ইউরী কোনো কথা না বলে নিজের মাথা চেপে ধরে চুপচাপ বসে থাকে। এরকম অবস্থায় জিটা নিউট্রিনোর সুপার সিমেট্রিক বোজনের ভর বের করতে না পেরে কারো এত আশাভঙ্গ হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না। লোকটিকে দেখে লুয়ের একটা আশ্চর্য হিংসা হয়, জ্বালা-ধরানো আক্রোশের মতো একটা হিংসা। সেও যদি সবকিছু ভুলে এই লোকটার মতো কোনো একটা জটিল অঙ্কের সমস্যা নিয়ে বসে থাকতে পারত।
ইউরী দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে এক সময় নীয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, এই পুরো গ্রহটা একটা প্রাণী বলে দাবি করছ?
হ্যাঁ।
তার মানে এর আকার অনেক বড়। সম্ভবত এর ক্ষমতাও অনেক বেশি। কিন্তু এটা মানুষ থেকে বেশি উন্নত, সেটা কিভাবে বুঝতে পারলে?
নীষা একটু অবাক হয়ে বলল, পল কুম আমাদের মতো একজন মানুষ, তাকে খুলে সে আবার নূতন করে তৈরি করেছে—
সেটা তো বুদ্ধিমান প্রাণীর প্রমাণ হল না। বুদ্ধিমান প্রাণী হল পল কুমের অনবরণ করে নূতন কিছু তৈরি করত।
নীষা হঠাৎ করে ইউরীর কথার কোনো উত্তর দিতে পারে না। ইউরী আস্তে আস্তে বলল, একটা ধাটি শিম্পাঞ্জীকে দেখলে একটা মানবশিশু থেকে বেশি বুদ্ধিমান মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে মানবশিশু শিম্পাঞ্জী থেকে অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে। এখানেও কি এধরনের ব্যাপার হচ্ছে?
লু কিম জিবানের হাতে গ্লুটুলটা ধরিয়ে দিয়ে এগিয়ে আসে, তুমি ঠিকই ধরেছ, ক্ষমতা বেশি হওয়া মানেই বুদ্ধি বেশি, তা ঠিক নয়। কিন্তু ক্ষমতা যখন এত বেশি হয়ে যায়, যে, আমাদের সেটা অনুভব করার পর্যন্ত শক্তি থাকে না, তখন বুদ্ধি কম না বেশি তাতে আর কিছু আসে-যায় না। আমরা সম্ভবত কোনোদিন ঠিক করে জানতেও পারব না, তার বুদ্ধিমত্তা কোন স্তুরের।
ইউরী ভুরু কুঁচকে বলল, সত্যি?
এখানে যখন এসেছ, দেখবে।
গ্রহটার সাথে যোগাযোগ করেছ?
চেষ্টা করেছিলাম, লাভ হয় নি। আমাদের সাথে তার যোগাযোগ করার কোনো ইচ্ছে নেই। আমরা মোটামুটিভাবে তার হাতের মুঠোয়, কাজেই তার যোগাযোগ করার কোনো প্রয়োজনও নেই।
যোগাযোগ করতে পারলে মন্দ হত না।
কেন?
যদি জিটা নিউট্রিনোর ভরের সমস্যাটা বুঝিয়ে দিতে পারতাম, সমাধানটা হয়তো করে দিতে পারত।
ল খানিকক্ষণ ইউরীর দিকে তাকিয়ে থেকে ফিরে গেল, লোকটার সম্ভবত সত্যি মাথা খারাপ। হয়তো তাকে কোনো একটা পাগলা গারদে পাঠানো হচ্ছিল।
ইউরী লুয়ের পিছনে পিছনে এগিয়ে আসে, জিজ্ঞেস করে, কোনো কি উপায় নেই যোগাযোগ করার?
