রুখ বলল, তুমি ঠিকই দেখছ, আমরা জীবিত।
আমরা মৃতদেহ নিতে এসেছি।
চমৎকার। আমাদের কাছে সব মিলিয়ে এগারটি মৃতদেহ রয়েছে।
আমরা দেড় হাজার মৃতদেহ সরিয়ে নিতে সক্ষম।
আমাদের কাছে দেড় হাজার মৃতদেহ নেই–তোমার হিসাবে নিশ্চয়ই কিছু একটা গোলমাল রয়েছে।
আগে কখনো এরকম হয় নি। যতবার আমরা দেড় হাজার মৃতদেহ নিতে এসেছি ততবার দেড় হাজার মৃতদেহ নিয়েছি।
এবারে পারবে না। দুঃখিত।
আমরা কি পরে আসব? নির্বোধ ধরনের রোবটটি বলল, একটু পরে এলে কি দেড় হাজার মৃতদেহ প্রস্তুত থাকবে?
না। রুখ মাথা নেড়ে বলল, এখানে কখনোই দেড় হাজার মৃতদেহ প্রস্তুত থাকবে না।
অত্যন্ত বিচিত্র ব্যাপার। অত্যন্ত বিচিত্র বলতে বলতে রোবটটি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝেই তারা এগারটি মৃতদেহ নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ক্রীনা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, এখন কী হবে?
রুখ মাথা নাড়ল, বলল, জানি না। তবে আমি খুব ক্লান্ত। আমাকে কিছু খেয়ে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে।
ঠিকই বলেছ, চল যাই। আমার বাসায় চল।
রুখ এবং ক্রীনা অবশ্য জানত না তাদের বিশ্রাম নেবার সময় হবে না তাদের ঘরে দুটি নিরাপত্তা এনরয়েড অপেক্ষা করছিল। ঘরে প্রবেশ করামাত্র তারা তাদের দিকে এগিয়ে আসে।
কে? ক্রীনা ভয়–পাওয়া গলায় বলল, কে তোমরা?
এনরয়েড দুটি কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। শক্তিশালী যান্ত্রিক হাত দিয়ে তাদের জাপটে ধরে–ক্রীনা একটি আর্তচিৎকার করার চেষ্টা করে, কিন্তু তার আগেই হঠাৎ করে কবজির কাছে একটা তীক্ষ্ণ খোঁচা অনুভব করে। পরমুহূর্তে তার। চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে।
জ্ঞান হারানোর পূর্বমুহূর্তে মনে হল হয়তো নিকিতা–পরিবারই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
০৮. বিশাল কালো একটা টেবিল
বিশাল কালো একটা টেবিলের একপাশে রুখ এবং ক্রীনা বসে আছে। টেবিলে তাদের ঘিরে ছয়টি বুদ্ধিমান এনরয়েড, তারা দেখতে মোটামুটি একই ধরনের কিন্তু ভালো করে তাকালে তাদের সূক্ষ্ম পার্থক্যটুকু চোখে পড়ে। কারো মাথা একটু বড়, কারো ফটোসেল একটু বেশি বিস্তৃত, কারো এনডাইজ দেহ একটু বেশি ধাতব। রুখ এবং ক্রীনার ঠিক সামনে একটা খালি চেয়ার, সেখানে কে বসবে কে জানে। মানুষের বসতে হয়– এনরয়েডদের যান্ত্রিক দেহের তো বসার প্রয়োজন নেই।
ক্রীনা রুখের দিকে একটু ঝুঁকে নিচু গলায় ফিসফিস করে বলল, রুখ, আমার ভয় করছে।
রুখ ক্রীনার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল, তোমার ফিসফিস করে কথা বলার প্রয়োজন নেই ক্রীনা। এখানে যেসব এনরয়েড আছে তারা তোমার দিকে তাকিয়েই তুমি কী ভাবছ বলে দিতে পারে। এদের কাছে আমাদের কিছু গোপন নেই। এরা আমাদের সবকিছু জানে।
সত্যি?
