কেউ কিছু বলল না, লু মুখ ফুটে ট্রাইটনের অধিবাসীদের অচিন্তনীয় ক্ষমতার কথা উল্লেখ করে সবার মনকে দুর্বল করে দিয়েছে, হঠাৎ করে সবাই অনুভব করে তারা কত অসহায়।
সিডিসি পল কুমের শরীরকে মিলি কে তাপমাত্রায় নিয়ে নেয়ার দায়িত্ব নিয়ে নেয়, বিশেষ ধরনের হিলিয়াম কমপ্রেশার, তাপ নিরোধক ক্যাপসুল ইত্যাদি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে থাকে। পলকে মিলি কে তাপমাত্রায় নিয়ে বিশেষ ক্যাপসুলে করে সিসিয়ানে ফিরিয়ে আনা হবে। কিম জিবান সিডিসিকে সাহায্য করতে থাকে। রটেককে আনার প্রয়োজন নেই, তার মেমোরিকে সিসিয়ানে পাঠিয়ে সেটা একটা নূতন কপোট্রনে করে নূতন একটা রবোটের শরীরে জুড়ে দেয়া হবে। কাজটি সহজ, নীষা নিজে থেকে সে-দায়িত্ব নিয়ে নিল।
লু নিজের ঘরে ফিরে এসে দেখে নীষা তার ঘরে অপেক্ষা করছে। লু একটু অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার নীষা, তুমি কি আমাকে কিছু বলবে?
হ্যাঁ। জিনিসটা হয়তো খুবই হাস্যকর, তবু না বলে পারছি না।
নীষা, এখানে সবকিছু এত অবাস্তব যে কোনো কিছুই আর হাস্যকর নয়। কি বলবে?
পল বলেছিল লাল গোলাকার বৃত্তের কথা। তুমি দেখেছ ট্রাইটনের উপর গোলাকার বৃত্ত আছে, সেগুলির রং বেশ লালচে।
হ্যাঁ, কিন্তু—
এমন কি হতে পারে না যে, পল এই বৃত্তগুলির কথা বলেছে?
কিছুই অসম্ভব নয়, খুবই সম্ভব সেটা। তবে পল তিনটি বৃত্তের কথা বলেছিল, ট্রাইটনের উপর বৃত্ত রয়েছে দু’টি, যে জন্যে এটাকে দেখতে একজোড়া চোখের মতো মনে হয়।
তা ঠিক, নীষা মাথা নাড়ে, পল তিনটি বৃত্তের কথা বলেছিল, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। পল বলেছিল লাল বৃত্ত, এগুলি লালচে কিন্তু ঠিক লাল বলা যায় না। কেমন পচা ঘায়ের মতো রং।
লু একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, যাও নীষা, গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও, যতদূর সম্ভব শক্তি বাচিয়ে রাখ।
হ্যাঁ, যাই।
নীষা বিদায় নেয়ার পর লু একটু বিশ্রাম নেবে বলে ঠিক করল। শোয়ার আগে সে রু-টেকের সাথে একবার কথা বলে নিল। সিডিসি হিলিয়াম কমপ্রেশার পাঠিয়ে দিয়েছে। পলের শরীর কালো একটা স্টেনলেস স্টিলের ক্যাপসুলের ভিতর রাখা হয়েছে। খুব ধীরে ধীরে এখন তাপমাত্রা কমিয়ে আনা হচ্ছে। তাপমাত্রা খুব তাড়াতাড়িও কমানো যায়, জরুরি অবস্থায় মাইক্রো সেকেন্ডে কমানোর নজির আছে, তবে তাতে বিপদের ঝুঁকি অনেক বেশি, নেহায়েৎ বাড়াবাড়ি প্রয়োজন না হলে সেটা করা হয় না। পলের শরীরের তাপমাত্রা এখন শূন্যের নিচে চার ডিগ্রি, মিনিটে এক ডিগ্রি করে নেমে আসছে। আর ঘন্টাখানেকে পুরোপুরি নেমে যাবে, লু এই এক ঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে নেবে বলে ঠিক করল।
শুয়ে থাকতে থাকতে একসময়ে লু ঘুমিয়ে পড়েছিল, ওর ঘুম ভাঙল জরুরি বিপদ সংকেতের শব্দে, লাফিয়ে উঠে বসে সে, কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, সিডিসি, কি হয়েছে?, ট্রাইটনে কিছুক্ষণ হল তৃতীয় একটা বৃত্ত দেখা দিয়েছে এবং বৃত্তগুলির রং ধীরে ধীরে গাঢ় লাল হয়ে উঠছে। এখন খালি চোখে আপনারা বুঝতে পারবেন না, কিন্তু বৃত্তগুলি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।
নীষা তা হলে ঠিকই আন্দাজ করেছিল।
জ্বি।
সিডিসি, এটার মানে কী জান?
