কিম জিবান ট্রাইটনের এ-ধরনের ব্যবহারের ব্যাখ্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে করে কিছুক্ষণ হল হাল ছেড়ে দিয়েছে। মূল কম্পিউটার সিডিসি এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয়, সে তার সুবিশাল মেমোরি ব্যাংকের তথ্য থেকে ট্রাইটনের আশ্চর্য ব্যবহারের কাছাকাছি জিনিসগুলি ক্রমাগত পরীক্ষা করে দেখছে, কোনো কোনোটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে কিম জিবানকে জানাতেও দেরি করছে না। কিন্তু এত অল্প সময়ে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানা হয়ে গেছে যে, কিম জিবানের আর অবাক হওয়ার ক্ষমতা নেই। সে এখন সম্পূর্ণ অন্যভাবে গ্রহটির আচার-আচরণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে, তার ব্যাখ্যা অবশ্যি কাউকে বলার মতো নয়, কারণ সেগুলি এরকম :
প্রথম ব্যাখ্যা : এটি আসলে কোন গ্রহ নয়, এটি হচ্ছে নরক। ধর্মগ্রন্থে নরকের যেবর্ণনা থাকে, তার সাথে খুব বেশি মিল নেই, কিন্তু থাকতে হবে সেটা জোর দিয়ে কে বলতে পারে? গোলাকার এই জায়গাটার ভিতরে সব পাপীদের আত্মাকে পুরে রাখা হয়, পাপীদের আর্তনাদ তারা ঠিক শুনতে পাচ্ছে না, কিন্তু সেজন্যে তাদের ভিতরে একটা চাপা ভয় আর অশুভ চিন্তা এসে বাসা বেঁধেছে।
তার এই ব্যাখ্যা যদি সত্যি হয় তা হলে ধরে নিতে হবে একটি স্বর্গও কোথাও আছে এবং সেই স্বর্গের কাছাকাছি গেলে সবার মনে আনন্দ হতে থাকবে। এই অভিযান শেষ হওয়ামাত্রই সে তাহলে স্বর্গের খোঁজে বের হবে। একটি মহাকাশযানে করে সে স্বর্গ খুঁজে বেড়াচ্ছে, জিনিসটা কল্পনা করেই কিম জিবানের হাসি পেয়ে যায়।
দ্বিতীয় ব্যাখ্যা : এটি আসলে একটি অতিকায় মহাকাশযান, এর ভিতরে রয়েছে আশ্চর্য সব প্রাণী, তাদের কিলবিলে মাকড়সার মতো পা। কেন এদের কিলবিলে মাকড়সার মতো পা, কিম জিবান ব্যাপারটির সদুত্তর দিতে পারে না, মহাকাশের প্রাণীর কথা চিন্তা করলেই কেন জানি তার চোখের সামনে কিলবিলে পা ভেসে ওঠে। টাইটনের উপরে যে গোল গোল গর্ত রয়েছে, তার ভিতর থেকে উকি মেরে সেই কিলবিলে মাকড়সাগুলি তাদের লক্ষ করছে, কাছে হাজির হওয়ামাত্রই সেগুলি তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে কচকচ করে খেয়ে ফেলবে।
ব্যাখ্যাটির সমস্যা হচ্ছে যে, যদি এই কিলবিলে মাকড়সাগুলি এরকম একটা মহাকাশযান তৈরি করতে পারে, তাহলে অবশ্যি তারা সিসিয়ানের সাথে যোগাযোগ করতে পারত, কিন্তু সেরকম সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, গ্রহটির সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
তৃতীয় ব্যাখ্যা; সিসিয়ানে যেসব খাবারদাবার আছে ভুল করে তার সাথে কোনো একধরনের মাদকদ্রব্য মিশিয়ে দেয়া হয়েছে, কাজেই তাদের সবার একইসাথে বিভ্রম হচ্ছে। আসলে ট্রাইটনে আশ্চর্য কিছুই নেই, এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ দ্বিতীয় শ্রেণীর গ্রানাইট গ্রহ।
