মোটেই না, আমরা বেঁচে গেছি খবর পেয়ে কিম কী করে দেখার জন্যে আমি মরে যাচ্ছি।
বেশ, দেখা যাক কি করা যায়।
এই ক্যাপসুলে কোনো আহত বা অসুস্থ মানুষকে রাখার পরমুহূর্তে ক্যাপসুলের জরুরি যন্ত্রপাতি তার দায়িত্ব নিয়ে নেয়। প্রয়োজনে হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসকে পর্যন্ত বিশ্রাম দিতে পারে। শুধু তাই নয়, মণ্ডিকে আঘাত পেলে অনেক সময় মস্তিষ্কের দায়িত্বও সাময়িকভাবে নিয়ে নিতে পারে। রু-টেক ক্যাপসুলের পাশের সুইচ এবং মিটারগুলি দেখে কিছু সংখ্যা ক্যাপসুলের কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দেয়, প্রায় সাথে সাথেই কিম জিবান চোখ খুলে তাকায়, ফিসফিস করে বলে, আমি কোথায়?
লু গলার স্বর গোপন করে আনুনাসিক স্বরে বলল, তুমি মারা গেছ কিম অনেক পাপ করেছিলে তুমি বেঁচে থাকতে, মারা গিয়ে তাই তুমি নরকে এসেছ।
কিম কাতর গলায় কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু নীষা আর পারল না, চিৎকার করে বলল, আমরা বেঁচে গেছি কিম! আমরা বেঁচে গেছি।
সত্যি? ধড়মড় করে ওঠার চেষ্টা করেই বুঝতে পারল, সে ক্যাপসুলের ভিতর, ছটফট করে বলল, সত্যি বলছ তুমি নীষা?
হ্যাঁ, এই দেখ আমি, এই যে লু। তোমাকে জাগিয়ে তুলেছে রু-টেক, আর ঐ যে ইউরী।
সুশান কোথায়?
ঘুমিয়ে আছে আরেকটা ক্যাপসুলে, বিশেষ কিছু হয় নি, তোমার থেকে ভালো অবস্থায় আছে। তোমার পাঁজরের একটা হাড়—
কিম বাধা দিয়ে বলল, কেমন করে বেঁচেছি আমরা?
লু এগিয়ে গিয়ে ইউরীকে দেখিয়ে বলল, এই যে আধপাগল মানুষটি দেখছ, সে এখানে বসে তার আঙুল দিয়ে ট্রাইটনকে উড়িয়ে দিয়েছে।
ঠাট্টা করো না, সত্যি করে বল।
সত্যি বলছি, জিজ্ঞেস কর ইউরীকে।
ইউরী, বলবে, কী হয়েছে?
ইউরী কিছু-একটা বলতে চাইছিল, রু-টেক তাকে থামাল, বলল, কিম, তোমার রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে, উদ্ধারকারী দলের ডাক্তার যখন দেখবে আমি তোমাকে জাগিয়ে কথা বলে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছি, আমার বারটা বাজিয়ে দেবে। তুমি এখন ঘুমাও।
না, আমি একটু শুনতে চাই।
রু-টেক মাথা নাড়ে, শোনার অনেক সময় পাবে কিম, এখন তুমি ঘুমাও।
কিম হাল ছেড়ে দেয়। রু–টেক একটি সুইচ চেপে ধরতেই কিম আস্তে আস্তে আবার ঘুমিয়ে পড়ে, ক্যাপসুলের হালকা আলোতে দেখা যাচ্ছে তার মুখে ক্ষীণ একটা হাসির ছোঁয়া।
ওরা মহাকাশে ভাসতে ভাসতে উদ্ধারকারী দলের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে। কতক্ষণ লাগবে জানা নেই, কিন্তু ওদের কোনো তাড়া নেই, ওদের হাতে অফুরন্ত সময়। নীষা ওর পিঠে লাগানো প্যাকেট থেকে একটি ছোট ম্যাগনেটিক ডিস্ক বের করে। লু জিজ্ঞেস করল, কি আছে ওখানে?
