লু সুশানের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কিছু বলার আছে?
না। পল কুম ঠিকই বলেছে যে, আমরা প্রাণীগুলিকে দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে প্রাণীগুলি সবসময়েই আমাদের লক্ষ করছে।
লু জোর করে একটু হাসির ভান করে বলল, আপাতত যেটার কোনো প্রমাণ নেই, সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কাজ নেই। তোমরা যদি জোর দিয়ে বলতে পার এখানে কোনো উন্নত প্রাণী নেই, আমরা তাহলে ঘন্টা দুয়েকের মাঝে ফিরে যেতে পারি।
সুশান মাথা নেড়ে বলল, না লু, জোর দিয়ে কিছুই বলতে পারব না, সবগুলি পরীক্ষা বলেছে, এখানে কোনো-না-কোনো ধরনের প্রাণী আছে। কিন্তু সেটি কত উন্নত আমরা জানি না।
লু চিন্তিতভাবে কিম জিবানকে জিজ্ঞেস করে, তোমার কিছু বলার আছে কি?
অনেক কিছু। কোথা থেকে শুরু করব?
অনেক কিছু বলার সময় নেই, তোমাকে অল্প কথায় সারতে হবে।
কিম তার হাতের একতাড়া কাগজ দেখিয়ে বলল, এইসব অল্প কথায় সারব?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে। কিম একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, এটা একটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক গ্রহ। কোনোভাবেই এটাকে কোনো দলে ফেলা গেল না।
কেন ফেলা গেল না সেটা অন্তত বল।
প্রথমত গ্রহটা প্রচণ্ড পরিবর্তনশীল, ঘনত্ব খুবই খাপছাড়া ধরনের, প্রথমে ভেবেছিলাম ভিতরটা বুঝি ফাঁপা, যেখানে কিলবিলে মাকড়সার মতো প্রাণী থাকে। পরে দেখা গেল তা ঠিক নয়, কিন্তু ঘনত্বটার পরিবর্তন হচ্ছে। এরকম গ্রহ টিকে থাকা সম্ভব নয়, বিধ্বস্ত হয়ে যাবার কথা; কিন্তু এটা শুধু যে টিকে আছে তাই নয়, বেশ ভালোরকম টিকে আছে। তা ছাড়া উপরে যে গোল গোল গর্তগুলি আছে, সেগুলি ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করছে। দেখে মনে হয়—কিম জিবান হঠাৎ থেমে গেল।
কি?
না, কিছু না।
শুনি।
দেখে মনে হয়, ওগুলি বড় বড় চোখ, আর ড্যাবড্যাব করে সেই চোখ দিয়ে। আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিম জিবান ভেবেছিল তার কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠবে, কিন্তু কেউ হাসল না, রু-টেক পর্যন্ত কেমন একটা গম্ভীর মুখে বসে রইল। লু শুধু জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলল, ভালোই বলেছ। পুরো গ্রহটা হচ্ছে কারো মাথা, আর গর্তগুলি হচ্ছে তার চোখ! যাই হোক, এবারে নীষা বল তুমি কি দেখলে। গ্ৰহটাতে কি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে?
নীষা এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বলল, বলা যায়, নেই।
লু নীষার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি মনে হয় পুরোপুরি নিশ্চিত নও।
না, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। আজ সারাদিন আমি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর চিহ্ন পাই নি, তবে
তবে কি?
একবার–মাত্র একবার একটা সিগন্যাল ফিরে এসেছে।
লু মাথা নেড়ে বলল, বুঝিয়ে বল, একটু বুঝিয়ে বল।
বুঝিয়ে বলার কিছু নেই, আমি প্রায় নিঃসন্দেহ যে, ব্যাপারটা একটা যান্ত্রিক গোলযোগ। কারণ যেটা ঘটেছে সেটা ঘটা সম্ভব না।
কি হয়েছে?
তোমরা সবাই জান বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান পাওয়ার অনেকগুলি কোড় আছে, কোথাও বুদ্ধিমান প্রাণী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেখানে এই কোড পাঠানো হয়। আশা করা হয় প্রাণীগুলি সেই কোডটার মর্মোদ্ধার করে তার উত্তর পাঠাবে। প্রাণীগুলি কত বুদ্ধিমান তার উপর নির্ভর করে তারা কত তাড়াতাড়ি সেটার মর্মোদ্ধার করতে পারবে। আমি আজ সারাদিন চেষ্টা করে গেছি, যতগুলি কোড আমার কাছে ছিল একটা একটা করে পাঠিয়ে গেছি, কিন্তু কোনো উত্তর পাই নি। কিন্তু ঘন্টা দুয়েক আগে একটা কোড পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এসেছে।
মানে?
একটা খুব জটিল সিগন্যাল আছে, প্রাইম সংখ্যা দিয়ে তৈরী। সেই সিগন্যালটা হঠাৎ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এসেছে।
রু–টেক জিজ্ঞেস করল, তুমি বলছ সিগন্যালটা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে, কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী সেটার মর্মোদ্ধার করে ফেরত পাঠিয়েছে।
নীষা একটু ইতস্তত করে বলল, তা হলে আমাদের এই মুহূর্তে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া উচিত।
কেন?
কারণ এই কোডটার মর্মোদ্ধার করা অসম্ভব, এর জন্যে প্রায় সবগুলি প্রাইম সংখ্যা জানতে হয়। সবগুলি প্রাইম সংখ্যা কারো পক্ষে জানা সম্ভব না, মানুষ এখনো জানে না। কাজেই আমার ধারণা, কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী এটা ফেরত পাঠায় নি, এটা নিজে থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এসেছে। সিগন্যাল ড্রাইভারের ই. এম. টি. চীপের বায়াস যদি বারো মাইক্রোভোল্টের কম হয়, এ ধরনের ব্যাপার হতে পারে।
একটা তর্ক শুরু হতে যাচ্ছিল, লু হাত তুলে থামিয়ে দেয়। রু-টেকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমাদের নিরাপত্তার সবকিছু ঠিক আছে?
হ্যাঁ। ট্রাইটন থেকে কোনো কিছু যদি আমাদের দিকে উঠে আসে সাথে সাথে সেটা শেষ করে দেয়া সম্ভব। সেকেন্ডে একটা করেও যদি পাঠানো হয়, এক ঘন্টা পর্যন্ত আটকে রাখতে পারব। মহাকাশকেন্দ্রে খবর দেয়া আছে, সেই এক ঘন্টার ভিতরে পুরো দল চলে আসবে। আমি রিজার্ভ ট্যাংকে জ্বালানি সরিয়ে রেখেছি, দরকার হলে তুমি হাইপারডাইভ দিতে পারবে। সবকিছু বিবেচনা করে দেখলে আমার ধারণা, ভৌতিক কিছু না ঘটলে আমরা পুরোপুরি নিরাপদ। সিডিসিরও তাই ধারণা।
চমৎকার! লু তার কফিতে চুমুক দিয়ে চুপ করে যায়।
সুশান খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, লু।
কি?
আমাদের দায়িত্ব কি শেষ? আমরা কি এখন ফিরে যাব?
আমার খুব ইচ্ছে করছে ফিরে যেতে, কিন্তু একটা-কিছু সিদ্ধান্তে না পৌঁছে ফিরে যাই কেমন করে? বিজ্ঞান আকাদেমিকে গিয়ে কী বলব?