জানি না।
কয়টা বৃত্ত পল?
কয়েক মুহূর্ত পর দ্বিধান্বিত স্বরে বলল, তিনটা। বৃত্তগুলি বড় হয়ে একটা আরেকটাকে ঢেকে ফেলল, এখন একটা বড় বৃত্ত।
বড় বৃত্ত কী করছে?
এখন ছোট হচ্ছে। লাল বৃত্তটা ছোট হচ্ছে।
বলে যাও, পল তুমি থেম না।
বৃত্তটা ছোট হতে হতে প্রায় মিলিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু থেমে গেল, তারপর বড় হতে শুরু করল, বড় হতে থাকল, বড় হতে থাকল, আরো বড়, আরো বড়, আরো বড়—
তারপর?
থেমে গেল, এখন ছোট হতে শুরু করেছে, ছোট হচ্ছে, ছোট হচ্ছে, আরো ছোট হচ্ছে—পল কুমের নিঃশ্বাস দ্রুততর হতে থাকে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে ওর।
লু একটু ভয় পেয়ে ডাকল, পল—
আরো ছোট হচ্ছে, আরো ছোট—
পল, লু আবার ডাকল, পল কী হয়েছে তোমার?
এখন বড় হচ্ছে, আরো বড়, আরো বড়—পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে পল, আরো বড়, আরো বড়, আরো বড়–
হঠাৎ করে মনিটরে পলের ছবি অদৃশ্য হয়ে যায়, তার গলার স্বর শোনা যাচ্ছিল, সেটাও হঠাৎ থেমে গেল, কয়েক মুহূর্ত অস্বস্তিকর নীরবতা, কি হচ্ছে দেখাও যাচ্ছে না। হুটোপুটি করে কিছু একটা নড়াচড়া করছিল, ক্যামেরাটা একপাশে সরিয়ে নিতেই দেখা গেল, রু-টেক পল কুমকে মেঝেতে চেপে ধরে রেখে একটা ইনজেকশান দিচ্ছে, পল নিস্তেজ হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসতেই রু-টেক উঠে দাঁড়ায়। লু কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছিল রু-টেক?
জানি না, হঠাৎ করে মনে হল নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। তিরিশ মিলিগ্রাম রনিয়াম দিয়ে রেখেছি, চৰ্বিশ ঘন্টা এখন ঘুমিয়ে থাকবে। রু-টেক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, লু।
বল।
পলের মস্তিষ্কে কি আছে জানি না, কিন্তু যেটাই থাকুক, সেটা আমাদের বের করা উচিত না, আমার মনে হয় আমরা ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখতে পারব না।
কেন বলছ এটা রু-টেক, কিছু-একটা কি হয়েছে?
হ্যাঁ।
কি?
যে কয়েক মুহূর্ত ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, তখন ওর শরীরে একটা অস্বাভাবিক মেটামরফিজম শুরু হয়েছিল।
মানে?
অস্বাভাবিক কয়েকটা হরমোন বের হতে শুরু করেছিল, যেটা মানুষের শরীরে থাকার কথা নয়। আমার কাছে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার মতো ঠিক যন্ত্রপাতি নেই, কিন্তু যেটুকু দেখেছি মনে হচ্ছে সত্যিই তাই হয়েছে।
সত্যি?
হ্যাঁ। তোমার ঠিক কী পরিকল্পনা জানি না, কিন্তু আমার মনে হয় পলকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিলি কে তাপমাত্রায় নিয়ে ওর সবরকম শারীরিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
ঠিকই বলেছ তুমি রু-টেক। আমি ব্যবস্থা করছি।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
হ্যাঁ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। পলকে তো তুমি ঘুম পাড়িয়ে রেখেছ, ঘুম ভাঙার তো কোনো সম্ভাবনা নেই, নাকি আছে?
থাকার কথা নয়, রু-টেক একটু ইতস্তত করে বলল, কিন্তু এখানে কী হতে পারে আর কী না হতে পারে তার আর কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।
তা ঠিক। ঠিক আছে, আমি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
দাও।
জরুরি সভা বসেছে। গত চবিশ ঘন্টায় অনেক কিছু ঘটেছে, ঘটনাগুলির আকস্মিকতায় সবাই কমবেশি বিভ্রান্ত, ঠিক কী করা উচিত বোঝা সহজ নয়। লু এ অবস্থাতেও মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছে, ও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যখন জটিল কোনো সমস্যা হয়, তখন সেটার সমাধান একা একা বের করার চেষ্টা করা বড় ধরনের বোকামি। যদি কয়েকজন তীক্ষ্ণবুদ্ধির মানুষ পাওয়া যায়; তাদের সাথে সমস্যাটা আলোচনা করলে অনেক সময় খুব ভালো সমাধান বেরিয়ে পড়ে। লু মোটামুটি ঠিক করেছে কী করবে, সেটি এখন সবার সাথে আলোচনা করে ঠিক করে নিতে চায়। আজকের সভায় কোনোরকম ভনিতা না করে লু সোজাসুজি কাজের কথায় চলে এল, বলল, তোমরা সবাই জান এখানে কি হচ্ছে, আমি কি করতে চাইছি হয়তো জান বা আন্দাজ করতে পারছ। তবু একবার বলে নিই, কারো কোনো আপত্তি বা মতামত থাকলে জানাতে পার। পলের মস্তিষ্কে করে ট্রাইটনের অধিবাসীরা যে-কোডটা পাঠিয়েছে, পল সেটা জানে না, ওর অবচেতন মনে জানতে পারে, কিন্তু সজ্ঞানে সে জানে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কোডটা জানা তার জন্যে ভালো নয়, সেজন্যে সেটা জানা আমাদের জন্যেও ভালো নয়। আমি ট্রাইটনের অধিবাসীদের পাঠানো কোডটা না জেনেই ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে চাই। পলকে সাথে নিয়ে যাওয়ার একটামাত্র উপায়, সেটা হচ্ছে তার শরীরের তাপমাত্রা মিলি কে ডিগ্রিতে নামিয়ে নেয়া। যেহেতু আমরা জানি না পলকে দিয়ে পাঠানো কোডটা ঠিক কী ধরনের, আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। তোমাদের কারো কারো কাছে বাড়াবাড়ি মনে হলেও আমি তাপমাত্রা মিলি কে-তে নিয়ে যেতে চাই।
কিম জিবান হাত তুলে বলল, তুমি জান মানুষের শরীরকে মিলি কে তাপমাত্রায় নিতে এবং রাখতে কত শক্তি খরচ হয়?
খানিকটা জানি।
সিসিয়ানে কি এত জ্বালানি আছে?
সিডিসি উত্তর দিল, যদি একটার বেশি হাইপারভাইভ দেয়া না হয়, আর ট্রাইটনের অধিবাসীদের সাথে সরাসরি দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধে নামা না হয়, আমরা পলকে সম্ভবত এক সপ্তাহের মতো মিলি কে তাপমাত্রায় রাখতে পারব।
লু বলল, হাইপারডাইভ একটার বেশি দেবার প্রয়োজন হবে না, আর ট্রাইটনের সাথে যুদ্ধে নামার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।
কিন্তু যদি নামতে হয়, কিম জিন মুখ শক্ত করে বলল, যদি আমাদের কোনো উপায় না থাকে?
তা হলে নামব, কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না, আমি তোমাকে লিখে দিতে পারি। সমান ক্ষমতায় যুদ্ধ হয়, অসমান ক্ষমতার যুদ্ধ খুব ক্ষণস্থায়ী। আমি সে-যুদ্ধে নামতে চাই না। কারো কিছু বলার আছে?