কিম জিবান মাথা নেড়ে বলতে থাকে, যখন ফিরে যাব, আমি তখন কেন্দ্রীয় মহাকাশকেন্দ্রে তোমার বিরুদ্ধে নিজের মুখে নালিশ করব, মহাকাশযানের নেতা হতে হলে তার দলের লোকজ্জনের জন্যে অনুভূতি থাকতে হয়, যার সে অনুভূতি নেই, সে দলের নেতা হতে পারে না।
লু একটি কথা না বলে বিষণ্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিম জিবান রুক্ষ গলায় বলল, কি হল, তোমার কিছু বলার নেই?
লু আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বলল, সত্যি আমার কিছু বলার নেই কিম, তুমি যা বলেছ তার প্রত্যেকটা কথা সত্যি তোমাকে নালিশ করতে হবে না, আমি নিজেই কেন্দ্রীয় মহাকাশকেন্দ্রে বলব, আমাকে যেন অবসর দেয়া হয়।
কিম জিবান হঠাৎ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, কি বলবে বুঝতে পারে না। লু এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধ স্পর্শ করে বলল, আমি দুঃখিত কিম, ব্যাপারটা তোমাকে এত বিচলিত করছে, কিন্তু তুমি নিজেকে আমার জায়গায় বসিয়ে দেখ এরকম পরিস্থিতিতে তুমি কী করতে। আমি নিজের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারি, কিন্তু অন্যদের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারি না। যেটুকু করে ফেলেছি সেটাও বেশি করেছি, তোমাদের মতো হৃদয়বান লোকজন আছে বলেই করেছি।
কিম জিবান খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে থেকে বলল, লু, আমি দুঃখিত তোমাকে এভাবে এসে আক্রমণ করেছি, সব মিলিয়ে মাথার ঠিক নেই। তুমি কিছু মনে করো না।
আমি কিছু মনে করি নি। তোমার জায়গায় হলে আমিও সম্ভবত এরকম একটাকিছু করতাম।
দু জন খানিকক্ষণ সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে থাকে, কি বলবে ঠিক বুঝতে পারে না। কিম জিবান একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, লু তোমাকে কেন দলপতি করা হয়েছে আমি খানিকটা বুঝতে পারছি। তুমি ভীষণ বুদ্ধিমান ব্যক্তি।
লু মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি। সেটাই হচ্ছে আমার মুশকিল।
কিম জিবান হেসে বেরিয়ে যেতেই সিডিসি বলল, আমি কখনো মানুষকে বুঝতে পারব না, যখন মনে হল তুমি উন্মত্ত রাগে কিম জিবানকে আঘাত করবে তখন তুমি তার সব কথা মেনে নিজের দোষ স্বীকার করে নিলে।
লু মাথা নেড়ে বলল, কেন শুধু শুধু মানুষকে বুঝতে চেষ্টা কর সিডিসি? আমরা মানুষ হয়েই মানুষকে বুঝি না, তুমি কেমন করে বুঝবে? আর মানুষ কেন, আমি একটা কম্পিউটারকেই বুঝতে পারি না, স্কাউটশিপের ভিতরে জলজ্যান্ত মানুষ নিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যদি কম্পিউটার গোপন করে ফেলে—
সিডিসি বাধা দিয়ে বলল, সত্যি করে বল তো আমার কাছে, যদি সত্যিই আমি তা করে থাকি, তুমি কি সে জন্যে আমার কাছে কৃতজ্ঞ হবে না?
লু দীর্ঘসময় চুপ করে থেকে বলল, হব সিভিলি। তুমি ঠিকই বলেছ।
সিডিসি একটু হাসির মতো শব্দ করে বলল, সব সময় হয়তো মানুষকে আমি বুঝতে পারি না, কিন্তু কখনো কখনো সত্যি বুঝতে পারি।
লু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তাই তো দেখছি।
০৫. যোগাযোগ : দ্বিতীয় পর্ব
০৫. যোগাযোগ : দ্বিতীয় পর্ব
পল, আমি লু, আমাকে দেখতে পাচ্ছ তুমি?
পাচ্ছি।
তোমার কথা বলতে কষ্ট হলে কিছু বলার প্রয়োজন নেই, শুধু শুনে যাও।
একটু কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু সেটা এমন কিছু নয়।
রু-টেক বলেছে তোমাকে যে তোমার পাঁজরের দুটো হাড় ভেঙে গিয়েছিল, ডান হাতে কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার?
বলেছে।
তোমার ফুসফুস অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে ক্ষতিগ্রস্ত, বড় দুটো ধমনী ফেটে গেছে, সেটা বলেছে?
হ্যাঁ।
সৌভাগ্যক্রমে তোমার মস্তিষ্কে বিশেষ ক্ষতি হয় নি।
জানি।
রু-টেক এখন চমৎকার ডাক্তার, তোমাকে প্রায় দাঁড় করিয়ে এনেছে দেখতেই পাচ্ছ। তোমার কোনো ভয় নেই জান তো?
জানি।
বেশ, কাজের কথায় এসে পড়া যাক। লু একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করল, গত আটাশ ঘন্টায় কী হয়েছিল, তোমার কি কিছু মনে আছে?
না।
স্কাউটশিপটা অ্যাটমিক ক্লাস্টার দিয়ে ভাঙার পর কী হয়েছিল মনে আছে?
না। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে আমি ছিটকে গেলাম, এরপরে কী হয়েছে আমার কিছু মনে নেই।
কিছু মনে নেই? চেষ্টা করে দেখা
পল খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, না, কিছু মনে নেই।
কিচ্ছু নেই। খুব ভালো করে ভাব। রু-টেক তোমার মস্তিস্কের নিউরোন পরীক্ষা করে দেখেছে, গত আটাশ ঘন্টায় তোমার মস্তিষ্কে কোনো এক ধরনের খবর দেয়া হয়েছে।
পল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, সত্যি?
হ্যাঁ। ট্রাইটনের অধিবাসীরা সম্ভবত তোমাকে দিয়ে আমাদের কাছে কোনো একটা খবর পাঠিয়েছে, খবরটা আমাদের জানা দরকার।
পল কিছু না বলে চুপ করে থাকে। লু খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে ডাকল, পল।
বল।
তোমার কিছু মনে নেই। কোনো ঘটনা যদি না হয়, তা হলে কোনো সংখ্যা, কোনো চিহ্ন, কোনো শব্দ, কোনো রং—
লাল।
লু চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, লাল কি?
লাল রং।
কোথায় লাল রং? কিসের লাল রং?
জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে লাল রঙের—পল অনিশ্চিতের মতো থেমে যায়।
লাল রঙের কি?
পল হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, জানি না।
লু কষ্ট করে নিজেকে শান্ত রেখে বলল, পল, তুমি চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখ, চেষ্টা কর কিছু একটা মনে করতে, যাই মনে হয় আমাদের বল, যাই মনে হয়।
পল কুম চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করে, কিছুই তার মনে আসছে না, সে আরো গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনো লাভ হয় না।
চেষ্টা কর পুল, নিজের অবচেতন মনের কথা বের করার চেষ্টা কর, তুমি পারবে পল।
লাল বৃত্ত।
লাল বৃত্ত কি?
লাল বৃত্ত বড় হচ্ছে।
কেন বড় হচ্ছে? কোথায় বড় হচ্ছে? কী ভাবে বড় হচ্ছে?