কী হয়েছে কিম?
জানি না, প্রাণীটা সম্ভবত একপাশ থেকে অন্য পাশে সরে গেল।
তোমাদের কোনো ক্ষতি হয় নি তো?
না।
দেখেছ প্রাণীটাকে?
না, কিম জিবান সুশানের দিকে তাকায়, তুমি দেখেছ?
সুশান ফ্যাকাসে মুখে মাথা নাড়ে, না, লাল মতন কী একটা জানি উপরে উঠে আছড়ে পড়েছে, এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে কিছু বুঝতে পারি নি। একটু থেমে যোগ করল, আমার ভয় লাগছে কিম।
লাগারই কথা। ফিরে যাবে? দরকার কি জীবনের শেষ সময়টা ভয় পেয়ে নষ্ট করার?
রু-টেকের গলা শুনতে পেল আবার, কিম আর সুশান, আমি লুয়ের সাথে কথা বলেছি, সে নীষাকে নিয়ে আসছে তোমাদের দিকে। সে না আসা পর্যন্ত তোমরা নিজে থেকে কিছু কোরো না।
বেশ।
কিম জিবান অস্ত্র হাতে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ঘামতে থাকে, ভয়াবহ একটা আতঙ্ক এসে ভর করেছে ওর উপর।
লুয়ের পিছু পিছু নীষা ছুটে আসছিল, হঠাৎ দু’জনেই থমকে দাড়াল, যেখানে কিম আর সুশান রয়েছে তার করিডোরে একটা বড় গর্ত। ওরা একটু আগেই এদিক দিয়ে গিয়েছে, তখন গর্তটা সেখানে ছিল না। হলুদ রঙের একটা ধোঁয়া ভাসছে বাতাসে, ঝাঁঝাল একটা গন্ধ সেখানে। লু থমকে দাঁড়ায়, তারপর রু-টেকের সাথে যোগাযোগ করে রু।
কি হল?
তুমি কিম আর সুশানকে বল, আমাদের আসতে একটু দেরি হবে।
সমস্যা?
হ্যাঁ, করিডোর ধরে আসার উপায় নেই, পুরোটা কেউ উধাও করে দিয়েছে।
ও।
লু নীষাকে নিয়ে অন্যদিকে ছুটে গেল, মনে মনে যে আশঙ্কাটি করছিল সত্যিই তাই ঘটেছে, অন্য পাশেও করিডোরটি উধাও করে দিয়েছে কেউ। চারদিক থেকে কিম আর সুশানকে আলাদা করে ফেলেছে প্রাণীটি, কী করবে এখন ওদের? লু আবার রু-টেকের সাথে যোগাযোগ করে রু।
বল।
কিম আর সুশান ঠিক কোথায় আছে জান?
জানি।
কত ভালো করে জান?
খুব ভালো করে, ওদের শরীরে একটা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বীপার লাগানো আছে, আমি সেটা থেকে বলতে পারি ঠিক কোথায় তারা আছে। তোমরা কোথায় আছ সেটাও জানি—
আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ো না। রু-টেক শোন।
বল।
কিম আর সুশান যেখানে আছে, তার উপরের স্তরে কী আছে?
আর্কাইভ ঘর। প্রয়োজনীয় দলিল।
ঘরটাকে সিসিয়ান থেকে পুরোপুরি আলাদা করা যায়?
শুধু ওটাকে করা যাবে না, কিন্তু পাশাপাশি দুটি ঘরকে একসাথে করা যাবে।
চমৎকার। তুমি ঘর দু’টিকে আলাদা করে, বায়ুশূন্য করে ফেল। আমি আসছি।
লু।
বল।
তুমি কী করতে চাইছ আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু কাজটা একটু বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে না?
দু’ঘন্টা পর আমরা সবাই শেষ হয়ে যাব, বড় বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আমরা খুব বেশি হলে দু’ঘন্টা সময় হারাব, বুঝতে পেরেছ?
