আমি মাথা নাড়লাম। বললাম, করব।
আমি অবিশ্যি দুর্দানা বেগমের সাথে যোগাযোগ না করে অনিকের বাসায় ফিরে। গেলাম। এখনো অনিকের গেট খোলা এবং দরজা খোলা। ঢকে দেখি ভেতরে লাবরেটরি ঘরে একটা বড় টেবিলে একটা বিশাল অ্যাকুরিয়ামের মাঝে অনিক পানি ভরছে। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, কী করছ?
অ্যাকুরিয়ামে পানি ভরছি।
সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। আমি জানতে চাইছি কেন এরকম সময়ে ল্যাবরেটরি ঘরের মাঝখানে একটা অ্যাকুরিয়াম, আর কেন এরকম সময়ে এখানে পানি ভরছ?
অনিক আমার কথার উত্তর না দিয়ে হাসিমুখে তাকাল। আমি বললাম, বাচ্চাটা কোথায়?
ঘুমাচ্ছে। একটা ছোট বাচ্চা বেশিরভাগ সময় ঘুমায়। পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক সত্য।
কোথায় ঘুমাচ্ছে?
এই যে। আলমারিতে।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম আলমারির একটা তাক খালি করে সেখানে কয়েকটা টাওয়েল বিছিয়ে বিছানা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে এইটুকুন একটা বাচ্চা তার পিছনটুকু ওপরে তুলে মহা আরামে ঘুমাচ্ছে। এরকমভাবে একটা বাচ্চা ঘুমাতে পারে নিজের চোখে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না।
অনিক বলল, ছোট বাচ্চাদের তিনটা কাজ–খাওয়া, ঘুম এবং বাথরুম। সে তিনটাই করে ফেলেছে। বাচ্চাটা অত্যন্ত লক্ষ্মী। অনিক হঠাৎ করে ঘুরে আমার দিকে তাকাল, বলল, তুমি হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেলে?
আমি রাগ হয়ে বললাম, আমার কী হল না হল সেটা নিয়ে তোমার খুব মাথাব্যথা আছে বলে তো মনে হল না।
অনিক একটু অবাক হয়ে বলল, তোমার কিছু হয়েছে নাকি?
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, হয় নি আবার? হাজত খেটে এসেছি।
অনিক মুখ হাঁ করে বলল, হাজত খেটে এসেছ। কেন?
আমি রাগে গরগর করে বললাম, তোমার লক্ষ্মী বাচ্চার জন্যে।
লক্ষ্মী বাচ্চার জননা?
হ্যাঁ।
কেন?
কারণ আমি জানি না তোমার লক্ষ্মী বাচ্চা কেমন করে এখানে এসেছে, কেন এসেছে এবং কখন এসেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমি জানি না তোমার লক্ষ্মী বাচ্চাটি ছেলে না মেয়ে।
সে কী! তুমি জান না?
না।
কী আশ্চর্য! অনিক অ্যাকুরিয়ামের পানি ভরা বন্ধ করে আমার কাছে এসে আমায় হাত ধরে টেনে আলমারির কাছে নিয়ে গেল। বাচ্চাটাকে দেখিয়ে বলল, এর মুখের দিকে তাকাও! দেখছ না এটি একটি মেয়ে। কী সুইট চেহারা দেখছ না? একটা মেয়ে না হলে কখনো চেহারা এরকম সুইট হতে পারে?
ঘুমের ভেতরে বাচ্চারা হাসাহাসি করে আমি জানতাম না, অবাক হয়ে দেখলাম ঠিক এরকম সময়ে বাচ্চাটি তার মাঢ়ী বের করে একটু হেসে দিল। তখন আমার কোনো সন্দেহ থাকল না যে এটি নিশ্চয়ই একটা মেয়ে। বললাম, ঠিকই বলেছ। নিশ্চয়ই মেয়ে। তবে–
তকে কী?
