তাই দেখছি। দুঃখ থেকে গেল তোমাদের দু’জনকে নিজের হাতে শেষ করতে পারলাম না। তা হলে দেখতাম কিভাবে হাসি বের হয়।
আমারও একই দুঃখ–তোমায় নিজহাতে মারতে পারলাম না।
হাকশী হো-হো করে হেসে উঠল—নিজহাতে বা পরের হাতে কোনোভাবেই হাকশীকে কেউ মারতে পারবে না
এক সেকেণ্ড হাকশী। একটা খুব জরুরি কথা মনে হয়েছে—
কি?
তোমায় বলেছিলাম না, প্লুটোনিকের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের ক্যাডমিয়াম রড কেটে ওটাকে অ্যাটম বোমা বানিয়ে দিয়েছি? আসলে একটা ছোট ভূল হয়ে গেছে। ফোবোস বলতে আমি ভুলে প্লুটোনিক বলে ফেলেছিলাম।
হাকশী ভয়ংকর মুখে বলল, মানে?
মানে প্লুটোনিকের রি-অ্যাক্টর ঠিকই আছে। ফোবোসের রি-অ্যাক্টর আসলে অ্যাটম বোমা হয়ে গেছে। তুমি তোমার দলবল নিয়ে অ্যাটম বোমার উপর বসে আছ! এক্ষুণি ফাটবে ওটাদশ পর্যন্ত গোনার আগে।
প্রচণ্ড ক্রোধ, দুঃখ, হতাশা আর আতঙ্কে হাকশীর মুখ ভয়াবহ হয়ে উঠল। কী যেন বলতে চাইল গলা দিয়ে শব্দ বেরুল না। আবার কী যেন বলতে চাইল-তারপর বিকৃত মুখে হাঁটু ভেঙে সে ফোববাসের ভিতরে পড়ে গেল—
টেলিভিশনের পর্দা হঠাৎ করে কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেল। ঝুলিয়ে রাখা কাউন্টারগুলি ক-ক শব্দ করে বুঝিয়ে দিল, কাছাকাছি কোথাও একটা পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটেছে।
জাহিদ একটা নিঃশ্বাস ফেলে কামালের দিকে তাকাল। তারপর দুজনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে হাসল।
বেচে গেলাম তা হলে! আমরা বেঁচে গেলাম, পৃথিবীও বেঁচে গেল।
যাই বলিস না কেন, অভিনয়টা দারুণ হয়েছিল। বিশেষ করে ঐ পাগলের মতো হেসে উঠে তুই যখন বললি—
থাক, আর বলতে হবে না। তুই নিজেও কিছু কম করিস নি!
দু’জনে হো-হো করে হেসে উঠে জেসমিনের কাছে এগিয়ে যায়। পূটোনিকের সবাই তখন ওদের কাছে ছুটে আসছে—প্লুটোনিক কীভাবে রক্ষা পেল এবং হাকশী কীভাবে ধ্বংস হল জানার জন্যে।
কামাল আর জেসমিনকে সবার অভিনন্দন নেয়ার দায়িত্ব দিয়ে জাহিদ হাকশীর নিজের ঘরে চলে এসেছে। এখানে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে, যেটা এতদিন শুধুমাত্র হাকশী নিজে ব্যবহার করতে পারত।
সুইচ অন করে জাহিদ চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকে। পৃথিবী থেকে প্রায় দু’ কোটি মাইল দূরে, কাজেই মিনিট চারেক সময় লাগবে। বাইরে আনন্দ ঘূর্তির ঢেউ বইছে। বন্ধ ঘরেও মাঝে মাঝে চিৎকারের শব্দ চলে আসছিল। জাহিদ আপন মনে। হাসে—কিছুক্ষণের মাঝে কামালের মতো একটা কাঠগোঁয়ার লোক পপুলার হিরো হয়ে গেছে।
স্ক্রীনে আবছা পৃথিবীটা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে থাকে। জাহিদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে—পৃথিবী। তার সাধের পৃথিবী। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কী-এক অজানা আবেগে ওর বুকের ভেতর যন্ত্রণা হতে থাকে, চোখে পানি জমে আসে।
ঘরে কেউ নেই, তবু জাহিদ এদিক-সেদিক তাকিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলল। তারপর মাইক্রোফোনটা টেনে নিল নিজের দিকে।
————–
পরিশিষ্ট
১। নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর : পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহার করার জন্যে যেখানে নিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটানো হয়।
২। রাডার : বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে দূরবর্তী কোনো বস্তুকে খুঁজে বের করার পদ্ধতি।
৩। ফ্লাইং সসার : অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসা বিশেষ ধরনের মহাকাশযান সম্পর্কিত আলোচিত গুজব। পিরিচের মতো আকৃতি বলে নাম ফ্লাইং সসার।
৪। লেসার : প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী আলোকরশ্মি।
৫। আইসোটোপ : একই পরমাণুর বিভিন্ন উক্লিয়াস, যেখানে প্রােটনের সংখ্যা সমান, কিন্তু নিউট্রনের সংখ্যা বিতি।
৬) ক্রিটিক্যাল মাস : বিশেষ ধরনের নিউক্লিয়াস; যে-নির্দিষ্ট ভরে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়।
৭। ভাইরাস : নিচুস্তরের অত্যন্ত ক্ষুদ্রকায় জীব। অনেক ভয়াবহ রোগ বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে ‘ঘটে খাকে।
৮। চেইন রি-অ্যাকশান : একটি নিউক্লিয়াস ভা ভা থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক নিউক্লিয়াস ভেঙে পারমাণবিক শক্তি পাওয়ার নিরবচ্ছিন্ন পদ্ধতি।