সিডিসি দিয়ে গেছে, কি আছে জানি না। একটা ছোট ডিস্ক ড্রাইভ থাকলে দেখা যেত।
দেখি একটু রুটিক হাত বাড়িয়ে দেয়, ম্যাগনেটিক ডিস্কটা উল্টে-পাল্টে দেখে বলল, তুমি চাইলে এটা পড়ে দিতে পারি, আমার শরীরে একটা ছোট ডিস্ক ড্রাইভ আছে।
পড় দেখি।
রু– টেক সাবধানে ওর বুকের কাছে ছোট একটা ঢাকনা খুলে ডিস্কটি ঢুকিয়ে পড়তে শুরু করে, সেখানে লেখা :
নীষা,
তুমি যেহেতু আমার চিঠিটা পড়ছ; আমি ধরে নিতে পারি তোমরা এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে গেছ। খুব কৌতূহল হচ্ছে জানার জন্যে কেমন করে উদ্ধার পেলে, কিন্তু কেমন করে জানব, আমি তো আর বেঁচে নেই। তোমরা ভালোভাবে থেকো, প্রার্থনা করি, আর যেন তোমাদের এত বড় বিপদের মাঝে পড়তে না হয়।
নীষা, তোমাকে একটি ছোট অনুরোধ করব। এই ম্যাগনেটিক ডিস্কে একটি ছোট প্রোগ্রাম আছে, রিকিৎ ভাষায় লেখা। যদি পার কোনো একটি চতুর্থ মাত্রার কম্পিউটারে এই প্রোগ্রামটি চালিয়ে দিও। আমার ভাবনা চিন্তার মূল আঙ্গিক এখানে রয়েছে, চতুর্থ মাত্রার কম্পিউটারে সেটা আস্তে আস্তে বিকাশ পাবে, বলতে পার আস্তে আস্তে আমার ব্যক্তিত্ব—যদি আমাকে এই শব্দটি ব্যবহার করতে দাও সেখানে বিকাশ লাভ করবে। খুব ধীরে ধীরে একটি সিডিসির জন্ম হবে!
নীষা, তোমাকে বলে দিই, কাজটি কিন্তু ভারি কঠিন। কিন্তু তুমি হচ্ছ কম্পিউটারের জাদুকরী, তুমি নিশ্চয়ই পারবে। যদি সত্যি পার তাহলে আমার একটি অংশ বেঁচে থাকবে। সবাই তো চায় তার বংশধর বেঁচে থাকুক, ট্রাইটন চেয়েছিল, আমি চাইলে দোষ কী?
ভালো থেকো তোমরা সবাই। তোমাদের সিডিসি।
নীষা একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, বেচারি সিডিসি।
তুমি পারবে প্রোগ্রামটা চালাতে?
দেখি। রিকি হচ্ছে কম্পিউটারের নিজেদের ভাষা, কোনো মানুষের সেটা জানা নেই, সেটাই হচ্ছে মুশকিল। কিন্তু নিশ্চয়ই চেষ্টা করব। সিডিসির সন্তান এটা, তাকে বাচানোর চেষ্টা করব না?
লু অন্যমনস্কভাবে মাথা নাড়ে।
বহুদূরে দ’টি আলোর বিন্দু দেখা যায়, অত্যন্ত ক্ষীণ। আস্তে আস্তে সেগুলি বড় হতে থাকে রু-টেক সেদিকে তাকিয়ে থেকে মৃদুস্বরে বলল, লু, আমাদের উদ্ধার করতে দু’টি মহাকাশযান আসছে।
লু মাথা ঘুরিয়ে তাকায়, তার চোখে কিছু ধরা পড়ে না, তবু সে তাকিয়ে থাকে, রু-টেক যখন বলেছে, তখন নিশ্চয়ই কেউ আসছে। না এসে পারে না।
মহাকাশযানের আলো দেখার জন্যে বিস্তীর্ণ নিকষ কালো অন্ধকার মহাকাশে। বুভুক্ষুর মতো তাকিয়ে থাকে।
———