এই নিউট্রিনো দিয়েই আমরা তোমাকে শেষ করে দেব, অচিন্তনীয় নিউট্রিনো পাঠাব তোমার ভিতর দিয়ে, ছারখার করে দেবে তারা তোমাকে।
হঠাৎ একটা আশ্চর্য ব্যাপার হল, পুরো ট্রাইউন যেন কেঁপে উঠল একবার। মুহূর্তে গ্রহটি রক্তবর্ণ হয়ে যায়, টকটকে লাল রং দেখে মনে হয় গনগনে গরমে যেন ফেটে চৌচির হয়ে যাবে এক্ষুনি। কিন্তু কিছু হল না, টকটকে লাল হয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হল, সমস্ত গ্রহটি যেন ফেটে গেল বেলুনের মতো। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ ওদের কাছে পৌছাল না বায়ুশূন্য মহাকাশে, কিন্তু ওরা বিস্ফারিত চোখে দেখে, ট্রাইটন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চিরদিনের মতো।
সাথে সাথে একটা আশ্চর্য অনুভূতি হল সবার, সারাক্ষণ বুকের ভিতর যে চাপা ভয় আর আতঙ্ক জমা হয়ে ছিল, সেটা যেন চলে গেল। তার বদলে একটা ফুরফুরে হালকা আনন্দ এসে র করে ওদের ভিতর। মনে হতে থাকে আর কোনো ভয় নেই, ভাবনা নেই, এখন শুধু নিরুদ্বেগ নিরবচ্ছিন্ন শান্তি। লু একবার প্রাণহীন গ্রহটিকে দেখে, তারপর ইউরীর দিকে তাকায়। এই আধপাগল একজন বিজ্ঞানী হাজার মাইল দূরে বসে একটি খেলনা দিয়ে শুধুমাত্র আঙুল নেড়ে ট্রাইটনের মতো একটি গ্রহকে উড়িয়ে দিয়েছে? নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না, লু অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ইউরীর দিকে তাকিয়ে থাকে, এও কি সম্ভব!
ইউরী আস্তে আস্তে লুয়ের দিকে তাকায়, কেমন জানি উদভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছে তাকে, কেমন জানি বিপন্ন। লু ইউরীর কাঁধে হাত রেখে ডাকল, ইউরী—
কি?
তুমি শুধু আমাদের প্রাণ বাঁচাও নি, সম্ভবত পৃথিবীকেও বাঁচিয়েছ।
ইউরী বিপন্ন মুখে বলল, কিন্তু—
কিন্তু কি?
কেমন জানি খুনী খুনী লাগছে নিজেকে, এত বড় একটা গ্রহকে শেষ করে দিলাম?
আমাদের উপায় ছিল না ইউরী।
হয়তো উপায় ছিল না, কিন্তু তবুও এত বড় একটা ক্ষমতাশালী প্রাণী, তার আর কোনো চিহ্ন থাকবে না?
নীষা আস্তে আস্তে বলল, ওসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই ইউরী। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, সেটা হচ্ছে সৃষ্টির ধর্ম। ট্রাইটন চেষ্টা করেছে তার বংশধরকে বাঁচাতে, আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের বাঁচাতে–
ইউরী হঠাৎ ঘুরে তাকায়, ফিসফিস করে বলে, বংশধর।
কী হয়েছে বংশধরের?
বংশধরকে বাচিয়ে রাখতে হবে, তাহলে ট্রাইটন ধ্বংস হয়ে যাবে না। লু একই ইতস্তত করে বলল, কিন্তু এটা তো আমাদের হাতে নেই ইউরী, কিছুক্ষণের মাঝে সিসিয়ান ধ্বংস হয়ে যাবে সবকিছু নিয়ে, ট্রাইটনের বংশধর সিসিয়ানের সাথে শেষ হয়ে যাবে।
কোনো ভাবে তুমি সিসিয়ানকে বাঁচাতে পার না?