ব্যাখ্যাটির সমস্যা হচ্ছে যে, কম্পিউটারের কখনো বিভ্রম হয় না, কিন্তু সিডিসি যেসব তথ্য জানাচ্ছে সেগুলিও বিভ্রম ছাড়া দেখা সম্ভব নয়।
চতুর্থ ব্যাখ্যা : আসলে সে এখন একটা বাজে স্বপ্ন দেখছে, ঘুম থেকে উঠেই দেখবে সে তার ঘরে ষোড়শ শতাব্দীর একটা রূপকথা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
এই ব্যাখ্যাটি কিম জিবানের খুব পছন্দ হয়, সে ঘুমিয়ে নেই ব্যাপারটি প্রমাণ করাও সহজ ব্যাপার নয়। কিম জিবান তাই এতটুকু নড়াচড়া না করে চুপচাপ শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার জন্যে। অপেক্ষা করতে করতে সে ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, সে পৃথিবীতে ফিরে গেছে বাচ্চা একটা ছেলে হয়ে, ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটছে সে একটি হ্রদের ধারে।
কেউ একজন আমার সাথে হাত লাগাও, সিসিয়ানকে অরবিটে নিয়ে আসি, লু ভুরু কুঁচকে কন্ট্রোল প্যানেলের অসংখ্য সুইচ এবং মিটারের দিকে তাকিয়ে থেকে গলা উচিয়ে বলল, হাজার কিলোমিটারে আপত্তি আছে কারো?
মাত্র হাজার কিলোমিটার? বেশি কাছে হয়ে গেল না? সুশান ভয়ে ভয়ে বলল, গ্রহটা থেকে যদি কোনো মিসাইল টিসাইল ছেড়ে আমাদের কিছু একটা করে?
রু-টেক হেসে বলল, মিসাইল ছেড়ে যদি আমাদের শেষ করতে চায় তাহলে তুমি হাজার কিলোমিটার দূরেই থাক আর মিলিয়ন কিলোমিটার দূরেই থাক, কোনো রক্ষা নেই।
তা হলে?
তা হলে কি?
এই গ্রহের লোকজন যদি আমাদের কিছু করে?
রু-টেক হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গি করে বলল, অকারণে ভয় পেতে তোমার এত উৎসাহ কেন? এই গ্রহে কোনোরকম প্রাণী আছে, তুমি কী ভাবে জান? আর যদি থেকেও থাকে, সেটা উন্নত কোনো প্রাণী হবে কি না তার কি নিশ্চয়তা আছে? আর সত্যিই যদি মিসাইল ছেড়ে আমাদের উড়িয়ে দেওয়ার মতো উন্নত কোনো প্রাণী থাকে, তা হলে কথা নেই বার্তা নেই আমাদের উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে কেন?
কী করবে তাহলে?
আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে।
পল কুম এক পাশে দাঁড়িয়ে কফিজাতীয় কোনো একটা জিনিস খাচ্ছিল, রু-টেকের কথা শুনে চিন্তিত স্বরে বলল, রু-টেক, তোমার সমস্যা কী জান, তুমি সবসময়ে মানুষের মতো চিন্তা কর। কোনো একটা উন্নত প্রাণীর কথা বললেই তোমার মনে মানুষের চেহারা ফুটে ওঠে। একটা প্রাণী যদি মানুষ থেকে অনেক উন্নত হয় তাহলে হয়তো তারা ইচ্ছা করলেও মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। পিপড়ার তো তুলনামূলকভাবে অনেক বুদ্ধি, মানুষ কখনো পেরেছে পিপড়ার সাথে যোগাযোগ করতে? যদি পিপড়া সম্পর্কে কিছু জানতে ইচ্ছে হয়, আমরা একটা পিপড়া ধরে নিয়ে আসি, ঠিক সেরকম খুব উন্নত প্রাণী যদি আমাদের দেখে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে সোজাসুজি আমাদের ধরে নিয়ে যায় আমি একটু অবাক হব না।