আর আমরা?
তোমরা? হাকশীর মুখে ধূর্ত একটা হাসি ফুটে উঠল। তোমাদের ব্যাপার পরে। ভোমাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ! সেগুলি বিচার না করে কিছু বলতে পারব না।
দেখ হাকশী, জাহিদ নরম সুরে বলল, তুমি তো দেখলে আমাদের ক্ষমতা কতটুকু ফ্রিপসির মত কম্পিউটারকে ঘোল খাইয়ে প্লুটোনিক প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। নেহায়েত জেসমিনের জন্যে শেষরক্ষা করতে পারলাম না। ঠিক কি না?
হাকশী স্বীকার করল যে, সত্যিই তা হতে যাচ্ছিল।
এবারে আমি আর কামাল যদি সুযোগ বুঝে নিজেদের ডান হাতের শিরাটা কেটে দিই তাহলে কেমন হয়?
মানে?
মানে আমরা যদি সুইসাইড করি তাহলে তোমার প্লুটোনিকের অবস্থাটা কী হয়?
কে আর ইচ্ছে করে আত্মহত্যা করতে চায়। তবে প্লুটোনিকের রি-অ্যাক্টর ঠিক করে দেয়ার পর আমাদের যদি তুমি বিচারের নাম করে শেষ করে ফেল, তা হলে আগেই সুইসাইড করে ফেলাটা কি ভালো নয়? তাতে আমরাও মরব; তুমি তোমার দলবল নিয়ে মরবে। জেসমিনও মারা যাবে তবে অত্যাচারটা সহ্য করতে হবে না। আমরাই যদি না থাকি, কাকে ভয় দেখানোর জন্যে ওর উপর অত্যাচার করবে?
হাকশী খানিকক্ষণ ভাবল। তারপর গম্ভীর মুখে বলল, কি চাও তাহলে তোমরা?
আগে কথা দাও, রি-অ্যাক্টর ঠিক করে দেয়ার পরমুহূর্তে আমাদের তিনজনকে পৃথিবীতে ফেরত দিয়ে আসবে, তা হলেই আমরা কাজ শুরু করব।
হাকশী সরু চোখে জাহিদের দিকে তাকিয়ে থেকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, বেশ, কথা দিলাম।
তোমার কথায় বিশ্বাস করব কেমন করে?
সেটা তোমাদের ইচ্ছে। কিন্তু আমার কথাকে বিশ্বাস না করলে আর কিছু করার নেই।
জেসমিন হঠাৎ চিৎকার করে বলল, ওর কথা বিশ্বাস করো না। খবরদার, ওর কথা বিশ্বাস করো না—
কিন্তু জাহিদ আর কামাল হাকশীর কথা বিশ্বাস করল, কারণ এ ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।
৬. এক সপ্তাহ সময় শেষ হয়ে গেছে
এক সপ্তাহ সময় শেষ হয়ে গেছে। আর ঘন্টাখানেক পরে জাহিদের হাকশীকে সবকিছু ঠিক করে বুঝিয়ে দেয়ার কথা। এই একটি সপ্তাহ জাহিদ আর কামাল প্রায় জন ত্রিশেক টেকনিশিয়ানকে নিয়ে কাজ করেছে। যদিও রি-অ্যাক্টরের ত্রুটিটি ছিল সাধারণ, কিন্তু কামাল টেকনিশিয়ানদের সাহায্যে পুরো রি-অ্যাক্টর সম্পূর্ণ টুকরো টুকরো করে খুলে ফেলেছে, তারপর আবার জুড়ে দিয়েছে। ঠিক কোথায় কি জিনিসটি সারা হল, কোনো টেকনিশিয়ান বুঝতে পারে নি। বোঝার দরকারও ছিল না।
এই দীর্ঘ সময়টিতে জাহিদ একটা স্কুও হাত দিয়ে নেড়ে দেখে নি। সে বসে বসে দিস্তা দিস্তা কাগজে কী-একটা অঙ্ক কষে গেছে। অঙ্কটির আকার-আকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, কম্পিউটারে কষা উচিত ছিল কিন্তু এখানে সে কম্পিউটার পাবে কোথায়? তা ছাড়া অঙ্কটি সে কাউকে দেখাতে চায় না। ছয়দিনের মাথায় সে শুধু কামালকে একটা চিরকূটে কয়েকটা সংখ্যা লিখে দিল। সে-রাত্রে কামাল সব টেকনিশিয়ানকে ছুটি দিয়ে একা একা অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেছে। প্রথমে প্লুটোনিকের রিঅ্যাক্টরে, পরে ফোবোসের রি-অ্যাক্টরে। কি করেছে সেই জানে।
