উপরে নামাতে পারি। বংশধর তখন সিসিয়ান থেকে ট্রাইটনে নেমে যাবে।
সিসিয়ানে এখন কোনো কম্পিউটার নেই, তুমি সেটা ঠিক করে চালাতে পারবে না।
ঠিক করে চালানোর প্রয়োজনও নেই, সিসিয়ানকে যদি কোনোভাবে ট্রাইটনের কাছাকাছি নিতে পারি, তা হলেই হবে। সিসিয়ান মোটামুটিভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেলেও ক্ষতি নেই, আমার ধারণা, ট্রাইটনের বংশধর তবু বেঁচে থাকবে। মনে আছে, বারো মেগাওয়াটের পার্টিকেল বীম দিয়েও তার কোনো ক্ষতি হয় নি?
লু চিন্তিতভাবে মাথা নাড়ে।
রু-টেক বলল, যদি এটা করতে চাও, তা হলে তোমাকে এখনি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের হাতে সময় মোটেও নেই, আর তুমি হচ্ছ দলপতি, তুমি অনুমতি না দিলে আমি যেতে পারব না।
ঠিক আছে, অনুমতি দিচ্ছি।
রু-টেক সাথে সাথে কাজে লেগে যায়, মাথার পিছনে কোথায় হাত দিয়ে সে কীএকটা খুলে ফেলে। সেখানে হাত ঢুকিয়ে মেমোরি মডিউলটি খুলে ফেলার আগে বলল, মনে রেখো, আমার কোনো স্মৃতি থাকবে না, তোমাদের বলে দিতে হবে আমি কী করব।
বেশ।
রু-টক একটা হ্যাচকা টানে মেমোরি মডিউলটি টেনে বের করে আনে, সাথে সাথেই তার পুরো স্মৃতি মুছে যায়। মেমোরি মডিউলটা নিয়ে কী করতে হবে সেটাও রু-টেকের আর মনে থাকে না, সেটা হাতে নিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। নীষা এগিয়ে গিয়ে বলল, এটা আমাকে দাও।
কেন?
লু তখন এগিয়ে শান্ত গলায় বলল, তোমার নাম রু–টেক, তুমি ভয়ানক একটি বিপজ্জনক মিশনে যাচ্ছ, তাই তোমার স্মৃতি আমরা সরিয়ে রাখতে চাই, মেমোরি মডিউলটি আমার হাতে দাও।
রু-টেক বাধ্য ছেলের মতো হাতের মেমোরি মডিউলটি সুয়ের হাতে দিয়ে দেয়।
ধন্যবাদ। তুমি এখন ঐ মহাকাশযানে গিয়ে, বড় বড় ভেস্টগুলি খুলে দেবে, যেন সিসিয়ানের সমস্ত বাতাস বের হয়ে যায়।
কেল?
তুমি জানতে চাইলে তোমাকে বলতে পারি, কিন্তু তোমার জানার প্রয়োজন নেই, কারণ আমাদের হাতে সময় খুব কম।
বেশ।
ভেন্টগুলি খুলে সমস্ত বাতাস বের করে দেয়ার পর তুমি সিসিয়ানের ইঞ্জিনগুলি চালু করে, সেটিকে এমনভাবে প্রস্তুত করবে, যেন সিসিয়ান এই গ্রহটিতে গিয়ে নামতে পারে।
কেন?
সময়ের অভাবে তোমাকে বলতে পারছি না, কিন্তু জেনে রাখ, এটা তোমার জানার প্রয়োজন নেই।
বেশ।
কাজ শেষ হবার পর তুমি সিসিয়ান থেকে বের হয়ে আমাদের কাছে ফেরত আসবে।
কেন?
