হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাস আছে বলে পুরো পৃথিবীকে আমি শাসন করতে যাচ্ছি।
দেখা যাবে কীভাবে তুমি পৃথিবীকে শাসন কর।
হাকশী সরু চোখে কামালের দিকে তাকাল। বলল, মানে? তুমি কী আমাকে ভয় দেখাচ্ছ?
হ্যাঁ, দেখাচ্ছি। কামাল গোয়ারের মত বলল, আমি সুযোগ পেলে তোমার টুঁটি চেপে ধরে…
হাকশীর অট্টহাসিতে সব শব্দ চাপা পড়ে গেল। কামালের পিঠ চাপড়ে হাসতে হাসতে বলল, সাবাশ ছেলে, সাবাশ! হাকশীর মুখে মুখে এরকম কথা বলার সাহস দেখিয়েছ, তার জন্যে কংগ্রাচুলেশান।
কামাল একটু চটে উঠে বলল, ঠাট্টা করছ?
মোটেও না। তোমাদের মতো সাহসী ছেলে আমি খুব কম দেখেছি। এখানে যাদের ধরে এনেছি, তাদের অনেকেই আমার টুটি চেপে ধরতে চায়। অথচ প্রথম কথাটি মুখ ফুটে বলার সাহস দেখালে তুমি। তোমার স্পষ্টবাদিতা দেখে ভারি খুশি হলাম। শোন ছেলেরা, তোমাদের নামটা কি জানি না, যাই হোক, তোমাদের আমি অনুমতি দিলাম—তোমরা ইচ্ছে করলে আমার টুটি চেপে ধরতে পার।
এখনই যদি ধরি।
ঐ দু’জন লোক তাদের ট্রিগার চেপে ধরলে অন্তত দুইশত বুলেট তোমাদের মোরর মতো কেচে ফেলবে। অন্য কখনো যদি সুযোগ পাও, আমাকে হত্যা করার। চেষ্টা করে দেখতে পার। আমি এটাকে তোমাদের শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ভাবব না।
সত্যি বলছ?
হাকশী মিথ্যা কথা বলে না।
৪. ঘুম ভাঙার পর
ঘুম ভাঙার পর জাহিদ অনেকক্ষণ বুঝতে পারল না কোথায় আছে, কেন আছে বা কীভাবে আছে। তারপর হঠাৎ করে সব মনে পড়ে গেল আর সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে বসল। হালকা আলো জ্বলছে আসবাবহীন ন্যাড়া একটা ধাতব ঘরে, মহাকাশযানে। যেরকম হয়। ফোবোস নামের সেই অদ্ভুত মহাকাশযানটি—পৃথিবীর লোকেরা যেটাকে ফ্লাইং সসার হিসেবে ভুল করেছে, সেটি রাত্রে এখানে এসে পৌঁছে দিয়েছে। প্লুটোনিক নামের এই অতিকায় মহাকাশ স্টেশনটি দেখেই চিনতে পারল জাহিদ। সব কয়টি দেশ মিলে যে-মহাকাশ ল্যাবরেটরি তৈরি করেছিল, যেটি দু বছর আগে খোয়া গিয়েছিল হারুন হাকশী সেটাকে প্লুটোনিক নাম দিয়ে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। মৃত্যুদেবতার নাম প্লুটো থেকে প্লুটোনিক। জাহিদের মনে হল নামটি ভালোই বেছে নিয়েছে। কিন্তু এই প্লুটোনিক পৃথিবী থেকে খুব বেশি একটা দূরে রয়েছে বলে মনে হল না; তবু পৃথিবীর যাবতীয় রাডারের সামনে এটি অদৃশ্য কেন সে বুঝতে পারল। নিশ্চয়ই এমন একটা কিছু করেছে, যার জন্যে রাডারের তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় না।
খুট করে একটা শব্দ হল। দরজা খুলে সন্তর্পণে কামাল এসে ঢোকে।
কি ব্যাপার, মরণ ঘুম দিয়েছিলি মনে হচ্ছে।
হুঁ। ভীষণ ঘুমালাম—খিদে লেগে গিয়েছে, খাবার দেবে কখন?
কে জানে বাপু! খেতে দেবে না খেয়েই ফেলবে কে জানে!
