কেন?-এ অবস্থা হল কেমন করে?
আমাদের মূল কম্পিউটারটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
লোকটি অবাক হয়ে বলল, ধ্বংস হয়ে গেছে?
লু একটু ইতস্তত করে বলল, আসলে আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি।
লোকটার খানিকক্ষণ সময় লাগে বিশ্বাস করতে, খানিকক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে বলল, ধ্বংস করে ফেলেছ? ইচ্ছে করে?
হ্যাঁ।
কেন?
সেটা অনেক বড় ইতিহাস, এখন শুনে কাজ নেই। তা ছাড়া তুমি নিশ্চয়ই এইমাত্র ফ্রিজিং ক্যাপসুল থেকে উঠে এসেছ, বিশ্রাম নেয়া দরকার। আমাদের মূল কম্পিউটার নেই বলে ঠিক ঠিক সবকিছু করতে পারব না, সবাই কোনো-না-কোনো কাজে ব্যস্ত। আমাদের একজন সময় পেলেই–
লোকটা বাধা দিয়ে বলল, তার আগে শুনি, কেন কম্পিউটারটাকে ধ্বংস করেছ।
লু শান্ত গলায় বলল, শোনার অনেক সময় পাবে, এখন আমার কথা শুনে–
লু, কিম জিবান উচ্চস্বরে ডাকল, তাড়াতাড়ি আস, আর সামলাতে পারছি না।
লু কথার মাঝখানে থেমে প্রায় ছুটে কিম জিবানের পাশে গিয়ে থ্রটলটা চেপে ধরে। সময়ে-অসময়ে সে কম্পিউটারের কাজগুলি নিজে নিজে করার চেষ্টা করত বলে এসব ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা অন্যদের থেকে অনেক বেশি। কখনো সেটা কোনো কাজে আসবে চিন্তা করে নি। লোকটা লুয়ের পিছু পিছু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে, বলবে?
লু মনিটর থেকে চোখ না সরিয়ে বলল, সত্যি এখনি শুনতে চাও?
হ্যাঁ।
নীষা, তুমি ভদ্রলোককে একটু গুছিয়ে বলবে? আমি খুব ব্যস্ত এখানে।
নীষা নিজেও খুব ব্যস্ত, সিডিসির সাথে সাথে সিসিয়ানের প্রায় চার হাজার কম্পিউটারের সবগুলি অচল হয়ে গিয়েছে, সেগুলি আলাদা আলাদাভাবে কাজ করার জন্যে তৈরি হয় নি। নীষা চেষ্টা করছে সে-রকম একটা দু’টা কম্পিউটারকে চালু করতে, ওদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে তা হলে। একটা কম্পিউটারের অসংখ্য ডাটা লাইনগুলি সাবধানে ধরে রেখে সে লোকটাকে অল্প কথায় ওদের অবস্থাটা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ট্রাইটনের কথা শুনে লোকটি খুব বেশি বিচলিত হল বলে মনে হল না, কিন্তু যেই মুহূর্তে সে সিডিসিকে ধ্বংস করে দেয়ার কথাটি শুনল, সে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না, অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে নিজের চুল খামচে ধরে বলল, কী বললে তুমি? তোমরা নিজের ইচ্ছায় ২১১২ নম্বরের তৃতীয় মাত্রার একটা কম্পিউটার ধ্বংস করে দিয়েছ? ২১১২ নম্বরের কম্পিউটারের কত বড় ক্ষমতা, তুমি জান? তাও তৃতীয় মাত্রার। পৃথিবীতে ফিরে গেলে তোমাদের নামে খুনের অপরাধ দেয়া হবে, খেয়াল আছে?
তৃতীয় মাত্রার হলে দেয়া হত। আমি যে-কম্পিউটারের কথা বলছি, সেটা তার পরবর্তী পর্যায়ের, সেটি চতুর্থ পর্যায়ের।
লোকটি কোনো কথা বলতে পারে না, খানিকক্ষণ লাগে তার ব্যাপারটা বুঝতে। একটু পরে সে অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল, কী বললে? চতুর্থ পর্যায়?