তুমি আমাদের দলের একজন, তোমাকে আমাদের প্রয়োজন।
ও।
এখন তুমি রওনা দাও।
ভেন্টগুলি কোথায় এবং ইঞ্জিন কী ভাবে চালু করতে হয় আমি জানি না।
আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখব, সময় হলেই তোমাকে বলে দেব।
বেশ।
রু-টেক সাথে সাথে ঘুরে সিসিয়ানের দিকে রওনা দিয়ে দেয়, হাতের জেটটি সে বেশ চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারে, রবোটদের কিছু কিছু জিনিস শিখতে হয় না, তারা সেই ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়।
পরবর্তী তিরিশ মিনিট লু তার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম সময় বলে বিবেচনা করে। রু— টেককে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলতে হল তার, প্রতিমুহূর্তে ভয় হচ্ছিল সিসিয়ান প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাবে, তার মাঝে মাথা ঠাণ্ডা রেখে একটার পর একটা নির্দেশ দিয়ে যাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। রু-টেকের পুরানো কোনো স্মৃতি অবশিষ্ট নেই বলে তার কাজটি প্রায় দশ গুণ কঠিন হয়ে দাড়িয়েছিল। তিরিশ মিনিট পর সিসিয়ানকে নির্দিষ্ট গতিপথে ট্রাইটনের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে রু-টেক যখন ভাসতে ভাসতে বেরিয়ে এল তখন সবাই যেন প্রাণ ফিরে পেল। রু-টেক ফিরে আসতেই নীষা তার হাতে মেমোরি মডিউলটি ধরিয়ে দেয়, বলে, নাও তোমার স্মৃতি।
কী করব এটা দিয়ে?
তোমার মাথায় লাগিয়ে নাও।
কী ভাবে লাগাব?
নীষা আর লু সাবধানে মডিউলটি ওর মাথায় লাগিয়ে দেয়, লু সাথে সাথেই প্রকৃতস্থ হয়ে ওঠে, এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, লু, তুমি যদি চাও আমি সিসিয়ানকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করে আসি, তাহলে কিন্তু দেরি করা যাবে না।
লু হাসতে হাসতে বলল, তুমি এইমাত্র সেটা করে এসেছ রু–টেক।
সত্যি! রু-টেক অবাক হয়ে তাকায়, দেখে, সত্যি সত্যি সিসিয়ান আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। আর ঘন্টাখানেকের মাঝেই ট্রাইটনে পৌঁছে যাবে ট্রাইটনের বংশধরকে নিয়ে।
চমৎকার কাজ করেছ তুমি রু–টেক।
আমি কিছু করি নি লু, তুমিই করেছ। তুমি ঠিক ঠিক সবকিছু বলে দিয়েছ বলে পেরেছি, মেমোরি মডিউল খুলে নিলে আমার ভিতর আর একটা বলপয়েন্ট কলমের ভিতরে কোনো পার্থক্য নেই।
নীষা হাসতে হাসতে বলল, মেমোরি মডিউল ছাড়াই কিন্তু বেশ লাগছিল, কেমন একটা শিশু-শিশু ভাব, যেটাই বলা হয়, তুমি বল কেন?
তাই নাকি?
হ্যাঁ। তোমাকে একদিন অভিনয় করে দেখাতে হবে। নীষা হাসতে হাসতে বলল, চল একটা কাজ করি।
কী কাজ?
কিম জিবানকে জাগিয়ে তুলি।
কেন?
বেচারা যখন জ্ঞান হারিয়েছে তখন সে জানত না আমরা বেঁচে যাব, ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্নের মাঝে রয়েছে সে। তাকে জাগিয়ে তুলে জানিয়ে দিই আমাদের আর কোনো ভয় নেই, তখন সে অনেক শান্তিতে ঘুমাবে। সুশানকে মিথ্যে কথা বলে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, মিথ্যেটা এখন সত্যি হয়ে গেছে, সে অনেক শান্তিতেই ঘুমাচ্ছে, তাকে জাগানোর প্রয়োজন নেই।
ক্যাপসুলে জাগানো কিন্তু খুব সহজ নয়, তাকে এখন বাইরেও আনা যাবে না।
তুমি সব পার রু–টেক। যে-মায়োক্সিনভুরা মহাকাশযানকে উদ্ধার করতে পারে তার অসাধ্য কোনো কাজ নেই।
লু যদি অনুমতি দেয় তা হলে করব। রু-টেক লুয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আপত্তি আছে?