কাপড় খুলে একবার দেখে নিলে হয়।
অনিক বলল, হ্যাঁ। সেটাও দেখেছি।
গুড। এসব ব্যাপারে শুধু চেহাবার ওপরে ভরসা না করে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো।
অনিক আবার তার অ্যাকুরিয়ামের কাছে গিয়ে পানি ভবতে ভরতে বলল, সকালবেলা উঠেই তোমার এত ঝামেলা। আমার খুব খারাপ লাগছে শুনে।
এখন খারাপ লেগে কী হবে? তবে আমার একটা অভিজ্ঞতা হল!
সেভাবেই দেখ। নতুন অভিজ্ঞতা। জীবনে অভিজ্ঞতাই হচ্ছে বড় কথা।
আমি আলোচনাটা অভিজ্ঞতা থেকে অ্যাকুরিয়ামে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম, জিজ্ঞেস করলাম, এখন বলো এত বড় অ্যাকুরিয়ামে পানি ভরছ কেন?
অনিক একটু ইতস্তত করে বলল, একটা পরীক্ষা করার জন্যে।
কী পরীক্ষা করবে?
ছোট বাচ্চারা নাকি জন্মাবার পর সাঁতার কাটতে পারে।
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, অবাক হয়ে বললাম, সাঁতার কাটতে পারে?
হ্যাঁ। পরীক্ষা করে দেখা গেছে ছোট বাচ্চাদের জন্মের পরপর পানিতে ছেড়ে দিলে তারা সাঁতার কাটতে পারে।
এবারে পানির অ্যাকুরিয়ামের রহস্য খানিকটা পরিষ্কার হল। আমি বললাম, তুমি এই বাচ্চাটাকে পানির মাঝে ছেড়ে দিতে চাও?
অনিক মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই এটা সত্যি কি না।
আমি মুখ হাঁ করে কিছুক্ষণ অনিকের দিকে তাকিয়ে রইলাম, তারপর বললাম, তুমি বলতে চাও যে এই ছোট বাচ্চাটাকে এই পানির মাঝে ফেলে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখবে সে সাতার কাটতে পারে কি না?
হ্যাঁ।
তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়েছে।
না, না, তুমি যা ভাবছ—
আমি অনিককে বাধা দিয়ে বললাম, তুমি যদি ভালো একটা গেদা বাচ্ছাকে পানিতে ফেলে দিয়ে তাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবে আর আমি বসে বসে সেটা দেখব, তা হলে জেনে রাখ তুমি মানুষ চিনতে ভুল করেছ।
অনিক বলল, আরে আগে তুমি আমার কথা শোন।
তোমার কোনো কথা আমি শুনব না। তুমি যদি এই মুহূর্তে এই ছোট বাচ্চাকে পানিতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা বন্ধ না কর তা হলে প্রথমে আমি গনি সাহেবকে তারপর দুর্দানা বেগমকে ফোন করব।
অনিক বলল, এরা কারা?
গনি সাহেব হচ্ছে আমার থেকেও মোটা একজন পুলিশ অফিসার। আমি তার কাছে জিডি করাতে গিয়েছিলাম, বাচ্চাটা ছেলে না মেয়ে বলতে পারি নাই বলে আমাকে হাজতে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
আর দুর্দানা বেগম?
দুর্দান বেগমের ভালো নাম হওয়া উচিত দুর্দান্ত বেগম। কারণ এই মহিলার হুঙ্কার শুনলে ছোট বাচ্চাদের কাপড়ে পিশাব হয়ে যায়। সে ছোট ছোট বাচ্চাদের একটা হোম চালায়। তাকে খবর দিলে সে এসে তোমার গলা টিপে ধরবে।
অনিক বলল, তুমি বেশি উত্তেজিত হয়ে গেছ। একটু শান্ত হও।
আমি হুঙ্কার দিয়ে বললাম, আমি মোটেই উত্তেজিত হই নাই–
আমার হুঙ্কার শুনে বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠে ট্যাঁ ট্যাঁ করে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। অনিক কুলল, দিলে তো চিৎকার করে বাচ্চাটাকে তলে–