লু বলল, ইউরী, তুমি পড়ে যাবে না, মহাকাশে কেউ পড়ে যায় না। তোমার কোনো ভয় নেই, আমি আসছি তোমার কাছে। নিউট্রিনো জেনারেটরটি আছে তো?
আছে। আমি শক্ত করে ধরে রেখেছি।
শক্ত করে ধরে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই, ওটা পড়বে না, তুমি ছেড়ে দিলেও ওটা তোমার পাশাপাশি থাকবে।
থাকুক, আমি তবু ছাড়ছি না।
তোমার ইচ্ছা। তুমি তোমার বাম হাতের কাছে যে নীল সুইচটা আছে সেটা চেপে ধর, তাহলে তোমার বীপারটা কাজ করতে শুরু করবে, আমি বুঝতে পারব তুমি কোথায় আছ।
করছি।
একমুহূর্ত পরেই সে ইউরীকে দেখতে পায়, বহু দূরে একটা আলো জ্বলতে এবং নিভতে শুরু করেছে। লু নিজের জেটটি চালু করে সেদিকে যেতে যেতে চারদিকে তাকায়, দূরে সিসিয়ান একটা ভূতুরে মহাকাশযানের মতো ভাসছে, নিচে বীভৎস। ট্রাইটন, কে জানে হয়তো এই মুহূর্তে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লু চারদিকে তাকাতে তাকাতে নীষা আর রু-টেকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, কিছুক্ষণের মাঝেই তাদের সাড়া পাওয়া যায়, রু-টেক কিম জিবানের ক্যাপসুলটি খুঁজে পেয়েছে, সেটিকে সে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে, এখন নীষাকে নিয়ে সে সুশানের ক্যাপসুলটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। লু ওদের এক জায়গায় একত্র হতে বলল, সে নিজে ইউরীকে নিয়ে কিছুক্ষণের মাঝেই ওদের কাছে হাজির হবে।
ইউরী লুকে দেখে যেন দেহে প্রাণ ফিরে পায়। দু’হাতে শক্ত করে নিউট্রিনো জেনারেটরটি ধরে রেখেছে, সেভাবেই বলল, কী আশ্চর্য অবস্থা! স্রেফ ঝুলে আছি! শুধু মনে হয় পড়ে যাব।
না, পড়বে না। ট্রাইটনের কী অবস্থা?
জানি না, এখন যোগাযোগ করব। মুশকিল হচ্ছে কিছুতেই সোজা থাকতে পারি। না, শুধু ঘুরে ঘুরে উল্টে যাই।
আমি তোমাকে ধরে রাখছি, তুমি যোগাযোগ কর। আমাদের সময় খুব বেশি নেই।
কতক্ষণ আছে?
খুব বেশি হলে দশ পনেরো মিনিট হবে, এর থেকে কমও হতে পারে।
সর্বনাশ! সময় তো দেখি একেবারেই নেই। ইউরী তাড়াতাড়ি নিউট্রিনো জেনারেটরটি ট্রাইটনের দিকে মুখ করে ধরে সুইচ টিপে সেটিকে চালু করে বলল, ট্রাইটনের কৌতূহল বজায় রাখার জন্যে তাকে খুব-একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলা উচিত।
কি বলবে?
বলব তাকে উড়িয়ে দিচ্ছি। ইউরী শব্দ করে হেসে কিবোর্ডে টাইপ মাথা ঝুকিয়ে কী-একটা লিখতে থাকে। লু মাথা এগিয়ে নিয়ে দেখে সেখানে লেখা, একটা খুব জরুরি জিনিস বলছি, আমার কথা শুনতে পেলে উত্তর দাও। তোমার পৃষ্ঠের বড় গোলকটি ছোট করে ফেল।
নিজের জেটটি চালু করে ইউরীকে ঠেলে নিয়ে যেতে যেতে ট্রাইটনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেখানে কোনো পরিবর্তন হল না। ইউরী আবার লিখল, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তোমাকে বল, সাড়া দাও।
কোনো সাড়া নেই।
সাড়া দাও, আমাদের নিরাপত্তার জন্যে তোমাকে ধ্বংস করে ফেলব বলে ঠিক করেছি, সাড়া দাও।
তবু কোনো সাড়া নেই।
মানুষ অনেক উন্নত প্রাণী, তাদের দিয়ে জোর করে কোনো কাজ করিয়ে নেয়া যায় না, তুমিও পারবে না। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছ? পারলে সাড়া দাও। তোমার নিজের ভালোর জন্যে বলছি, তোমার পৃষ্ঠের বড় বৃত্তটি ছোট করে ফেলা।
তবু কোনো সাড়া নেই, ইউরী ভয়ার্ত মুখে লুয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ট্রাইটন যদি এখন এই নিউট্রিনো রশ্মিকে উপেক্ষা করা শুরু করে থাকে?
