হয়
মনে হয়?
মনে হয় তোমার বন্ধু রুখ এটি তৈরি করেছে।
রুখ তৈরি করেছে? ক্রীনা চিৎকার করে জলল, কী বলছ তুমি?
ঠিকই বলছি। মূল তথ্যকেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করেছে। কেন্দ্রীয় কারিগরি প্লান্টে নমুনা পাঠিয়ে তৈরি করে এনেছে
কী বলছ তুমি!
হ্যাঁ। অত্যন্ত চমৎকার ডিজাইন। আমাদের পক্ষে এরকম কিছু তৈরি সম্ভব নয়। অবিশ্বাস্য।
কিন্তু
তোমার বন্ধু রুখ আসলে এখন রুখ নয়। সে মহাজাগতিক প্রাণীর ডিকয়। আমরা ভেবেছিলাম সে আমাদের সাথে সহযোগিতা করবে। কিন্তু করছে না।
তোমরা এখন কী করবে?
আমরা অবশ্যই আত্মরক্ষার চেষ্টা করব। বুদ্ধিমান প্রাণীমাত্রই নিজেদের আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করে।
ক্রীনা সবিস্ময়ে মনিটরটির দিকে তাকিয়ে থাকে। অতিকায় ভয়ঙ্করদর্শন একটি রোবট ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। হাতে ভয়াবহ একটি অস্ত্র আলগোছে ধরে রেখেছে। রয়েড মনিটরে লক্ষ করে কোনো একটি সুইচ স্পর্শ করল, সাথে সাথে ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরণ অতিকায় রোবটটিকে আঘাত করল, সেটি প্রায় উড়ে গিয়ে করিডোরের এক কোনায় আছড়ে পড়ল কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই সেটি উঠে দাঁড়ায়, উদ্যত অস্ত্রে আবার দ্বিগুণ নৃশংসতায় গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে। প্রচণ্ড শব্দ, আগুন এবং ধোঁয়ায় পুরো এলাকাটি নারকীয় হয়ে ওঠে।
ক্রীনা চিৎকার করে বলল, রয়েড।
কী হয়েছে?
আমার মনে হয় তোমাদের প্রচলিত অস্ত্র এর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
আমারও তাই মনে হয়।