দিচ্ছি।
নীষাকে ঘিরে সিসিয়ানের সবাই এসে দাঁড়িয়েছে, নীষা ল’য়ের দিকে তাকিয়ে বলল, লু, তুমি কথা বলবে?
লু মাথা নাড়ে, তুমিই বল।
নীষা মাইক্রোফোনটা টেনে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, পল কেমন আছে রু-টেক?
এক মহত ইতস্তত করে রু-টেক উত্তর দিল, জ্ঞান নেই শরীরে কিছু খারাপ রকমের জখম আছে, অবস্থা কত খারাপ বলতে পারছি না। এখানে বাতাসের চাপ ঠিক নেই, তাই পলকে স্পেসস্যুট থেকে বের করতে পারছি না।
নীষা ব্যস্ত হয়ে বলল, বের করার কিছু দরকার নেই, যেমন আছে সে-রকম থাকতে দাও। দেখতে পারি ওকে? ক্যামেরাটা চালু করতে পারবে?
কয়েক মুহূর্ত পর মনিটরের নীলাভ স্ক্রিনে আবছা একটা ছবি ফুটে ওঠে। ক্যামেরা বা স্ক্রিন কোথাও কিছু-একটা সমস্যার জন্যে ছবিটা বেশি স্পষ্ট হল না, যেটুকু হল সেখানে নীল রংয়ের প্রাধান্যটাই একটু বেশি হয়ে থাকল। এর মাঝেই সবাই দেখতে পায়, রু-টেক আর পল ভেসে বেড়াচ্ছে, ক্যামেরাটা সরিয়ে ওরা পলের মুখের দিকে দেখতে চেষ্টা করে, অচেতন মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝা গেল না। এই মানুষটিকে ট্রাইটনের প্রাণীরা টুকরো টুকরো করে খুলে আবার তৈরি করেছে, ব্যাপারটা চিন্তা করে নীষার কেমন জানি শরীর খারাপ হয়ে যেতে চায়।
লু এগিয়ে এসে বলল, রু-টেক, তুমি স্কাউটশিপটাকে কাছাকাছি নিয়ে এস, তারপর কথা বলা যাবে, তোমাদের কোনো ভয় নেই, সিডিসি তোমাদের সাহায্য করছে।
বেশ। রু-টেকের গলায় জোর নেই, কেমন যেন নিজীব মানুষের মতো গলা।
রু-টেক, তোমার সাথে একটু জরুরি কথা বলতে চাই।
স্কাউটশিপটা সিসিয়ান থেকে তিন শ’ কিলোমিটার দূরে এসে স্থির হওয়ামাত্রই লু রু-টেকের সাথে কথা বলতে শুরু করেছে। রু–টেক খানিকটা আন্দাজ করতে পারে লু কি বলবে, ঠাণ্ডা গলায় বলল, বল লু।
তুমি নিশ্চয়ই জান, কি বলব।
খানিকটা আন্দাজ করতে পারছি। অবশ্যি অনেক কিছুই বলার আছে, এই মুহূর্তে কোনটা বলবে ঠিক জানি না।
না, খুব বেশি কিছু বলার নেই। লু একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোমাদের এখন আমরা সিসিয়ানে ফেরত আসতে দিতে পারব না।
জানতাম।
তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, আমাদের কোনো উপায় নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে জানতে না পারছি ট্রাইটনের অধিবাসীরা তোমাদের ঠিক কী করেছে ততক্ষণ আমরা তোমাদের আসতে দিতে পারব না।
আমি বুঝতে পারছি লু।
আমি খুব দুঃখিত রু-টেক।
তোমার দুঃখিত হবার কিছু নেই লু, আমি অবস্থাটা বুঝতে পারছি।
গত আটাশ ঘন্টায় কি হয়েছে তোমার কিছু মনে আছে?
না।
কিছুই মনে নেই?
না, কিছুই মনে নেই।
লু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ভারি অবাক ব্যাপার। তোমার কি মনে হয় পলের কিছু মনে থাকবে?