হ্যা সত্যি।
ক্রীনা এবারে স্বাভাবিক গলায় বলল, আমাদের এখানে বসিয়ে রেখেছে কেন?
নিশ্চয়ই কথা বলবে।
যদি আমাদের মনের সব কথা জানে তা হলে শুধু শুধু কথা বলার প্রয়োজন কী?
রুখ দুর্বলভাবে হাসল, বলল, জানি না।
খুব কাছে কে যেন নিচু গলায় হাসল। রুখ এবং ক্রীনা চমকে ওঠে, কে এটা?
খুব কাছে থেকে আবার গলার স্বর শোনা গেল, আমি।
আমি কে?
কণ্ঠস্বরটি আবার হেসে ওঠে, হাসি থামিয়ে বলে, কত সহজে তুমি কত কঠিন একটা প্রশ্ন করলে। সত্যিই তো, আমি কে?
রুখ কঠিন গলায় বলল, আপনারা আমাদের থেকে অনেক বুদ্ধিমান, দোহাই আপনাদের, পুরো ব্যাপারটি আমাদের জন্যে একটু সহজ করে দিন। আমরা মানুষেরা তো জেনেশুনে অপ্রয়োজনে একটা ক্ষুদ্র প্রাণীকে যন্ত্রণা দেই না।
আমি খুব দুঃখিত রুখ। সত্যি কথা বলতে কী, বুদ্ধিমত্তা সমান না হলে ভাব বিনিময় করা খুব কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি।
ধন্যবাদ।
প্রথমে আমি পরিচয় করিয়ে দিই। তোমাদের ঘিরে ছয় জন বুদ্ধিমান এনরয়েড বসে আছে। মানুষের যেরকম নাম থাকতে হয় এনরয়েডের বেলায় সেটা সত্যি নয়। কিন্তু তোমাদের সুবিধের জন্য আমরা সবার একটি নাম দিয়ে দিই। এরা হচ্ছে মেগা, জিগা, পিকো, ফ্যামটো, ন্যানো আর কিলো। তোমরা মানুষেরা যেরকম নাম রাখ সেরকম হল না। কিন্তু কাজ চলে যাবে। এর মাঝে পিকোকে রুথ ধ্বংস করেছিল আবার নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।
রুখ চমকে উঠে বলল, কী? কী বললেন?
হ্যাঁ। তোমার মনে নেই। ঘটনাটি খুব বড় ধরনের নির্বুদ্ধিতা ছিল তাই ফ্যামটো সেটি তোমার স্মৃতি থেকে মুছে দিয়েছে।
কিন্তু, আমি বুঝতে পারছি না। আমি একজন মানুষ হয়ে
মানুষ অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী–তাই বলে তারা যে নিচু স্তরের সরীসৃপ সাপের কামড় খেয়ে মারা যায় না সেটা সত্যি না
তা ঠিক।
হ্যাঁ। তোমার স্মৃতি থেকে সবকিছু যে মুছে দেওয়া গিয়েছে সেটা অবশ্য সত্যি নয়। তুমি লুকিয়ে কিছু তথ্য নিয়ে গিয়েছ। নিনীষ স্কেলে আট মাত্রার বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য সেটা নিঃসন্দেহে একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার। যা–ই হোক, যা বলছিলাম–এখানে তোমাদের থেকে দুই মাত্রা উপরের বুদ্ধিমত্তার এনরয়েড ছাড়া আমিও রয়েছি।
আপনি কে?
বলতে পার আমি সম্মিলিত এনরয়েডদের বুদ্ধিমত্তা। তোমাদের মানুষের এই ক্ষমতা নেই, তোমরা তোমাদের মস্তিষ্কের সুষম অবস্থান করে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পার না। আমরা পারি। অত্যন্ত প্রাচীন পদ্ধতি কিন্তু কার্যকর।