ঠিক জানি না, তবে আন্দাজ করতে পারছি। পল কুমকে ট্রাইটনের অধিবাসীরা যেকোডটা দিয়েছে, সেটা এখন পলের কার্যকর করার কথা। পল সম্ভবত এই সংকেতের জন্যে অপেক্ষা করছিল।
লু ঘড়ি দেখে বলল, পলের তাপমাত্রা এতক্ষণে মিলি কের খুব কাছাকাছি চলে গেছে, তাকে দিয়ে ট্রাইটনের অধিবাসীরা এখন কিছুই করতে পারবে না। সিডিসি, তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে নিয়ে এস, হাইপারডাইভ দিতে হবে।
সিডিসি কিছু বলল না, লু একটু অধৈর্য হয়ে বলল, কি হল, তুমি কোনো কথা বলছ না কেন?
আমি দুঃখিত লু, রু-টেক এইমাত্র আমাকে জানাল, পলের শরীরের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে, তাকে আর শীতল করা যাচ্ছে না।
কন্ট্রোলরুমে সবাই এসে হাজির হয়েছে, বড় মনিটরটিতে স্কাউটশিপের ভিতরটক দেখা যাচ্ছিল। র-টেকাকে সেখানে দেখা যাচ্ছে, সে উবু হয়ে একটা মিটারকে লক্ষ করছে, মুখ চিন্তাক্লিষ্ট। লু আসতেই সবাই একটু সরে তাকে জায়গা করে দেয়। লু কিম জিবানের দিকে তাকিয়ে বলল, কিম, তুমি হাইপারড়াইত দেবার জন্যে প্রস্তুত হও।
এখনি?
হ্যাঁ এক সেকেন্ডের কম সময়ের নোটিশে তোমাকে হাইপারডাইভ দিতে হতে পারে।
বেশ।
কিম জিবান হেটে কন্ট্রোলরুমের অন্য পাশে গিয়ে হাইপারভাইভের কন্ট্রোলটি খুলে বসে। লু মনিটরটি থেকে চোখ না সরিয়ে অন্যদের উদ্দেশ করে বলল, তোমরা মনিটরের আশেপাশে থাকতে চাইলে থাকতে পার, কিন্তু এক সেকেণ্ডের নোটিশে আমাদের হাইপারডাইভ দিতে হতে পারে, কাজেই আগে নিজেদের জায়গা ঠিক করে এস, শেষ মুহূর্তে যেন দেরি না হয়ে যায়।
হাইপারভাইভ দেয়ার সময়ে, স্থির সময়ের ক্ষেত্রে প্রবেশ করার ঠিক আগের মুহূর্তে ভরবেগের সাম্যতা রক্ষার জন্যে প্রচণ্ড শক্তিক্ষয় হয়, তাতে যে-কম্পনের সৃষ্টি হয়, সেটি ভয়ংকর। এই সিসিয়ানেই একবার একজন অসতর্ক বিজ্ঞানীর মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল। সেজন্যে হাইপারডাইভ দেয়ার আগে সবসময়েই বিশেষ আসনে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিতে হয়। লু মনিটরের সামনের চেয়ারটিতে নিজেকে শক্ত করে আটকে নেয়, অন্যেরাও নিজেদের আসনে সবকিছুর ব্যবস্থা করে মনিটরটিকে ঘিরে দাঁড়ায়। লু কয়েক মুহূর্ত রু– টেককে লক্ষ করে বলল, রু-টেক, আমি লু বলছি।