লু হাত নেড়ে বলল, ওসব ঝামেলায় যেও না, শুধু শুধু সময় নষ্ট।
সুশান হাসি চেপে বলল, কোনটা সময় নষ্ট, কথা বলা, না কথা শোনা?
সবাই হেসে ওঠে, তার মাঝে কিম জিবান জিজ্ঞেস করে, লুল, তুমি যে কথার মাঝখানে সিডিসির মুখের উপর সুইচ টিপে বন্ধ করে দাও, সে রাগটাগ করে না তো আবার, পুরো সিসিয়ানের নিরাপত্তা ওর উপর।
রু-টেক শব্দ করে হেসে উত্তর দেয়, না কিম, ভয় পেয়ো না, রাগটাগ এসব হচ্ছে তোমাদের এবং আমার মতো একজন দু’জন সৌভাগ্যবান রবোটের বিলাসিতা, কম্পিউটারের ওসব নেই। মাঝে মাঝে অবাক হয়তো হয়, কিন্তু রাগ কখনোই হয় না।
রবোট, মানবিক অনুভূতি এবং যান্ত্রিক উৎকর্ষ নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হতে গিয়ে থেমে গেল, আজকে সবারই তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আলোচনা করার আছে। সবাই লু’য়ের দিকে তাকাল, সে তার কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, কাজেই বুঝতেই পারছ, আমাদের কাজ সবচেয়ে সহজ হয় যদি দেখা যায় এই গ্রহে কোনো প্রাণের বিকাশ হয় নি, আর যদি হয়েও থাকে সেটার বুদ্ধিমত্তা বোধহয় খুব নিম্নশ্রেণীর।
রু-টেক হেসে বলল, কিংবা কোনো প্রাণী, যেটার বুদ্ধিমত্তা আমাদের থেকে বেশি।
লু হেসে বলল, হ্যাঁ, তাহলে আমাদের দায়িত্ব পালিয়ে যাওয়া।
কিম জিবান বাঁকা করে হেসে বলল, যদি তারা আমাদের পালাতে দেয়।
সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও, লু হেসে বলল, পালিয়ে যেতে আমার কোনো জুড়ি নেই।
সুশান বলল, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, এখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে, আর বুদ্ধিমত্তা সম্ভবত আমাদের সমপর্যায়ের।
পল কুম বলল, সেটা নিয়ে এখন মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। আর কিছুক্ষণেই সেটা সন্দেহাতীতভাবে জানা যাবে।
লু সবার দিকে তাকিয়ে বলল, পরের চরিশ ঘন্টায় তোমাদের দায়িত্ব আমাদের সব কাজ শেষ করে ফেলা। কার কি করতে হবে তোমরা আমার থেকে ভালো জান, আমি তবু একবার বলে নিই, কাগজপত্র ঠিক রাখার জন্যে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পল কুম আর সুশানের, তোমাদের বের করতে হবে এখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে ঠিক কী ধরনের প্রাণ। সিডিসি এখানে পৌছানোর সাথে সাথে খবরাখবর নেয়া শুরু করে দিয়েছে, রুটিন-কাজ সে করে ফেলতে পারবে, কিন্তু শেষ কথাটি আসবে তোমাদের দু’জনের মুখ থেকে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি ট্রাইটনে কোনো স্কাউটশিপ নামাতে না হয়। স্কাউটশিপ নামানো মানে হচ্ছে এক হাজার নূতন ঝামেলা। ট্রাইটনে যদি বুদ্ধিমান প্রাণী থাকে, তাহলে নীষা, তোমাকে ওদের বুদ্ধিমত্তার স্তর বের করতে হবে। তুমি আগে থেকেই কাজ শুরু করে দিতে পার, বুদ্ধিমত্তার সেই বিশেষ বিশেষ কোড পাঠানো এবং ঐ ধরনের কাজ, তুমি নিশ্চয়ই আমার থেকে ভালো জান কী করতে হবে। কিম, তোমার যেহেতু গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে এত কৌতূহল, তাড়াতাড়ি বের করে ফেল এটা কী ধরনের গ্রহ, তা হলে তোমাকে অন্য কাজে লাগানো যাবে। রু–টেক, তুমি আমাদের অস্ত্রাগারটা একবার ঘুরে এস। বোমাটোমা যদি চুড়তে হয় আমরা যেন আগে থেকে প্রস্তুত থাকি।
কিম জিন জিজ্ঞেস করল, সবার কাজ তো ভাগ করে দিলে, তোমার নিজের জন্যে কি রেখেছ?