উপায় নেই, চেষ্টা করতে থাক।
ইউরী আবার লিখল, আর পাঁচ মিনিটের মাঝে সাড়া দাও, না হয় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। তুমি জানতে চাও আমরা কী ভাবে তোমাকে ধ্বংস করব? যদি জানতে চাও তাহলে তোমার বড় গোলকটি আস্তে আস্তে ছোট করে ফেল।
লু অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে দেখে ট্রাইটনের পৃষ্ঠে একটা বড় বৃত্ত আস্তে আস্তে ছোট হয়ে গেল। ইউরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বুয়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। লু এগিয়ে গিয়ে ইউরীর হাত থেকে কিবোর্ডটি নিয়ে লিখল, তোমাকে আমরা ধ্বংস করতে চাই না, মানুষ কখনো কাউকে ধ্বংস করতে চায় না। যদি তুমি আমাদের ফিরে যেতে দাও আমরা তোমাকে ধ্বংস করব না। আমার এ প্রস্তাবে রাজি হলে বড় বৃত্তটি বড় করে দাও।
বৃত্তটি আরো ছোট হয়ে গেল, ট্রাইটন এ প্রস্তাবে রাজি নয়। ইউরী তখন এগিয়ে যায়, আস্তে আস্তে লেখে, তা হালে শোন, আমরা তোমাকে কেমন করে ধ্বংস করব।
লু তাকিয়ে দেখে ওরা নীষা আর রুটকের কাছে পৌঁছে গেছে, জেট টি ঘুরিয়ে সে নিজের গতি কমিয়ে থেমে গেল। নীষা আর রু-টেক এগিয়ে আসে, তাদের কাছাকাছি স্টেনলেস স্টিলের দু’টি ক্যাপসুল, ওগুলির ভিতরে কিম জিবান আর সুশানের অচেতন দেহ। নীষা জিজ্ঞেস করল, সবকিছু ঠিক আছে?
হ্যাঁ।
উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ট্রাইটনকে?
দেখা যাক। লু নিজের ঘড়ির দিকে তাকায়, আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড, তারপর পালসারটিতে বিস্ফোরণ হবে। সত্যিই কি ট্রাইটন ধ্বংস হয়ে যাবে তখন?
ইউরী লিখতে থাকে, যে-রশ্মিটি দিয়ে তোমার সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি, তাকে আমরা বলি নিউট্রিনো। অসংখ্য নিউট্রিনো আছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে, তাদের অপরিমেয় শক্তি, কিন্তু আমরা তার কথা জানি না, কারণ নিউট্রিনো কোনো কিছুর সাথে সহজে বিক্রিয়া করে না। কোনোভাবে যদি বিক্রিয়া করানো যেত, তা হলে সেই শক্তি দেখা যেত।
ইউরী ট্রাইটনের দিকে তাকায়, গ্রহটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সত্যিই কি পারবে এটিকে ধ্বংস করে দিতে?
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ইউরী আবার লিখতে শুরু করে, তুমি আমাদের নিউট্রিনো রশ্মি থেকে আমাদের পাঠানো খবরাখবর পেতে শুরু করেছ, কাজেই তুমি ব্যবস্থা করেছ নিউট্রিনোর সাথে বিক্রিয়া করার, কত অসংখ্য নিউট্রিনো এখন তোমার দেহে বিক্রিয়া করছে, কত সহজে ভুমি উত্তপ্ত হয়ে উঠছ তাদের শক্তি দিয়ে।