না। আমি অত্যন্ত আদিম উপায়ে সিসিয়ানকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করেছি, সেটা থেকে রক্ষা করার কোনো উপায় নেই।
নীষা জিজ্ঞেস করল, কী ভাবে করছ তুমি?
মায়োক্সিন গ্যাসের বোতলটি খুলে এসেছি।
ও, নীষা গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ে।
ইউরী জিজ্ঞেস করল, কি হয় মায়োক্সিন দিয়ে?
মায়োক্সিন যখন অক্সিজেনের সাথে একটা বিশেষ অনুপাতে মিশে, তখন প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়। আমি যে-সিলিন্ডারটি খুলে এসেছি, সেটা থেকে যেটুকু গ্যাস বের হচ্ছে তাতে সিসিয়ানের অক্সিজেন মিশে বিস্ফোরণের অনুপাতে পৌঁছতে তিন ঘন্টা সময় লাগার কথা। আর মিনিট দশেকের মাঝে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হবে, কিছুতেই সেটা আটকানো সম্ভব না।
ইউরী আস্তে আস্তে বিষণ্ণভাবে মাথা মাড়ে, বাঁচানো গেল না তাহলে!
রু-টক আস্তে আস্তে বলল, তোমরা রাজি থাকলে আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।
কী করবে তুমি?
সিসিয়ানের বড় বড় কয়টা ভেন্ট দিয়ে পুরো বাতাসটুকু বের করে দিতে পারি, এখনো বিস্ফোরক পর্যায়ে পৌঁছায়নি, এই মুহূর্তে যদি চেষ্টা করি একটা সুযোগ আছে।
লু মাথা নাড়ে, না রু-টেক। ভয়ানক বিপদের ঝুঁকি নিতে চাইছ তুমি, এখন যেকোনো মুহূর্তে সিসিয়ান উড়ে যেতে পারে। আমি তোমাকে প্রাণের ঝুঁকি নিতে দিতে পারি না।
তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি রবোট।
কিন্তু তোমাকে মানুষের সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। .
আমি সে-কথা বলছি না, রু- টেক বাধা দিয়ে বলল, আমি রবোট, আম যদি কোনোভাবে বাচিয়ে রাখা যায়, আমি বেঁচে থাকি।
কিন্তু এখন সিডিসি নেই, যেখানে তুমি তোমার স্মৃতিকে সরিয়ে ফেলতে পার।
কিন্তু আমি আমার মেমোরি মডিউলটি খুলে তোমাদের হাতে দিতে পারি। তোমরা সেটা যদি যত্ন করে রেখে দাও, তা হলেই আমি বেঁচে থাকব। সুবিধেমতো মেমোরি মডিউলটি অন্য একটা সপ্তম মাত্রার রবোটের শরীরে লাগিয়ে দিলেই আমি বেঁচে উঠব।
কিন্তু মেমোরি ছাড়া কাজ করবে কেমন করে?
প্রসেসরটা থাকলেই কাজ করা যায়, জরুরি কাজের জন্যে কিছু মেমোরি সব সময়েই থাকে। তবে আমি কিছুই জানব না, তোমাদের আমাকে বলে দিতে হবে সবকিছু কি করব, কেন করব এইসব।
ইউরী কৌতূহল নিয়ে ওদের কথাবার্তা শুনছিল, সুযোগ পেয়ে লুকে জিজ্ঞেস করল, সত্যিই এটা সম্ভব?
একটা ছোট সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কাজটি ভয়ানক বিপজ্জনক। লু মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু ট্রাইটনের বংশধরকে বাচিয়ে রাখার সমস্যা অন্য জায়গায়। যদি সিসিয়ানকে সত্যি রু–টেক রক্ষা করতে পারে, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এসে নিসিয়ানের দায়িত্ব নিয়ে নেবে। তারা তখন ট্রাইটনের বংশধরকে কেটেকুটে দেখবে, তাকে বাচতে দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
আমি তা হলে সিসিয়ানের মূল ইনজিনটা চালু করে পুরো সিসিয়ানকে ট্রাইটনের