লু তার কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বলল, তা হলে আমাদের কাজ একটু জটিল। প্রথমে প্রাণীটি বুদ্ধিমত্তার কোন স্তরে সেটা বের করতে হবে। বুদ্ধিমত্তায় নিনিষ স্কেলে যদি আটের কম হয়, তা হলে আমাদের দায়িত্ব মোটামুটি সহজ, সেটিও রুটিনবাঁধা কাজ, সিডিসিকে নিয়ে আমরা এক দিনে শেষ করে দিতে পারব বলে মনে হয়। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা যদি নিনিষ স্কেল আটের বেশি কিন্তু দশের নিচে হয়, যার অর্থ প্রাণীটি মানুষের সমপর্যায়ের, তা হলে আমাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, গরুর মতো খেটেও কয়েক সপ্তাহে শেষ করতে পারব কি না সন্দেহ। কারণ তা হলে আমাদের প্রথম পর্যায়ের যোগাযোগ শেষ করে দ্বিতীয় পর্যায়ের যোগাযোগ শুরু করতে হবে। তৃতীয় পর্যায়ের যোগাযোগের দায়িত্ব আমাদের নয়, কেন্দ্রীয় মহাকাশকেন্দ্রের, তবে আমাদের তাদের সাথে সহযোগিতা করতে হবে—
কিম জিবান বাধা দিয়ে বলল, প্রথম পর্যায় দ্বিতীয় পর্যায় ব্যাপারগুলি একটু বুঝিয়ে দেবে?
লু পল কুমের দিকে তাকিয়ে বলল, পল, তুমি তো এসব ভালো জান, বুঝিয়ে দেবে সবাইকে?
পল কুম কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, এগুলি হচ্ছে ধোঁকাবাজি, বড় বড় হর্তাকর্তাদের কোনো কাজকর্ম নেই বলে এরা বসে বসে নানারকম নিয়মকানুন তৈরি করে।
সিডিসি বিবি শব্দ করে আপত্তি করায় সবাই বুঝতে পারে পল কুমের কথাটি অন্তত পঞ্চম মাত্রার অপরাধ। সেটা নিয়ে পল কুমের কোনো মাথাব্যথা দেখা গেল না, সে বলে চলল, সাদা কথায় বলা যায় মানুষের সমপর্যায়ের কোনো প্রাণী পাওয়া গেলে আমাদের দায়িত্ব তাদের সাথে যোগাযোগ করা, সংবাদ, ভাব, ভাষা, জ্ঞানবিজ্ঞান আর কালচার বিনিময় করা। এটা হচ্ছে প্রথম পর্যায়ের যোগাযোগ। দ্বিতীয় পর্যায়ের যোগাযোগ হচ্ছে তাদের সাথে সামনাসামনি দেখা করা, তখন একজন আরেকজনকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখতে পারে। আমাদের সেটা শুরু করতে হবে, শুরু করা মানে কী, আমাকে জিজ্ঞেস করো না।
সুশান জিজ্ঞেস করল, তৃতীয় পর্যায়ের যোগাযোগ জিনিসটা কী?
জিনিসটা বেশি সুবিধের না, তখন আমাদের একজনকে ওদের কাছে রেখে ওদের একজনকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে হবে।
সুশান মাথা নেড়ে বলল, আমি থাকছি না এখানে, মরে গেলেও থাকছি না।
লু হেসে বলল, সেসবের অনেক ধরনের নিয়মকানুন আছে সুশান, তুমি না চাইলেই যে তোমাকে থাকতে হবে না, সেটার কোনো গ্যারান্টি নেই। তারা যদি তোমাকে পছন্দ করে ফেলে, তাহলে কী করবে? কি বল সিডিসি?
