কী করবে তাহলে?
একটা স্কাউটশিপ পাঠাতে হবে।
সুশান একটা নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে যায়। সে মনে মনে এই ভয়টাই করছিল, হয়তো লু আরো একদিন থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করবে।
লু রু-টেকের দিকে তাকিয়ে বলল, রু, তুমি একটা স্কাউটশিপ পাঠানোর ব্যবস্থা কর, ঘন্টাখানেকের মাঝে যেন রওনা দিয়ে দেয়, খুব ধীরে ধীরে নামাবে, গ্রহে কোনো প্রাণী থাকলে তারা যেন দেখে ভয় না পায়। নীষা, তুমি কয়েকটা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কোড দিয়ে দাও সবগুলি যেন বলতে থাকে, আমরা বন্ধুত্ব চাই, শান্তি চাই বা এই ধরনের কোনো একটা গালভরা কথা। স্কাউটশিপটা ট্রাইটনে নেমে যেন ভিন্ন ভিন্ন স্তর থেকে খানিকটা করে মাটি তুলে আনে। ফিরে এসে স্কাউটশিপটাকে সিসিয়ানে সোজাসুজি চলে আসতে দিও না, শ’খানেক কিলোমিটার দূরে অপেক্ষা করাবে। সুশান আর পল কুম, তোমরা ঠিক কর স্কাউটশিপের ভিতরে আর কি দেয়া যায়, ট্রাইটনে নেমে ঠিক কী ধরনের পরীক্ষা করা দরকার।
সুশান ভয়ে ভয়ে বলল, কেউ কি যাবে এই স্কাউটশিপে করে?
লু হেসে বলল, আরে না! মাথা খারাপ তোমার? মানুষ হচ্ছে অমূল্য সম্পদ, তাদের নিয়ে কখনো ঝুঁকি নেয়া যায় না।
টেবিল থেকে উঠে গিয়ে স্বচ্ছ জানালার পাশে দাঁড়াল। গ্রহটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বলল, কিম, তুমি ঠিকই বলেছ, গ্রহটাকে দেখলে মনে হয় এটা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কী বীভৎস ব্যাপার!
সবাই ঘুরে লু’য়ের দিকে তাকায়, কেউ কিছু বলে না। লু একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, আমি তোমাদের ভয় দেখাতে চাচ্ছি না, মনে হল তাই বললাম। একটু থেমে যোগ করল, আমি আমার ঘরে সিডিসির সাথে দাবাটা শেষ করে ফেলি, কিছু দরকার হলে আমায় ডেকো।
বুঝলে সিডিসি, দাবা হয়তো তুমি মন্দ খেল না, কখনো তোমাকে আমি হারাতে পারি নি, লু হাতিটা এক ঘর পিছিয়ে এনে বলল, কিন্তু তোমার সাথে দাবা খেলে আরাম নেই। তুমি বড় চিন্তা করে খৈল, কখনো ভুল কর না।
উত্তরে বিপবিপ শব্দ করে সিডিসি কিছু একটা বলল, লু সেটা বুঝতে পারল না, বোঝার খুব-একটা ইচ্ছে আছে সে-রকম মনেও হল না। মন্ত্রীটা এগিয়ে দেবে কি না চিন্তা করতে করতে বলল, তোমার সাথে কথা বলে মজা আছে, আমার কিছু শুনতে হয় না, শুধু বলে গেলেই হয়।
আবার বিপবিপ করে একটা শব্দ হল।
দাবা খেলা কে আবিষ্কার করেছিল জান?
বিপবিপ।
নিশ্চয়ই জান, কম্পিউটার জানে না এরকম জিনিস কি কিছু আছে? এক দেশে থাকত এক রাজা আর এক মন্ত্রী। সেই মন্ত্রী ভদ্রলোক দাবা খেলা আবিষ্কার করে রাজাকে সেটা উপহার দিলেন। রাজা এক দান দাবা খেলে ভারি খুশি, মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী পুরস্কার চাও? মন্ত্রী বললেন, কিছু চাই না মহারাজা লু একটু থেমে জিজ্ঞেস করল, জান নাকি গল্পটা?