একেবারে নেই তা হতে পারে না, কিছু-একটা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সিডিসিকে ধ্বংস করে দেয়ার পর এখন আমাদের আর চেষ্টা করার কোনো উপায় নেই।
ও। ইউরী অত্যন্ত বিরস মুখে এক কোনায় বসে থাকে, তার মুখ দেখে মনে হয় একটা ভালো কম্পিউটারের অভাবে তার বেঁচে থাকা পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে গেছে।
সিসিয়ানকে মোটামুটি আয়ত্তের মাঝে আনার পর দলের দু’একজন প্রথমবারের মতো একটু বিশ্রাম নেবার সুযোগ পায়। সেই সময় কিম জিবানের চোখে পড়ে, দেয়ালের এক কোনায় একটা লাল বাতি একটু পরে পরে জ্বলছে এবং নিভছে। কাছে গিয়ে সে একটা আশ্চর্য জিনিস আবিষ্কার করে। লাল বাতিটির উপরে ছোট ছোট করে লেখা, তোমরা যদি বিপদগ্রস্ত হয়ে থাক, তা হলে এই সুইচটি চেপে ধর।
কিম জিবান সুইচটি চেপে ধরার আগে লুকে ডেকে আনে। লু খানিকক্ষণ সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আশ্চর্য ব্যাপার, আমি ভেবেছিলাম, মহাকাশকেন্দ্রে বুঝি সবকিছু শেখানো হয়, এই জিনিসটা আমাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছে। দেখা যাক কী আছে ভিতরে।
লু সুইচটা চেপে ধরতেই একটা চ্যাপ্টা ধরনের বাক্স খুলে গেল। ভিতরে ছোট ছোট করে লেখা, তোমাদের মূল কম্পিউটার ধ্বংস হয়ে গেছে, এটি অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার, মহাকাশ অভিযানের সুদীর্ঘ ইতিহাসে মাত্র একবার এধরনের একটা ব্যাপার। ঘটেছিল। তোমরা নিশ্চয়ই অত্যন্ত বিপদের মাঝে রয়েছ, এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাদের কোনো ধরনের সাহায্য প্রয়োজন। মূল কম্পিউটার ধ্বংস হয়ে গেছে বলে এই মুহূর্তে তোমাদের পক্ষে যোগাযোগ করা অসম্ভব। এই গোপন বাক্সটিতে যোগাযোগের জন্যে একটি অত্যন্ত প্রাচীন যন্ত্র দেয়া হল। এটি একটি নিউট্রিনো জেনারেটর, কোনোরকম সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি বা অভিজ্ঞ মানুষ ছাড়াই এটি চালু করা সম্ভব। যন্ত্রটির সুইচ টিপে নিউট্রিনোর সংখ্যা বাড়ানো এবং কমানো যায় এবং যন্ত্রটির নলটি যেদিকে মুখ করে রাখবে, নিউট্রিনোগুলি সেদিকে বের হবে। কাজেই তোমাদের দায়িত্ব মহাকাশকেন্দ্রের দিকে নলটি ঘুরিয়ে এটি চালু করা এবং নিউট্রিনোর সংখ্যা বাড়িয়ে কমিয়ে সেখানে কোনো ধরনের সংকেত পৌছানোর ব্যবস্থা করা। সময় নষ্ট না করে এই মুহূর্তেই তোমরা এটি ব্যবহার শুরু করে দাও। মনে রেখো, তোমরা অত্যন্ত বিপদের মাঝে রয়েছ এবং তোমাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য শুনা শূন্য তিন কিংবা আরো কম।
বাক্সের নিচে একটা ছেলেমানুষি যন্ত্র। লু খানিকক্ষণ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিম জিবান উত্তেজিত স্বরে বলল, বেঁচে গেলাম তা হলে আমরা। লু তাড়াতাড়ি চালু কর এই ব্যাটাকে।
নীষা শান্ত স্বরে বলল, এত তাড়াতাড়ি নয়, আগে একটু ভেবে দেখা দরকার। সিডিসি বেঁচে থাকতেই ট্রাইটন আমাদের সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছিল, এখন সিডিসিও নেই। এটা চালু করতেই যদি ট্রাইটন বুঝে ফেলে বন্ধ করে দেয়?