সিডিসি বিপবিপ শব্দ করে সম্মতি কিংবা অসম্মতি জানায়।
সুশান কী একটা বলতে গিয়ে থেমে যায়, লু তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, এই গ্রহে আদৌ কোনো প্রাণী আছে কি না জানার আগে আমাদের যোগাযোগের মাত্রা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই সুশান।
রু-টেক সভ্য মানুষের মতো হাত তুলে কথা বলার অনুমতি চাইল। লু মাথা নেড়ে অনুমতি দিতেই সে বলল, যদি এখানে কোনো প্রাণী পাওয়া যায় যার বুদ্ধিমত্তা নিনিষ স্কেলে দশের বেশি তা হলে আমরা কী করব?
তা হলে আমরা এত বিখ্যাত হয়ে যাব যে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।
ভবিষ্যৎ নিয়ে নাহয় চিন্তা করতে হবে না, কিন্তু এখন কী করব?
লু এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, এখনো কোথাও মানুষ থেকে বুদ্ধিমান প্রাণী পাওয়া যায় নি, তাই ব্যাপারটি ঠিক পরিস্কার করে ব্যাখ্যা করা নেই। সিডিসি চেষ্টা করলে হয়তো আমাদের বলতে পারবে।
রু-টেক সিডিসিকে জিজ্ঞেস করল, সিডিসি, তুমি জান?
সিডিসি দু বার বিপবিপ শব্দ করে একটা কর্কশ ধাতব আওয়াজ করে। লু হাতের কাছের একটা ছোট সুইচ টিপে দিতেই সিডিসির একঘেয়ে যান্ত্রিক গলার ধাতব আওয়াজ শোনা যায়, মহামান্য লু, আপনাদের আলোচনায় আমার অংশ নেওয়ার সার্থকতা শতকরা নিরানব্বই দশমিক তিন ভাগ কমে যায়, যখন আপনারা আমাকে কথা বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন। মহামান্য রু–টেক যে প্রশ্ন করেছেন, তার সরাসরি কোনো উত্তর নেই। তবে নিরাপত্তাসংক্রান্ত দু শ নব্বইয়ের চতুর্থ ধারা এবং জ্ঞানবিকাশের সাতাত্তর দশমিক এক ধারার চতুর্থ পরিচ্ছেদ থেকে আমি বলতে পারি যে, আপনারা যদি কখনো এমন কোনো প্রাণীর সম্মুখীন হন, যার বুদ্ধিমত্তা নিনিষ স্কেলে দশের বেশি, আপনাদের প্রথম সুযোগ পাওয়ামাত্র তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে হবে। এই প্রসঙ্গে মহামান্য পল কুম কেন্দ্রীয় মহাকাশকেন্দ্র সম্পর্কে যে অসৌজন্যমূলক উক্তি করেছিলেন–
লু সুইচ টিপে সিডিসির কথা বন্ধ করে দেয়। পল কুম নীষার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, নীষা, এই সিডিসির এত মাথামোটা কেন? সবসময়ে মহামান্য মহামান্য করে কথা বলে যে গায়ে একেবারে জ্বালা ধরে যায়।
নীষা দলের দ্বিতীয় মেয়েটি, বয়স সুশান থেকে এক দুই বছর বেশি হতে পারে। সে স্বল্পভাষী, তাই প্রথম পরিচয়ে লোকজন তাকে অমিশুক বলে সন্দেহ করে। সিসিয়ানের যাবতীয় কম্পিউটারের দায়িত্ব তার উপর। মহাকাশযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এটি, নীষা খুব দক্ষতার সাথে সেটা করে এসেছে। পল কুমের প্রশ্ন শুনে সে একটু হেসে বলল, সিডিসি হচ্ছে বর্তমানকালের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী কম্পিউটার, সে ইচ্ছা করলে এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে যে তোমরা কাজকর্ম ফেলে দিনরাত শুধু তার কথাই শুনতে চাইবে। তাকে ইচ্ছা করে এভাবে কথা বলার জন্যে প্রোগ্রাম করা হয়েছে, দেখা গেছে তা হলে তার ক্ষমতা সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। তোমরা যদি চাও তা হলে আমি প্রোগ্রামটি পাল্টে দিতে পারি, তৃতীয় মাত্রার বেআইনি কাজ, কিন্তু–