আমি জানি পল, তোমাকে দরজা ভেঙে বের হতে হবে।
লু, আমি কখনো অ্যাটমিক ব্লাস্টার ব্যবহার করি নি, কী করতে হবে আমি জানি না।
আমি তোমাকে বলছি, তুমি সোজা করে ধর অ্যাটর্মিক ব্লাস্টারটা, উপরে যেসুইচটা আছে, টেনে একেবারে সোজা তোমার কাছে নিয়ে এস।
এই সময় হঠাৎ পুরো স্কাউটশিপটা প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে, পল ছিটকে পড়ে একবার ঘুরপাক খেয়ে কোনোমতে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ভয় পাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে লু?
যে-স্কাউটশিপটা ট্রাইটন থেকে উঠে তোমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল, কিম জিবান সেটা উড়িয়ে দিয়েছে। তোমার সময় নেই পল, তুমি এসব জানতে চেয়ো না, তোমাকে যা বলছি তাই কর।
কিন্তু এই স্কাউটশিপটা কেন কেঁপে উঠল?
শক ওয়েভ।
শক ওয়েভ কোথেকে আসবে, বায়ুমণ্ডল নেই তো শক ওয়েত কোথেকে আসবে?
পল, তোমাদের স্কাউটশিপটা ঘিরে একটা বায়ুমণ্ডল তৈরি হচ্ছে, তোমাদের স্কাউটশিপটা ট্রাইটনে পড়ে যেতে চেষ্টা করছে। তোমার সময় নেই, তুমি যদি দশ সেকেন্ডের ভিতর দরজা ভেঙে বের হয়ে আসতে না পার, তোমাকে আমরা বাঁচাতে পারব না। কাজেই তুমি এখন আর কিছু জানতে চেয়ো না, তোমাকে যা বলা হয় করার চেষ্টা কর। আর নয় সেকেন্ড।
রু-টেক? রু-টেকের কী হবে?
রু-টেকের পুরো মেমোরি সিডিসিতে পাঠানো হয়ে গেছে, সে যদি ধ্বংসও হয়ে যায় তাকে আবার তৈরি করা যাবে। তাকে নিয়ে চিন্তা করো না। পল, আর আট সেকেন্ড। তুমি আর কথা বলবে না, শুধু শুনবে। ব্লাস্টারটা উঁচু করে ধর।
ধরেছি।
সুইচটাকে টেনে নাও নিজের দিকে।
নিয়েছি।
ট্রিগারে ডান হাত দাও। এখনি টানবে না, বাম হাত দিয়ে সবগুলি নব বাইরের দিকে ঠেলে দাও।
দিয়েছি।
চমৎকার। আর ছয় সেকেন্ড। উপরের লাল লিভারটি টেনে মিটারটি লক্ষ কর, মিটারের কাঁটাটি নড়ছে?
হ্যাঁ, নড়ছে।
বেশ। কাঁটাটি যখন সাত আর আটের ভিতরে আসবে ট্রিগারটি টেনে দেবে। তোমার জেটের কন্ট্রোল এখন আমাদের হাতে, ক্লাস্টার চালানোর সাথে সাথে ভাঙা দরজা দিয়ে তোমাকে টেনে বের করে আনা হবে। প্রচণ্ড আঘাত পাবে তুমি, সম্ভবত জ্ঞান থাকবে না তোমার, কিন্তু সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। তিন সেকেন্ড আছে আর, কাঁটাটা কোথায় এখন পল?
