হঠাৎ করে আমার মাথা ঘুরে উঠল, আমি পড়েই যাচ্ছিলাম, কোনোমতে দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিয়ে বসে পড়ার চেষ্টা করলাম। বড় একটা আলমারি ধরে তার পাশে বসে পড়লাম, মনে হচ্ছে এখনই অজ্ঞান হয়ে যাব।
ঠিক এই সময় ঘরটাতে দুর্দানা বেগম আর গনি সাহেব এসে ঢুকল। আলমারির আড়ালে ছিলাম বলে তারা আমাকে দেখতে পেল না কিন্তু আমি তাদের দেখতে পেলাম। তারা পুরো ঘরটিতে চোখ বুলিয়ে অ্যাকুরিয়ামের দিকে তাকাল, বাচ্চাটা সাতরে ওপরে উঠে ভুশ করে মাথা বের করে আবার নিচে নেমে এল। আমি নিশ্চিত ছিলাম দুর্দানা বেগম এখন গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দেবে কিন্তু সে চিৎকার দিল না। দুজনেই অ্যাকুরিয়াম থেকে তাদের চোখ সরিয়ে ল্যাবরেটরির অনা কোনায় নিয়ে গেল। তারা নিজের চোখে দেখেও বিষয়টা বুঝতে পারছে না, ধরেই নিয়েছে অ্যাকুরিয়ামে একটা মাছ সাঁতার কাটছে। কী আশ্চর্য ব্যাপার!
দুর্দানা বেগম বলল, আপনার বাসায় একটা বাচ্চা অথচ আপনার ঘরবাড়ি এত নোংরা?
শুধুমাত্র অনিক পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারছে, সে নিশ্চয়ই নিজের চোখকে বিশ্বাস। করছে না। উত্তরে কোনো একটা কথা বলার চেষ্টা করে বলল, ক-ক-করব। পপ-পরিষ্কার করব।
গনি সাহেব নাক দিয়ে ফোঁৎ করে শব্দ করে বলল, আপনার মোটা বন্ধুটা বাচ্চাটাকে নিয়ে আসছে না কেন?
অনিক বলল, আ-আ-আনবে। আপনারা বাইরের ঘরে বসেন। এ-এ-এক্ষুনি নিয়ে আসবে।
দুর্দানা বেগম আর গনি সাহেব ঘর থেকে বের হতেই আমি কোনোমতে উঠে আবার অ্যাকুরিয়ামে হাত ঢুকিয়ে ফিসফিস করে বাচ্চাটাকে উদ্দেশ করে বললাম, দোহাই লাগে তোমার সোনামণি। আল্লাহর কসম লাগে তোমার কাছে আল! প্লি-ই-জ!।
এত চেষ্টা করে যে বাচ্চাটাকে ধরতে পারি নি সেই বাচ্চা হঠাৎ সঁতরে এসে দুই হাত দুই পা দিয়ে আমার হাতটাকে কোলবালিশের মতো ধরে ফেলল। আমি পানি থেকে বাচ্চ আঁকড়ে ধরে রাখা হতিষ্টা বের করে, বাচ্চাটাকে তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। এর আগে কখনো ছোট বাচ্চা ধরি নি, তাই খুব সাবধানে দুই হাতে ধরে বাইরে নিয়ে এসে দাঁড়ালাম।
দুর্দানা বেগম ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বাচ্চাকে গোসল করাতে গিয়ে দেখি নিজেই গোসল করে ফেলেছেন।
গনি সাহেব বলল, ছোট বাচ্চাকে পানির কাছে নেবার সময় খুব সাবধান।
দুর্দানা বেগম বলল, কিছুতেই যেন পানিতে পড়ে না যায়।
আমি মাথা নাড়লাম, পড়বে না। কখনো পড়বে না।
দুর্দানা বেগম আর গনি সাহেব দুজনেই ভুরু কুঁচকে মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু যেই আমি তোয়ালেটা সরিয়ে বাচ্চাটাকে দেখালাম দুজনের মুখ হঠাৎ করে নরম হয়ে গেল। দুজনেই বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রইল, আর কী আশ্চর্য, বাচ্চাটা জিব বের করে দুজনকে ভেংচে দিল!
গনি সাহেব দুর্দানা বেগমের দিকে আর দুর্দানা বেগম গনি সাহেবের দিকে তাকাল। তারপর দুজনেরই সে কী হাসি! মনে হয় সেই হাসিতে ঘরের ছাদ উড়ে যাবে।
এই পৃথিবীতে ছোট বাচ্চা থেকে সুন্দর কিছু কি আর আছে?