না।
পল লু’য়ের কথা শুনতে পেল বলে মনে হল না, আপন মনে বিড়বিড় করে বলল, সময় হয়েছে, আমাকে এক্ষুণি আসতে হবে।
না, লু শান্ত সুরে বলল, তুমি এভাবে আসতে পারবে না, তোমাকে মিলি কে তাপমাত্রায় না নামিয়ে আমি এখানে আসতে দেব না।
পল ল’য়ের দিকে তাকিয়ে আবার আশ্চর্য একটা শব্দ করে। সিভিসি মৃদু স্বরে সেটা অনুবাদ করে দিল, নির্বোধ মানুষ, আমাকে তোমার নিতে হবে।
লু আস্তে আস্তে বলল, সবাই নিজের জায়গায় যাও, আমরা এখন হাইপারডাইত দেব।
মনিটরে পলের চেহারা দেখা যাচ্ছিল, সেখানে খুব সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনটা ঠিক কী, বলা যাচ্ছে না, কিন্তু দেখে কেমন জানি অস্বস্তি হয়। লু একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, পল, আমার কথার উত্তর দাও, তুমি কেন সিসিয়ানে আসতে চাও?
পল ধাতব একটা শব্দ করে, সিডিসি অনুবাদ করে দেবার আগেই লু বলল, পল, তোমাকে উত্তর দিতে হবে, তুমি কেন এখানে আসতে চাও?
আমার প্রভু বলেছে।
কে তোমার প্রভু?
পল কথার উত্তর না দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ল’য়ের কথা শুনতে পেয়েছে বলে মনে হল না। লু আবার জিজ্ঞেস করে, তোমার প্রভু কে পল, কী চায় সে?
পল আবার একটা ধাতব শব্দ করে, এদ্ধ জল্লুর আস্ফালনের মতো শোনাল শব্দটা। লু সিডিসিকে জিজ্ঞেস করে, কী বলল সিডিসি?
বলেছে, তার প্রভুর বংশধরকে নিয়ে যেতে হবে।
বংশধর?
হ্যাঁ।
লু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি দুঃখিত পল, তোমাকে আমরা রেখে যাচ্ছি, আবার তোমাকে নিতে আসব। সিডিসি, তুমি হাইপারডাইভ দেবার জন্যে প্রস্তুত?
প্রস্তুত।
কিম জিবান?
প্রস্তুত।
রু-টেক, তোমার মেমোরি পাঠিয়ে দাও।
দিচ্ছি।
মুহূর্তে রু-টেকের মেমোরি চলে আসে সিডিসির মেমোরি ব্যাংকে, সাথে সাথে ব্লু-টেকের ধাতব শরীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আছড়ে পড়ে স্কাউটশিপের ভিতরে।
লু শান্ত গলায় বলল, কিম, হাইপারডাইভ দাও।
সিসিয়ানের প্রচণ্ড শক্তিশালী ইঞ্জিন গুঞ্জন করে ওঠে, নীলাভ আলো ছড়িয়ে পড়ে ভিতরে। কিছুক্ষণেই ওরা চলে যাবে স্থির সময়ের ক্ষেত্রে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করে সবাই। কিম জিবান সাবধানে একটা একটা করে সুইচ নিজের দিকে টেনে আন। শেষ সুইচটা চেপে ধরে সে বড় স্টিয়ারিংটা ঘুরিয়ে দেয়, সাথে সাথে শরীর টানটান করে সবাই অপেক্ষা করতে থাকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনির জন্যে। সিসিয়ান একবার দলে উঠে হঠাৎ স্থির হয়ে যায়। লু সাবধানে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় কিম জিবানের দিকে, হঠাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মতো প্রচণ্ড আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় ওর। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কিম জিবানের সামনে হাইপারডাইরে পুরো কন্ট্রোল প্যানেল ছিটকে উঠেছে। কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় সিসিয়ান। কিম জিবান ছিটকে পড়েছে একপাশে, পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সেটুকু রক্তে অতবিক্ষত।
নিজেকে চেয়ার থেকে মুক্ত করতে করতে সিডিসির গলা শুনতে পেল, হল না। হাইপারডাইভ দেয়া হল না। ট্রাইটনের অধিবাসীরা আটকে দিয়েছে আমাদের, জ্যাম করে দিয়েছে ফিডব্যাক।
লুয়ের সাথে সাথে সবাই ছুটে আসে কিম জিবানের দিকে। লু সাবধানে তাকে ধরে বসানোর চেষ্টা করে। সুশান মেডিক্যাল কিট খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল, কিম, কেমন আছ কিম?
অনেক কষ্টে কিম লল, এখনো মরি নি।
সুশান জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে আনে, তা হলে আর মরবে না। দেখি তোমাকে একর।
দক্ষ হতে পরীক্ষা করে সুশান বলল, বড় ধরনের আঘাত পেয়েছ তুমি, কেটেছড়ে গেছে, হয়তো নড়তে চড়তে কষ্ট হবে কয়দিন, কিন্তু কিছু হয় নি তোমার, ভালো হয়ে যাবে।
কিম একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, কী দুঃখের কথা! মরে গেলেই মনে হয় ভালো ছিল।
কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলে না। লু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সিডিসি, এদিককার খবর কি?
খবর বেশি ভালো নয়। ট্রাইটনের অধিবাসীরা এমনভাবে ফিডব্যাকটা জ্যাম করেছে যে সিসিয়ানের ভালো রকম ক্ষতি হয়েছে। সিসিয়ানকে ঠিক না করা পর্যন্ত আর হাইপারভাইভ দেয়া যাবে না।
পলের কী খবর?
সে স্কাউটশিপে রওনা দিয়েছে, কিছুক্ষণেই পৌঁছে যাবে এখানে।
লু’য়ের সাথে সাথে সবাই মনিটরটির দিকে তাকায়। পলকে দেখা যাচ্ছে, অনেকটা অনামন ভঙ্গিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটা খুব অদ্ভুত, অনেকটা দ্বিধাগ্রস্ত মানুষের মতো, যেন বুঝতে পারছে না কী করবে। কিন্তু একই সাথে ওর সারা শরীর কী একটা অজানা আশঙ্কায় যেন টানটান হয়ে আছে। পুরো দৃশ্যটাতে একটা অমঙ্গলের ছায়া, দেখে বুক কেঁপে ওঠে।
লু সিডিসিকে উদ্দেশ করে বলল, সিডিসি, মহাকাশকেন্দ্রে একটা খবর পাঠানো যাবে? জরুরি অবস্থার জন্যে যে চ্যানেলটা থাকে সেটা দিয়ে—
আমি দুঃখিত লু, সিডিসি বাধা দিয়ে বলল, আমরা এখন কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারব না। ট্রাইটনের অধিবাসীরা সবগুলি চ্যানেল জ্যাম করে রেখেছে।
লু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, সিডিসি, তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি?
আমি বুঝতে পারছি ভূমি কী জিজ্ঞেস করতে চাইছ, সিডিসি আস্তে আস্তে বলল, আমি দুঃখিত লু, কিন্তু সেটাও আর করা সম্ভব নয়।
সত্যি?
সত্যি।
নীষা একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, কী জানতে চাইছ লু?
লু একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, খুব কাপুরুষের একটা কাজ। জানতে চাইছিলাম সিসিয়ানকে উড়িয়ে দেয়া যায় কি না, সব মহাকাশযানেই খুব সহজে পুরোটা ধ্বংস করার একটা ব্যবস্থা থাকে জান তো?