ছুয়ের কাছে, সাতে চলে আসছে।
চমৎকার পল, বেঁচে গেলে তুমি, ট্রিগারটা টেনে দাও।
পল ট্রিগার টেনে দিল। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে জ্ঞান হারাল সাথে সাথে।
লু মনিটরটির দিকে তাকিয়ে দরদর করে ঘামতে থাকে, পলকে সে বাঁচাতে পারে নি। অ্যাটমিক ব্লাস্টার দিয়ে দরজা ভেঙেও পলকে বের করে আনতে পারে নি, অসম্ভব দুততায় স্কাউটশিপটা ঘুরে গিয়েছিল, ভাঙা দরজা দিয়ে বেরিয়ে না এসে দেয়ালে আঘাত খেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে পল কুম। লু দেখতে পায়, পল কুম আর রু-টেকের জ্ঞানহীন দেহ স্কাউটশিপের ভিতর ভেসে বেড়াচ্ছে। মনিটরের ছবি আবছা হয়ে আসছে দুত, কিছু-একটা নষ্ট হয়েছে স্কাউটশিপে, সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা মনে পড়ল না লুয়ের।
সবাই মনিটরটিকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কারো মুখে কোনো কথা নেই। এখনো আবছা আবছাভাবে স্কাউটশিপটাকে দেখা যাচ্ছে। দ্রুত সেটা ট্রাইটনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কারো কিছু করার নেই। সিডিসি প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কিন্তু সবাই জানে, সেও কিছু করতে পারবে না। তারা হঠাৎ করে ভয়ংকর এক প্রতিদ্বন্দীর সামনা-সামনি পড়ে গেছে।
সুশান আস্তে আস্তে বলল, আরো একটা স্কাউটশিপ উঠে আসছে লু।
লু অন্যমনস্কভাবে মাথা নাড়ে, এটা চতুর্থ স্কাউটশিপ। দ্বিতীয়টা উঠে এসেছিল প্রথমটার প্রায় আঠার ঘন্টা পর, তৃতীয়টা এসেছে অনেক তাড়াতাড়ি, প্রায় দুই ঘন্টার ভিতরে। চতুর্থটা এসেছে আরো তাড়াতাড়ি, প্রায় ঘন্টাখানেকের মাঝে। স্কাউটশিপগুলি হুবহু একরকম একটি জিনিস ছাড়া, ভিতরের জৈবিক পদার্থটি আস্তে আস্তে ওদের পাঠাননা জৈবিক পদার্থের মতো হয়ে আসছে। ব্যাপারটা এখন খুবই স্পষ্ট, ট্রাইটনে একধরনের অসাধারণ ক্ষমতাশালী প্রাণী আছে, সেগুলি স্কাউটশিপটা হুবহু করে তৈরি করতে চেষ্টা করছে। অন্য সবকিছু তৈরি করতে পেরেছে, কিন্তু জৈবিক পদার্থটি পারে নি, তাই সেটাই বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সুশান সিসিয়ানে বসে জৈবিক পদার্থটি পরীক্ষা করে দেখছে, তার মতে ট্রাইটনের অধিবাসীরা সেটি প্রায় তৈরি করে এনেছে, পরের স্কাউটশিপটাতেই হয়তো ঠিক ঠিক তৈরি করে নেবে।
প্রথম দিকে স্কাউটশিপগুলি যত উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল, এখন আর ততটুকু করছে না। চতুর্থ স্কাউটশিপটা কেউ ভালো করে লক্ষ পর্যন্ত করল না। সুশান রুটিনমাফিক পরীক্ষা করে বলে দিল, জৈবিক পদার্থগুলিতে এখন প্রতি ট্রিলিয়ন অণুতে একটি করে ভুল আছে, পরের বারের মাঝে সেটা ঠিক করে নেবে বলে মনে হয়। সুশান পরীক্ষা করার পরপরই কিম জিবান সেটাকে উড়িয়ে দিল, কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে একটার বেশি স্কাউটশিপ থাকাটা ওদের ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না। পঞ্চম স্কাউটশিপটিতে সুশান জৈবিক পদার্থটিকে নিখুঁত অবস্থায় পেল, এবং সেটিই ছিল ট্রাইটনের তৈরি করা শেষ স্কাউটশিপ।
সিডিসি প্রাণপণ চেষ্টা করেও পুল কুম আর রটেকের স্কাউটশিপটাকে বাঁচাতে পারল না, তাদের অচেতন দেহ নিয়ে সেটা ধীরে ধীরে ট্রাইটনে পড়ে যেতে থাকে। একবার ট্রাইটনের ভিতর পড়ে যাওয়ার পর কী হবে, সেটা এখন কেউ চিন্তাও করতে চায় না। সবাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে থাকে ব্যাপারটি শেষ হয়ে যাওয়ার জন্যে, অনেকটা প্রিয়জনের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুদৃশ্য দেখার মতো। সিডিসি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাওয়ায় পল কুম আর রু–টেককে নিয়ে ওদের স্কাউটশিপটা আরো ঘটখানেক ভেসে থাকল। যখন সেটি শেষ পর্যন্ত ট্রাইটনে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেল, তখন সিসিয়ানের সবাই মানসিকভাবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত।