দাঁড়াও।
জাহিদের গলার স্বর শুনে হাকশী থমকে দাঁড়াল। বলল, কি?
ফোবোসে কামালের সাথে আমি আর জেসমিনও যাব—তুমি ওটা চালু করে আমাদের পৃথিবীতে রেখে আসবে।
হাকশী এমন ভান করল, যেন কথাটি বুঝতে পারে নি।
আমার কথা বুঝেছ?
না। হাকশী ধূর্তের মতো হাসল। তোমাদের সত্যি সত্যি পৃথিবীতে রেখে আসব, এ ধারণা কেমন করে হল।
কামাল চমকে উঠে বলল, মানে?
মানে খুব সহজ। হাকশীর মুখ নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। তোমাদের সাহস খুব বেড়ে গেছে—ভেবেছিলে আমাকে ভয় দেখিয়ে কাজ উদ্ধার করবে। হাকশী ভয় পেতে অভ্যস্ত নয়। যদি কেউ ভয় দেখাতে চায়–
স্কাউণ্ড্রেল! কামাল তীব্র স্বরে চিৎকার করে উঠল, বেঈমান, মিথ্যুক।
কামাল। হাকশী সরু চোখে ওর দিকে তাকাল, তোমার ঔদ্ধত্যের শাস্তি তুমি পাবে আমি নিজের হাতে তোমায়–
হঠাৎ কামাল পাগলের মতো হেসে উঠল। বিকৃত মুখে হাসতে হাসতে বলল, হাকশী। নিজেকে খুব বুদ্ধিমান ভেবেছ? ভেবেছিলে আমরা তোমায় বিশ্বাস করেছি? আমরা–
জাহিদ হঠাৎ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চিৎকার করে উঠল, কামাল।
কামাল জাহিদের দিকে তাকাল এবং তারপর চুপ করে গেল। শুধু ওর মুখ থেকে হাসিটি মুছে গেল না, বরং আরো বিস্তৃত হয়ে উঠতে লাগল।
কামাল কী বলতে চাইছিল হাকশী বুঝতে পারল না। এক পা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী বলছিলে?
কিছু না।
হাকশীর চোখ ধক করে জ্বলে উঠল। তুমি বলছিলে তোমরা আমায় বিশ্বাস কর নি। তার মানে নিশ্চয় কিছু-একটা করেছ। বল কি করেছ?
বলব না।
তার মানে কিছু-একটা করেছ?
না।
হাকশীর চেহারা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ছোট হয়ে যাওয়া সিগারেটটাকে হাতে নিয়ে সে জেসমিনের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর জেসমিনের চুল মুঠি করে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে—কিছু বোঝার আগেই সে তার গালে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে
জেসমিন আর্তচিৎকার করে উঠল—কামাল ঝাপিয়ে পড়তে চাইছিল, কিন্তু তার আগেই তাকে দু’দিক থেকে ধরে ফেলল হাকশীর দেহরক্ষীরা।
বন্ধ কর—বন্ধ কর হারামজাদা–আমি বলছি!
হাকশী সিগারেটটা সরিয়ে নেয়—কামাল অপ্রকৃতিস্থের মতো বলল, শুধু তুই শুনবি! অন্যদেরও ডাক–
আমি শুনলেই চলবে। তুমি বল।
কামাল জাহিদের দিকে তাকাল, বলল, জাহিদ, বলেই দিই। কোনো ক্ষতি হবে না, সময় তো নেইও কিছু করতে চাইলেও করতে পারবে না।
জাহিদ চিন্তিত মুখে বলল, বলতে তো হবেই। নইলে বেচারি জেসমিন শুধু শুধু কষ্ট পাবে। ঠিক আছে, আমি বলছি।
জাহিদ হাকশীর দিকে তাকিয়ে হাসল। বলল, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর কীভাবে কাজ করে নিশ্চয়ই তুমি জান। চেইন রিঅ্যাকশান কন্ট্রোল করার জন্যে ক্যাডমিয়াম রড থাকে। কেউ যদি ক্যাডমিয়াম রড় কেটে ছোট করে দেয় তাহলে কি হবে, জান নিশ্চয়ই। চেইন রি-অ্যাকশান শুরু হবে ঠিকই, কিন্তু কন্ট্রোল করা যাবে না। যে চেইন রি-অ্যাকশান কন্ট্রোল করা যায় না, তাকে বলে অ্যাটম বোমা।
কি বলতে চাইছ তুমি—তোমরা রি-অ্যাক্টরে–
হ্যাঁ, আমরা প্লুটোনিকের রি-অ্যাক্টরের ক্যাডমিয়াম রড কেটে ছোট করে দিয়েছি। কাজেই এই রি-অ্যাক্টরটা আসলে একটা অ্যাটম বোমা হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে হিসেব করে বের করতে হয়েছে, ঠিক কতটুকু কেটে নিলে দশ মিনিট পরে বিস্ফোরণটি ঘটে। বন্ধ করার উপায় নেই তার আগেই দশ মিনিট পার হয়ে যাবে।
দশ মিনিট? হাকশী ঘড়ির দিকে তাকাল তারপর জাহিদের দিকে তাকাল তীব্র চোখে, সান অব বিচ! ব্লক হেডেড় ফুল–
কেন মিছিমিছি গালিগালাজ করছ। এখন সবাই মিলে মারা যাব, মাথা-গরম করে লাভ কি। অনেক লোক মেরেছ তুমি হাকশী পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তুমি অনেক মহাকাশযান ধ্বংস করেছ—এখন দেখ, মরতে কেমন লাগে! আর দুইএক মিনিট, তারপর তুমি তোমার দলবল নিয়ে চলে যাবে নরকে আর আমরা স্বর্গে!
হঠাৎ হাকশী ধরে রাখা জেসমিনকে ছেড়ে দিয়ে দু’পা এগিয়ে গেল, তারপর চিৎকার করে দেহরক্ষীদের বলল, আমার যারা লোকজন রয়েছে তাদের খবর দিয়ে দশ সেকেণ্ডের ভেতর ফোবোসে চলে আস—আমরা ফোবোসে করে এক্ষুণি প্লুটোনিক ছেড়ে চলে যাব।
কামাল হিংস্রভাবে বলল, না—তুই কিছুতেই ফোবোস চালু করতে পারবি —ওটা চালু হতে অন্তত পাঁচ মিনিট সময় নেয়—
হাকশী কামালের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কিছুই জান না ছোকরা। ফোবোস পাঁচ সেকেণ্ডে চালু করা যায়। তোমরা মর—নিজেদের তৈরি অ্যাটম বোমায় নিজেরা মরে শেষ হয়ে যাও! আমি বেঁচে থাকতে জন্মেছি শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকব।
সে দ্রুত ছুটে গেল সিড়ি বেয়ে ফোবোসের দিকে।
জাহিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল—জেসমিন মুখ ঢেকে বসে পড়ল সেখানে।
তিরিশ সেকেণ্ডের ভেতর হাকশী তার নিজের লোকজন নিয়ে ফোববাসে করে পালিয়ে গেল। প্লুটোনিকে রয়ে গেল শুধুমাত্র বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা নির্দোষ নিরীহ বিজ্ঞানী আর টেকনিশিয়ানরা। প্লুটোনিক আর এক মিনিটের ভেতর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে খবর পেয়ে অধিকাংশ লোকই পাগলের মতো হয়ে গেছে। হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মতো দাপাদাপি করছে অনেকে। অল্প কয়জন হাটু গেড়ে শেষবারের মতো প্রার্থনা করছে—চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে টপটপ করে।
দেয়ালে টাঙানো মস্ত স্ক্রীনটা হঠাৎ আলোকিত হয়ে সেখানে হাকশীর চেহারাটা ফুটে উঠল। ফোবোস থেকে সে প্লুটোনিকের সাথে যোগাযোগ করেছে।
মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে তোমাদের কেমন দেখায় তাই দেখতে চাইছি।
দেখ—জাহিদ হাকশীর দিকে তাকিয়ে হাসল। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে আমি কেমন হাসতে পারি, দেখেছ?