হ্যাঁ।
কিন্তু চতুর্থ পর্যায় তো মানুষ থেকে বেশি ক্ষমতা রাখে, এটি একমাত্র কম্পিউটার, যেটাকে মানুষ থেকে বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, নিজেকে বাঁচানোর জন্যে এটার মানুষ খুন করার অনুমতি আছে।
জানি।
তা হলে?
তা হলে কী?
কী ভাবে ধ্বংস করলে সেটাকে?
তোমাকে একবার বলেছি, তুমি শোন নি। আবার বলছি, আমরা এখন একটা মহাবিপদে আছি, পৃথিবীর অস্তিত্ব এর সাথে জড়িত। মূল কম্পিউটার সিডিসি থাকলে ট্রাইটনের আমাদের কারো প্রয়োজন নেই, তাই সিডিসিকে চলে যেতে বলা হয়েছে।
কিন্তু কেন সে গেল, তার যাবার কোনো প্রয়োজন নেই, মানুষ থেকে সে বেশি মূলবান—
কিন্তু পৃথিবী থেকে সে বেশি মূল্যবান নয়। তা ছাড়া সিডিসি আমাদের ভালবাসত, আমাদের বিশ্বাস করত। আমাদের বাঁচানোর জন্যে তার প্রাণ দেয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
লোকটা মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, ইস, কী দুঃখের ব্যাপার। চতুর্থ সিরিজের একটা ২১১২। চতুর্থ সিরিজের। আমি কত গল্প শুনেছি, কখনো চোখে দেখি নি।
নীষা একটু অবাক হয়ে লোকটাকে দেখে, চতুর্থ সিরিজের কম্পিউটারকে নিয়ে এরকম উচ্ছাস বিচিত্র নয়, কিন্তু তাই বলে এরকম অবস্থায়? সে জিজ্ঞেস না করে পারল না, তুমি মনে হয় ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছ না। আমরা খুব বিপদের মাঝে আচ্ছি—
তা বুঝেছি, কিন্তু বিপদ তো মানুষের সব সময়েই থাকে। আমার কয়েকটা হিসেব করার ছিল। জিটা নিউট্রিনোর ভরের সাথে সুপারসিমেট্রিক বোজনের একটা হিসেব। ভালো কম্পিউটারের অভাবে করতে পারি নি, এখন যদি সিডিসিকে পেতাম, আহা—সে দশ সেকেন্ডে করে দিতে পারত।
বিস্ময়ে নীষার চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে। এরকম পরিবেশে যে অঙ্ক কষার জন্যে একটা কম্পিউটার খুঁজতে পারে, তার মাথাটা কি পুরোপুরি খারাপ নয়? নীষার চোখে চোখ পড়তেই লোকটা হঠাৎ থতমত খেয়ে থেমে গেল, একটু লজ্জা পেয়ে কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বলল, আমি একজন পদার্থবিজ্ঞানী, পঞ্চম বিজ্ঞান সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে জিটা নিউট্রিনোর ভরের উপর একটা সমস্যা ছিল, সেটা ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। একটু আগে যখন ঘুম ভাঙল, হঠাৎ একটা সমাধানের কথা মনে হল। একটা ভালো কম্পিউটার পেলে একবার চেষ্টা করে দেখতাম সমাধানটা বের করা যায় কি না।
আমি খুব দুঃখিত, এখন এখানে ভালো খারাপ কোনো কম্পিউটারই নেই।
তাই তো দেখছি।
লোকটা বিমর্ষ ভঙ্গিতে এক কোনায় গিয়ে বসে। নীষা অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম?
লুকাস। ইউরী লুকাস। ইউরী বলে ডাকতে পার।