কোনো উত্তর নেই।
তুমি তোমার বংশধরকে পৃথিবীতে পাঠাতে চাও?
হ্যাঁ।
কিন্তু এটা কি সত্যি নয়, যে, আমরা যদি ফিরে না যাই তুমি তোমার বংশধরকে পৃথিবীতে পাঠাতে পারবে না?
কোনো উত্তর নেই।
লু খানিকক্ষণ ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আমাদের মেরে ফেলতে চাও?
কোনো উত্তর নেই।
আমরা কি তোমার বংশধরকে মেরে ফেলব?
না না না—
এরপর হঠাৎ করে ট্রাইটন তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক চেষ্টা করেও কোনো লাভ হল না। কি করা যায় ঠিক করার জন্যে সবাই একত্র হয়েছে লুয়ের ঘরে, ইউরী ছাড়া। সে এখনো নিউট্রিনো জেনারেটর দিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ট্রাইটনের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে। তার বিশ্বাস, কোনোভাবে যদি তাকে জিটা নিউট্রিনোর সুপার সিমেট্রিক বোজনের ভরের সমস্যাটা বুঝিয়ে দেয়া যায়, সে তার একটা কিছু উত্তর বলে দেবে। মরতে যদি হয়ই সুপার সিমেট্রিক বোজনের ভরের মানটুকু জেনে মরতে দোষ কী?
লুয়ের ঘরটা একটু ছোট, কিন্তু সবাই তবু এখানেই এসে বসেছে। খোলামেলা জায়গায় বসতে আর কেউ নিজেকে নিরাপদ মনে করে না, কোন দিক দিয়ে ট্রাইটনের বংশধর এসে কী করে বসে, কে জানে! দরজার কাছে কিম জিবান বসেছে, হাতে একটা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, তিন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন রশ্মি বের হয় এটা দিয়ে, ছয় ইঞ্চি স্টেনলেস স্টিলের পাতকে ফুটো করে ফেলতে পারে এই রশ্মি, ট্রাইটনের বংশধর থেকে আত্মরক্ষা করার জন্যে এর থেকে ভালো অস্ত্র আর কী হতে পারে?
দীর্ঘ সময় সবাই চুপ করে বসে থাকে, কী নিয়ে কথা বলবে ঠিক যেন বুঝতে পারছে না। লু কয়েকবার কী-একটা বলতে গিয়ে চুপ করে যায়, ব্যাপারটি সবাই লক্ষ করেছে, কিন্তু তবু সাহস করে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে না। যে কথাটি লু বলতে চাইছে না, সেটি ভালো কিছু হতে পারে না। নীষা শেষ পর্যন্ত সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, তুমি কি কিছু বলবে, লু?
হ্যাঁ, কিতাবে বলব বুঝতে পারছি না।
কেন, কী হয়েছে?
লু একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলেই ফেলল, আমি সিসিয়ানকে ধ্বংস করে ফেলার ব্যবস্থা করে ফেলেছি। তিন ঘন্টা পর সিসিয়ান উড়ে যাবে।
কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলতে পারে না।
কারো বিশেষ কিছু বলার ছিল না। সুশান একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করল, এখন তোমার কী করার ইচ্ছে?
তিন ঘন্টা সময় খুব অল্প, আমাদের বিশেষ কিছু করার নেই সুশান।
ও সুশান এর থেকে বেশি কিছু বলার খুঁজে পেল না।
সিসিয়ানকে ধ্বংস করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। ট্রাইটনের বংশধর নিশ্চয়ই এখন আমাদের একজন একজন করে শেষ করে দেবে, সিসিয়ান তখন ভুতুড়ে একটা উপগ্রহের মতো ঝুলতে থাকবে এখানে। যারা আমাদের উদ্ধার করতে আসবে, তারা জানবে না এখানে কী হয়েছিল, খুব সম্ভব তারা না জেনেই তাদের মহাকাশযানে করে ট্রাইটনের বংশধরকে নিয়ে যাবে পৃথিবীতে। সেটা কিছুতেই ঘটতে দেয়া যায় না।
রু–টেক বলল, সিসিয়ানকে নিয়ে আমরা সবাই যদি ধ্বংস হয়ে যাই, তা হলে যারা পরে আমাদের খোঁজে আসবে, তারা আবার আমাদের অবস্থায় পড়বে না তুমি কেমন করে জান?
আমি জানি না, কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। যারা আমাদের খোঁজে আসবে। তারা অন্তত জানবে এখানে রহস্যময় কিছু-একটা ঘটেছে, সিডিসির মতো একটা কম্পিউটার সিসিয়ানের মতো একটা মহাকাশযানকে বাঁচাতে পারে নি, মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এমন কখনো ঘটে নি। কাজেই তারা প্রস্তুত হয়ে আসবে, আমাদের যে-বিপর্যয় হয়েছে, তাদের সেটা হবে না।
লু একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমি খুবই দুঃখিত যে, তোমাদের রক্ষা করতে পারলাম না। তোমাদের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলি যে একটু আনন্দের ব্যবস্থা করব, আমার এখন তার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই।
শীষা বলল, তুমি শুধু শুধু নিজেকে অপরাধী ভেবো না, আমাদের প্রাণ বাচানোর দায়িত্ব তোমার নয়। আমি আগেই বলেছি, তোমার দায়িত্ব ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। তুমি সেটা নিয়েই। আমি তোমার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সব সময়ে ধন্য মনে করেছি।
কিম জিবান একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, তাই নিজে থেকে কিছু বলতে চেষ্টা করছি না। তবে নী যেটা বলেছে সেটা পুরোপুরি আমার মনের কথা।
সুশান বলল, আমারও।
রু-টেক বলল, আমি ইচ্ছে করলে অনেক গুছিয়ে কথা বলতে পারি, কিন্তু তার চেষ্টা করব না। কারণ নীষা যেটা বলেছে আমিও একই জিনিস অনুভব করি।
লু একটু অপ্রস্তুতভাবে হেসে বলল, আমার অপরাধবোধকে কমানোর চেষ্টা করছ বলে তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। তোমাদের মতো সহকর্মীর সাথে কাজ করেছি বলেই আমি এত নিশ্চিন্ত মনে মারা যেতে পারব। শেষ সময়টুকু তোমরা কে কী ভাবে কাটাতে চাও জানি না, আমি ঠিক করেছি সেটা ট্রাইটনের বংশধরকে খুঁজে বের করে কাটাব।
কিম জিবান জিজ্ঞেস করল, খুঁজে পেলে কী করবে লু?
মেরে ফেলব।
কিম জিবান শব্দ করে হেসে বলল, তোমার মনের জোর আছে লু।
এখন আর কিছু থেকে লাভ নেই, মনের জোরটাই যদি আরো কিছুক্ষণ টিকিয়ে রাখে।
লু, আমি যদি তোমার সাথে বংশধর নিধনকাজে যোগ দিই, তোমার আপত্তি আছে? ট্রাইটনকে না পেয়ে তার বংশধরের উপরেই মনের ঝালটুকু মিটিয়ে নিই।
না, আমার কোনো আপত্তি নেই। নীষা বলল, আমরা একা একা বসে থেকে কী করব, আমরাও আসি তোমাদের সাথে।