রু-টেক ইতস্তত করে বলল, ট্রাইটনের প্রাণীরা আমাদের আবার নতুন করে তৈরি করে ফেরত পাঠিয়েছে, তারা যদি চায় আমরা কিছু মনে রাখি, তা হলে নিশ্চয়ই আমাদের কিছু একটা মনে থাকবে। আমি রবোট বলে আমাকে হয়তো বেশি গুরুত্ব দেয় নি, পলকে নিশ্চয়ই অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ওর কিছু একটা হয়তো মনে থাকতেও পারে। সোজাসুজি মনে না থাকলেও হয়তো অবচেতন মনে কিছু-একটা মনে থাকবে।
লু একটা প্রশ্ন করতে গিয়েও করল না, অনেকক্ষণ থেকে জিনিসটা ওকে বিব্রত করছে, কিন্তু সোজাসুজি জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না। স্বর পাল্টে বলল, রু–টেক, তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, তোমার এখন অনেক দায়িত্ব?
বুঝতে পারছি।
প্রথমে তোমাকে স্কাউটশিপটাকে ঠিক করতে হবে।
হ্যাঁ।
আমরা এখান থেকে যন্ত্রপাতি পাঠাচ্ছি। তুমি নিশ্চয়ই জান আমরা এখান থেকে যা ইচ্ছা তোমাদের কাছে পাঠাতে পারি, কিন্তু তুমি কখনোই আমাদের কিছু পাঠাবে না।
জানি।
স্কাউটশিপটা ঠিক করে, প্রথমে বাতাসের চাপটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আস। তারপর তোমাকে কয়েকটা অস্ত্রোপচার করতে হবে।
রু-টেক কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, আমাকেই করতে হবে?
আর কে করবে? আমরা এখন সুশানকে পাঠাতে পারি না। সুশান রাজি আছে কিন্তু আমরা তাকে এ অবস্থায় পাঠাতে পারি না।
কিন্তু লু, আমি ডাক্তারির কিছু জানি না। হাত কেটে গেলে আমি ব্যান্ডেজ পর্যন্ত করতে পারি না, তুমি তো জান, আমি পলিমারের তৈরি, আমার হাত কখনো কাটে না।
তুমি সেটা নিয়ে ভেবো না, লু রু-টেককে আশ্বাস দেয়, আমাদের ভাগ্য ভালো যে তুমি আমাদের সাথে আছ।
কেন?
শুধু তোমাকেই প্রয়োজন হলে একজন ডাক্তার বানিয়ে দেয়া যায়। সিডিসি তোমার জন্যে একটা সফটওয়ারের প্যাকেট তৈরি করছে, তোমার কপোট্রনে সরাসরি পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখানে সার্জারি, প্যাথোলজি, নিউরোলজি সবকিছু আছে। তোমার ডাক্তার হতে সময় নেবে মাইক্রোসেকেন্ড। ভালো কথা, তোমার কপোট্রনে কতটুকু মেমোরি খালি আছে?
রু-টেক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ইতস্তত করে বলে, বেশি খালি নেই, বার টেরাবাইট।
মাত্র বার টেরাবাইট?
সিডিসির সফটওয়ারের প্যাকেটটা কত বড়?
আট থেকে নয়ের ভিতরে হবে, কি কি দেয়া হবে তার উপর নির্ভর করে। যদি তোমার মাত্র বার টেরাবাইট বাকি থাকে, তা হলে এই সফটওয়ার নেয়ার পর কাজ করার জন্যে তোমার মাত্র তিন টেরাবাইট বাকি থাকবে। তুমি তো দেখি কোনো কাজই করতে পারবে না। জটিল কোনো অস্ত্রোপচার করতে হলে–
লু, তুমি এসব খুঁটিনাটি জিনিস নিয়ে মাথা ঘামিও না, প্রয়োজন হলে আমি আমার খানিকটা মেমোরি সিডিসিকে পাঠিয়ে জায়গা করে নেব।