ফ্রিপসি অচল বলে হাকশী জাহিদ আর কামালের কাজকর্মে নাক গলাতে পারছিল না। কিন্তু সে গলাতে চাইছে না। জেসমিনের খাতিরে এরা দু জন যে রি-অ্যাক্টর দুটি ঠিক করে দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কখন কি করছে না-করছে সে তাতে উদ্বিগ্ন হল না। সে শুধুমাত্র ভয় পাচ্ছিল এই অসহায় অবস্থায় পৃথিবীর মানুষ যদি তাকে আক্রমণ করে বসে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তার প্লটোনিক আর ফোবোস—দুটিই পৃথিবীর রাডারের চোখে অদৃশ্য। সব রকম বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ এরা শোষণ করে নিতে পারে।
নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগেই কামাল আর জাহিদ হাকশীকে ডেকে পাঠাল। হাকশী হাসিমুখে সিগারেট টানতে টানতে হাজির হল, সামনে-পিছে দেহরক্ষী। ইদানীং এসব ব্যাপারে সে খুব সাবধান। কামাল কালিঝুলি মেখে শেষবারের মতো সবকিছু দেখে নিচ্ছিল–হাকশীকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল।
সব ঠিক হয়েছে?
কামাল হাকশীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, আগে জেসমিনকে ছেড়ে দাও। তারপর–
হাকশী পকেট থেকে চাবি বের করে ছুঁড়ে দিল একজনকে জেসমিনকে ঘর খুলে নিয়ে আসার জন্যে। মিনিটখানেকের ভেতরই জেসমিনকে নিয়ে সে ফিরে এল। এ কয় দিনে জেসমিন বেশ শুকিয়ে গেছে। রুক্ষ চুল, চোখের কোণে কালি। চেহারায় আতঙ্কের একটা ছাপ পাকাপাকিভাবে পড়ে গেছে।
হাকশী কামালকে বলল, বেশ, এবারে দেখাও।
কামাল এতটুকু না নড়ে বলল, তুমি আমাদের কি কথা দিয়েছিলে মনে আছে?
কি কথা?
প্লুটোনিক আর ফোবোসের রি-অ্যাক্টর দু’টি ঠিক করে দিলে আমাদের তিন জনকে ছেড়ে দেবে।
বলেছিলাম নাকি! কামাল মুখ শক্ত করে বলল, হ্যাঁ, বলেছিলে।
বলে থাকলে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেব—তার আগে আমাকে দেখাও তোমরা রিঅ্যাক্টর দু’টি ঠিক করেছ।
দেখাচ্ছি। কিন্তু আমাদেরকে ছেড়ে দেবে তো?
সে দেখা যাবে বলে হাকশী এগিয়ে গিয়ে কামালকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সুইচ প্যানেলের সামনে দাঁড়ায়। বিভিন্ন সুইচ অন্ করে সে রি-অ্যাক্টরটি চালু করার আয়োজন করে।
মিনিট তিনেকের ভেতরই রি-অ্যাক্টর চালু হয়ে ঘরে ঘরে তীব্র উজ্জ্বল আলো জ্বলে ওঠে, এয়ার কণ্ডিশনারের গুঞ্জন শোনা যায়, প্লুটোনিকে প্রাণ ফিরে আসে।
হাকশীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। সবকিছু পরীক্ষা করে সে ভারি খুশি হয়ে ওঠে। কামালের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলে, ভালোকাজ করেছ হে ছেলে! এবারে চল ফোবাসটি দেখে আসি।