পেরেছি।
কিম জিবান স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি হাতে দাড়িয়ে আছে, তাকে পিছন থেকে খামচে ধরে রেখেছে সুশান। প্রচণ্ড আতঙ্কে সে অনেকটা হিস্টিরিয়াগ্রস্ত মানুষের মতো হয়ে গেছে। ঘরের কোনায় বড় বড় যন্ত্রপাতি এবং মনিটরগুলির পিছন থেকে অনেকক্ষণ থেকে কেমন জানি একটা অনিয়মিত তীক্ষ্ণ শব্দ হচ্ছিল। হঠাৎ করে কী একটা জানি নড়ে যায়, কিন্তু ওরা ঠিক ধরতে পারে না, কী। যে-প্রাণী অবলীলায় শক্ত স্টেনলেস স্টিলের দেয়াল মুহূতে উধাও করে দিতে পারে, তার পক্ষে মানুষকে শেষ করা কঠিন কিছু নয়, কিন্তু প্রাণীটি এখনো তাদের কিছু করছে না। তাদের চারদিক থেকে আলাদা করে এনেছে, এখন কী করবে তাদের?
হঠাৎ সুশান চিৎকার করে ওঠে, ঐ দেখ—
কিম জিবান স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি নিয়ে বিদ্যুৎগতিতে ঘুরে যায়, কোথাও কিছু নেই। শুকনো গলায় জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে সুশান?
ভয়-পাওয়া গলায় সুশান মেঝের দিকে দেখায়, ঐ দেখ।
ঘরের কোনা থেকে কী—একটা জিনিস যেন আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে, দুইতিন ইঞ্চি পুরু তরল পদার্থের মতো। উপরে হলুদ ধোঁয়ার আস্তরণ।
কিম জিবান স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি ঘুরিয়ে সেদিকে ধরতেই, হঠাৎ তরল পদার্থের মতো জিনিসটি যেন থমকে দাঁড়াল, তারপর উত্তপ্ত পানির মতো টগবগ শব্দ করে ফুটতে থাকে, সারা ঘর ঝাঁঝাল গন্ধে ভরে যায় হঠাৎ।
কী ওটা?
জানি না। আরেকটু কাছে এলেই মেগাওয়াটের পার্টিকেল বীম চালিয়ে দেব, শেষ করে দেব শুওরের বাচ্চাকে।
কিমের কথা শুনেই যেন তরল পদার্থের আস্তরণটি শীতল হয়ে গেল, টগবগ করে ফোটা বন্ধ করে সেটি আবার ধীরে ধীরে এগুতে থাকে। উপরের হলুদ ধোঁয়াটি সরে যেতেই ওরা দেখতে পায়, আস্তরণটির উপরে আশ্চর্য একধরনের নকশা তৈরি হচ্ছে, দেখে কখনো মনে হয় অজস্র সরীসৃপ, কখনো মনে হয় অসংখ্য প্রেত। অস্বস্তিকর একধরনের শব্দ করতে করতে জিনিসটা এগিয়ে আসতে থাকে, চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে তাদের, কী করবে এখন?
কিম জিনিসটার মাঝামাঝি তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তাক করে ট্রিগার টেনে ধরে, নীলাভ একটা রশ্মি বের হয়ে আসে, সাথে সাথে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ। ধোঁয়া সরে যেতেই দেখে তরল পদার্থের মধ্যে জিনিসটা প্রচণ্ড শব্দ করে ফুটছে, পার্টিকেল বীম সেটির কোনোরকম ক্ষতি করেছে, তার কোনো চিহ্ন নেই।
কিম, লুয়ের গলা শুনতে পেল, কিম শুনছ?
হ্যাঁ লু, ভয়ানক বিপদে আছি আমরা, কী একটা জিনিস—
কিম, এখন তোমার কিছু বলার প্রয়োজন নেই, তুমি আমার কথা শোন।
এগিয়ে আসছে সেটা আমাদের দিকে, আর কয়েক ফুট মাত্র বাকি।
আমার কথা শোন এখন, তুমি তোমার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তের মেগাবাইটে সেট কর, তারপর মাথার উপর তুলে ধর, সোজা উপরের দিকে।
ধরেছি।