বিদ্যৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ?
হ্যা মূলত বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। যা–ই হোক আমি আমাদের এই আলোচনাটুকু যথাসম্ভব মানবিক করতে চাই। তাই আমরা এখানে চেয়ার এবং টেবিলের ব্যবস্থা করেছি। তোমাদের মস্তিষ্কে সরাসরি যোগাযোগ না করে তোমাদের সাথে কথা বলছি। প্রশ্ন করছি, প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। কথার মাঝে আবেগ প্রকাশ করছি, যখন প্রয়োজন তখন হাসছি, যখন প্রয়োজন কঠিন গলায় কথা বলছি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সত্যি কথা বলতে কী, আমি ব্যাপারটি তোমাদের জন্য আরো সহজ করে দিতে চাই। আমি তোমাদের সামনে একজন মানুষের রূপ নিয়ে আসতে চাই–তোমাদের যেন মনে হয় তোমরা একজন মানুষের সাথে কথা বলছ।
রুখ একটু অস্বস্তি নিয়ে সামনের শূন্য চেয়ারটির দিকে তাকাল, সেখানে মানুষের রূপ নিয়ে কিছু একটা বসে থাকলেই কি পুরো ব্যাপারটি তাদের জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে?
কণ্ঠস্বরটি বলল, আমি জানি তোমারা কী ভাবছ, কিন্তু দেখ ব্যাপারটি তোমাদের সাহায্য করবে। আমি কী রূপে আসব? পুরুষ না মহিলা?
কিছু আসে–যায় না। রুখ মাথা নাড়ল, আপনি কী রূপে আসবেন তাতে আমার বিশেষ কিছু আসে–যায় না।
ক্রীনা? তোমার কোনো পছন্দ আছে?
মধ্যবয়স্ক পুরুষ। কাঁচাপাকা চুল। কালো চোখ। হাসিখুশি।
চমৎকার! প্রায় সাথে সাথেই ঘরের দরজা খুলে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ এসে ঢুকল, তার কাঁচাপাকা চুল, কালো চোখ এবং হাসিখুশি চেহারা। মানুষটি যে তার কল্পনার সাথে কীভাবে মিলে গিয়েছে সেটি দেখে ক্রীনা প্রায় শিউরে ওঠে, এই বুদ্ধিমান এনরয়েডরা সত্যিই তাদের মস্তিষ্কের গহিনে প্রবেশ করতে পারে।
মানুষটি চেয়ার টেনে বসে রুখ এবং ক্রীনার দিকে তাকিয়ে বলল, কোনোরকম পানীয়?
রুখ এবং ক্রীনা এই প্রথমবার একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। তারা আবার মানুষটির দিকে তাকাল, বলল, না ধন্যবাদ।
ঠাণ্ডা পানি? বিশুদ্ধ পানি?
বেশ।
প্রায় সাথে সাথেই একটি সাহায্যকারী রোবট এসে মানুষটির সামনে এক গ্লাস এবং তাদের দুজনের সামনে দুই গ্লাস পানি রেখে গেল। মানুষটি পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে তাদের দিকে তাকাল, একটু হেসে বলল, আমার নাম রয়েড। মেতসিসের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে আমি তোমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছি।
মহামান্য রয়েড– রুথ সোজা হয়ে বসে বলল, আপনাকে
রয়েড হা হা করে হেসে বলল, আমার সাথে তোমাদের ভদ্রতা বা সম্মানসূচক কথা বলার প্রয়োজন নেই। তোমরা একজন মানুষ অন্য মানুষের সাথে যেভাবে কথা বল, আমার সাথে ঠিক সেভাবে কথা বলতে পার।
রুখ খানিকক্ষণ রয়েডের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি টেনে এনে বলল, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
ক্রীনা সোজা হয়ে বসে বলল, এবারে তা হলে কাজের কথায় আসা যাক। আমি খুব ভয় পাচ্ছি, পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আমার ভিতরে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। আমি এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি পাচ্ছি না। আমি
আমি জানি।
আমাদেরকে কি বলবে কেন আমাদের এনেছ? তোমরা তো আমাদের সম্পর্কে সব কিছু জান।
রয়েডের মুখে হঠাৎ একটু গাম্ভীর্যের ছায়া পড়ল। সে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, তোমরা দুজনেই অনেক বুদ্ধিমান, তোমরা কি অনুমান করতে পার কেন তোমাদের ডেকেছি?
আমরা?
হ্যাঁ।
ক্রীনা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, সম্ভবত শাস্তি দেওয়ার জন্য।
টেবিলে যে–ছয়টি রোবট বসেছিল তাদের মাঝে পিকো নামের রোবটটি যান্ত্রিক শব্দ করে সোজা হয়ে বলল, আমার বিবেচনায় এই মেয়েটি সত্যি কথা বলেছে।
রয়েড পিকোর দিকে তাকিয়ে বলল, পিকো তুমি কেন বলছ এই মেয়েটি সত্যি কথা বলছে?
যখন বিভিন্ন বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব একসাথে থাকে তখন তাদের মাঝে স্তরভেদ রক্ষা করা হলে গুরুতর সমস্যা হতে পারে। গতরাতের ঘটনায় সেটি রক্ষা করা হয় নি। মেতসিসের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বিনষ্ট করা হয়েছে–
ক্রীনা বাধা দিয়ে বলল, কিন্তু
পিকো কঠোর স্বরে বলল, আমি কথা বলার সময় আমাকে বাধা দেবে না।
ক্রীনা থতমত খেয়ে বলল, আমি দুঃখিত।
মেতসিসের পরিকল্পনা নষ্ট করায় এখানকার নিজস্ব রুটিন রক্ষা করা যাচ্ছে না। মানুষকে জানতে হবে তারা ইচ্ছে করলেই আমাদের পরিকল্পনায় বাধা দিতে পারবে না।
রয়েডের মুখে এক ধরনের হাসি ফুটে উঠল, যেন সে ভারি একটা মজার কথা শুনছে, সে মাথা নেড়ে বলল, যদি তবু তারা দেয়?
তা হলে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সেটি কী রকম?
আমরা আগে কার্বন মনোঅক্সাইজ দিয়ে তাদেরকে যন্ত্রণাশূন্যভাবে হত্যা করেছি। এখন থেকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করতে হবে।
কিন্তু সবাইকে যদি মেরে ফেলা হয় তা হলে এই ভয়ঙ্কর শাস্তির ঘটনাটা জানবে কে?
পরবর্তী মানুষেরা। পুরো ঘটনাটি তাদের স্মৃতিতে পাকাপাকিভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া। হবে। ভবিষ্যতে তারা কখনো এরকম দুঃসাহস দেখাবে না।
ক্রীনা আর নিজেকে সামলাতে পারল না, গলা উচিয়ে বলল, আমি এর থেকে বড় নির্বুদ্ধিতার কথা আগে কখনো শুনি নি। তোমরা দাবি কর তোমরা মানুষ থেকে বুদ্ধিমান? এই হচ্ছে তোমাদের বুদ্ধির নমুনা?
পিকো গর্জন করে বলল, খবরদার মেয়ে, তুমি সম্মান বজায় রেখে কথা বলবে। তুমি জান, তোমাদের আমরা পোকামাকড়ের মতো পিষে পেলতে পারি?
আমরা মানুষেরা অকারণে কোনো কীটপতঙ্গকেও স্পর্শ করি না। অথচ তোমরা মানুষের মতো প্রাণীকে শুধু যে হত্যা কর তাই না–তাদেরকে হত্যা করার ভয় দেখাও?