পাশের বাথরুমে জাহিদ হাত-মুখ ধুয়ে এসে দেখে, জেসমিনও এসে হাজির—কামালের পাশে বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। ভাগ্যচক্রে কোথায় এসে পড়েছে ভেবে ভেবে শীর্ণ হয়ে উঠেছে। জাহিদ জেসমিনকে চাঙ্গা করে তোলার চেষ্টা করে, কি ব্যাপার প্রাণিবিদ? খাঁচায় আটক প্রাণীগুলি নিয়ে গবেষণা শুরু করে দাও।
দিয়েছি।
কি দেখলে?
মহিলা প্রাণীটি এক সপ্তাহে পাগল হয়ে যাবে।
জাহিদ হা-হা করে হাসল, তারপর বলল, এত ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন। একটা কিছু করে ফেলব। হাসান স্যারকে দেখ নি, কী রকম ভয়ানক পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কী ভয়ানক সব কাজ করে ফেলেন–
হাসান স্যার হচ্ছেন হাসান স্যার।
কামাল বলল, আমরাও চেষ্টা করে দেখি। জাহিদ, তোর কি মনে হয় কিছু করা যাবে? একটা প্লানিং করলে হয় না?
এই সময় খুট করে দরজা খুলে গেল। একজন ইউরোপীয় মেয়ে হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে এসে ঢুকল, যন্ত্রের মতো খাবার সাজিয়ে আবার যন্ত্রের মতো বেরিয়ে গেল।
মহাকাশের বিশেষ ধরনের চৌকোণা খাবারের ব্লক।
খুঁটে খুঁটে খেতে খেতে জাহিদ বলল, ডিটেকটিভ বইতে পড়েছি বন্দিদের ঘরে লুকানো মাইক্রোফোন থাকে। এখানে নেই তো?
খুঁজে দেখলেই হয়।
কে কষ্ট করে খুজবে?
জাহিদ কামালের দিকে তাকিয়ে চোখ মটকাল, তারপর বলল, আমার মনে হয় এসব এখানে নেই। জাহিদ কী করতে চায় বুঝতে না পেরে কামাল অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকাল। জাহিদ চোখ মটকে বলল, তোের শার্টের একটা বোতামে যে এক্সপ্লোসিভটা লাগিয়ে রেখেছিলি, সেটা আছে তো?
কিছু না বুঝেই কামাল মিথ্যা কথাটি মেনে বলল, আছে।
বেশ। ওটা চালু কর, পাঁচ মিনিটের ভেতর সবাইকে নিয়ে প্লুটোনিক ধ্বংস হয়ে যাবে।
কামাল দাঁত বের করে হাসল, বুঝতে পেরেছে জাহিদ কী করতে চাইছে। যদি ঘরে মাইক্রোফোন থেকে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই এক্সপ্লোসিভটা উদ্ধার করার জন্যে পাঁচ মিনিটের ভিতর কেউ-না-কেউ ছুটে আসবে।
ওরা চুপচাপ বসে রইল, ঠিক পাঁচ মিনিটের সময় দরজা খুলে গেল। সেই ইউরোপীয়ান মেয়েটি আবার যন্ত্রের মতো ঢুকে নাস্তার প্লেট নিয়ে যন্ত্রের মতো বেরিয়ে গেল।
জাহিদ হেসে বলল, নিশ্চিন্তে প্লানিং করতে পারিস, ঘরে মাইক্রোফোন নেই।
ওরা বসে বসে পরিকল্পনা করার চেষ্টা করে, কিন্তু যেহেতু প্লটোনিক সম্পর্কে, এখানকার লোকজন, কাজকর্ম সম্পর্কে কোনো ধারণাই এখনো নেই, তাদের পরিকল্পনার কিছুই অগ্রসর হয় না।
ঘন্টা দুয়েক পরে একজন লোক এসে ওদের ডেকে নিয়ে গেল, হারুন হাকশী তাদের জন্যে নাকি অপেক্ষা করছে।
এই প্রথম ও প্লুটোনিক ঘুরে দেখার সুযোগ পেল। ঘর থেকে বেরিয়েই দেখে, লম্বা করিডোর, দুপাশে ছোট ছোট ঘর, প্লটোনিকের আবাসিক এলাকা। করিডোরের অন্য মাথায় ছোট একটা হলঘরের মতো, পাশেই লিফট। লিফটের পাশে একটা ছোট সুইচ-বক্সের সামনে একজন টেকনিশিয়ান কাজ করছে, আশপাশে ভ্রু-ড্রাইভার, নাট-বল্ট আর রেঞ্জ ছড়াননা।