উওরে সিডিসি একটা ধাতব শব্দ করে, যার অর্থ বোঝা মুশকিল। লু সেটা অগ্রাহ্য করে বলল, বলি তবু গল্পটা, ভালো গল্প দু বার শুনলে ক্ষতি নেই কিছু মন্ত্রী *ললেন, কিছু আমি চাই না মহারাজা, রাজা তবু কিছু একটা উপহার দেবেনই, রাজাদের খেয়াল, বুঝতেই পারছ। মন্ত্রী আর কী করবেন, বললেন, ঠিক আছে, কিছু একটা যদি দিতেই চান, তা হলে এই দাবার ছকটা ভরে কিছু শস্যদানা দিন। প্রথমটায় একটা, দ্বিতীয়টাতে দুইটা, তৃতীয়টাতে চারটা, চতুর্থটাতে আটটা এভাবে।
সিডিসি ক্রমাগত বিবিপ করে শব্দ করতে থাকে। লু থেমে একনজর তাকিয়ে বলল, এই জন্যে কম্পিউটারদের গল্প বলে মজা নেই, সবকিছু আগেই বুঝে ফেলে! একজন মানুষকে যদি বলতাম, সে যখন জানত দাবার ছক এভাবে শস্যদানা দিয়ে ভরতে সারা পৃথিবীর কয়েক শ’ বছরের শস্য লেগে যাবে, সে কী অবাক হত! তা হলে গল্পটাও আরো অনেক গুছিয়ে বলা যেত, রাজা কীভাবে তখন তখনি একজনকে বললেন এক বস্তা শস্য নিয়ে আসতে, কীভাবে সেই শস্যদানা গুনে গুনে রাখা হল—লু কথা থামিয়ে হঠাৎ দাবার ছকের দিকে তাকায়, সিডিসি তাকে একটা কঠিন পাচে ফেলার চেষ্টা করছে। মন্ত্রীটাকে দুঘর পিছিয়ে এনে সে গভীর চিন্তায় ডুবে যায়।
প্রায় আধ ঘন্টা পর সিডিসি হঠাৎ শব্দ করতে থাকে, দাবা খেলায় কোনো একটা চাল যদি তার পছন্দ হয়, তা হলে সেটার উপর বক্তৃতা দেয়ার তার একটা বাতিক আছে, লু অবশ্যি কখনো তাকে সে সুযোগ দেয় না, এবারেও দিল না। সিডিসি খানিকক্ষণ চেষ্টা করে তার ঘোড়াটাকে দুঘর পিছিয়ে আনে।
লু চোখ কপালে তুলে বলল, তুমি ঘোড়াটাকে ওখানে দিচ্ছ মানে? মাথা খারাপ হয়েছে তোমার? কম্পিউটার হয়ে জন্ম হয়েছে বলে মনে কর ইচ্ছে চাল দিয়ে বেঁচে যাবে তুমি?
বিপ বিপ বিপ।
ধেত্তেরি তোমার বিপ বিপ বিপু, ঘোড়াটা খেয়ে খেলা শেষ করতে গিয়ে থেমে গেল লু। সিডিসি তে ভুল করার পাত্র নয়, তা হলে কি ভুল চাল চেলে তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে? হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে সিডিসিকে কথা বলার সুযোগ করে দিল লু।
ধন্যবাদ মহামান্য লু, আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ। আমি ভুল চালটি কি জন্যে দিয়েছি বুঝতে আপনার চার সেকেন্ডের বেশি সময় লেগেছে। একটি জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, আপনার কিছু করার নেই, কিন্তু তবু আপনি হয়তো জানতে চাইবেন।
কি হয়েছে?
সিসিয়ান থেকে যে-স্কাউটশিপটি ট্রাইটনে পাঠানো হয়েছে, সেটার গতিবেগ দ্রুত কমে যাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব গত নয় মিনিটে আটাত্তর দশমিক চার ভাগ বেড়ে গিয়েছে। কারণ এখনো জানা নেই। বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব এরকম থাকলে স্কাউটশিপটি বিধ্বস্ত হয়ে যাবার কথা, আমি স্কাউটশিপের গতিপথ পরিবর্তন করে দিচ্ছি যেন স্কাউটশিপটি ধ্বংস না হয়। এ প্রসঙ্গে আপনাকে স্মরণ করানো যায় যে, তেইশ শত বাইশ সালে বৃহস্পতি গ্রহের কাছে