লু চোখ পাকিয়ে বলল, আমি দলপতি না? দলপতিরা আবার কাজ করে নাকি?
ঠাট্টা না, সত্যি বল না।
তোমরা হাসবে না তো?
সুশান বলল, না শুনে কথা দিই কেমন করে?
হাইপারডাইভের ম্যানুয়েলটা পড়ব, আর দেখব সার্কিটটা ঠিক আছে কি না।
কেউ হাসল না, হাসির কথাও না। হাইপারভাইভ ব্যাপারটা হাসি-তামাশার ব্যাপার না, এখনো সেটা পুরোপুরি মানুষের আওতায় নেই, মাঝে মাঝেই অসম্পূর্ণ হাইপারডাইভের গুজব শোনা যায়, মহাকাশযান তখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে নাকি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়। কোথায় যায় সেই মহাকাশযানগুলি, কে জানে!
সুশান শুকনো মুখে বলল, সত্যি আমাদের হাইপারভাইভ দিতে হতে পারে?
কিছুই আগে থেকে বলা যায় না সুশান, কিন্তু প্রস্তুত থাকতে দোষ কি?
০২. বুদ্ধিমান প্রাণী?
সবাই আবার বড় মনিটরটি ঘিরে গোল হয়ে বসেছে। সবার চোখেমুখেই একই সাথে ক্লান্তি এবং ভয়-ধরানো একটা উত্তেজনার তাব। লু হাইপারভাইভের ম্যানুয়েল দেখে সিডিসির সাথে একদান দাবা খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছিল, কিন্তু তার চেহারায় ঘুম থেকে ওঠা সতেজ ভাবটা নেই। তার ঘুমটা কেটেছে কাটা কাটা দুঃস্বপ্ন দেখে, এখনো মাথায় সেগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে। কফির কাপে চুমুক দিয়ে সে তার ছোট বক্তৃতা দিয়ে তার আলোচনা শুরু করে, সকালে তোমাদের কাজকর্ম ভাগ করে দেয়া হয়েছিল, এতক্ষণে নিশ্চয়ই অনেকটুকু গুছিয়ে নিয়েছ। কি বল?
উপস্থিত কাউকে খুব উৎসাহী দেখা গেল না। লু একটু হেসে বলল, ঠিক আছে, সবার রিপোর্ট শোনা যাক। পল কম আর সুশান তোমাদের দিয়ে শুরু করি।
পল কুম হাত উন্টে বলল, কি বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। আমরা যত রকম পরীক্ষা করা সম্ভব সব করেছি, এবং পরীক্ষাগুলির ফল থেকে একটামাত্র সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব, সেটা হচ্ছে, এখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে। কিন্তু মুশকিল কী, জান?
কী?
অনেক চেষ্টা করেও কোনো প্রাণী বা তাদের আবাসস্থল কোনো কিছুর দেখা পেলাম না। এক হতে পারে খুব নিচুস্তরের প্রাণী, আকারেও খুব ছোট, মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা সম্ভব না, সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে একটা স্কাউটশিপ পাঠিয়ে ট্রাইটনের উপর থেকে কিছু মাটি তুলে আনতে হবে। কিন্তু সেটা করার প্রয়োজন আছে কি নেই সে সিদ্ধান্ত তোমাকে নিতে হবে।