রু-টেক গলা নামিয়ে লুয়ের সাথে যোগাযোগ করল, লু।
কি? একটা অস্বাভাবিক জিনিস দেখছি এখানে।
কি?
স্কাউটশিপের দেয়ালটাতে কোনো ত্রুটি নেই, শতকরা তিন ভাগ পর্যন্ত ত্রুটি থাকার কথা।
লু এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তার মানে কি?
আমি জানি না, দাঁড়াও, সিডিসিকে জিজ্ঞেস করি। রু-টেক নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সিতে যোগাযোগ করে সিডিসির কাছ থেকে উত্তর জেনে নিল সাথে সাথেই।
লু জিজ্ঞেস করল, কী বলল সিডিসি?
রু-টেক একটু দ্বিধা করে বলতে, আশ্চর্য একটা কথা বলেছে সিডিসি। সত্যিই কি এটা সম্ভব?
লু আবার জিজ্ঞেস করে, রু-টেক, সিডিসি কী বলেছে?
সিডিসি বলেছে, এর দেয়ালে যদি কোনো ত্রুটি না থাকে, তার অর্থ হচ্ছে এটা মহাকাশ গবেষণাগারে তৈরি হয় নি, অন্য কোথাও তৈরি হয়েছে।
কোথায় তৈরি হয়েছে?
সিডিসির ধারণা, এটা ট্রাইটনে তৈরি হয়েছে।
লু চমকে উঠে বলল, কী বললে তুমি?
রু-টেক ইতস্তত করে বলল, সিডিসির ধারণা, আমরা যে স্কাউটশিপটা পাঠিয়েছিলাম, সেটা সত্যি ট্রাইটনে ধ্বংস হয়েছিল, ট্রাইটন থেকে তখন আরেকটা স্কাউটশিপ তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।
লু কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বলতে পারে না, খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, সিডিসির ধারণা সত্যি কি না তুমি প্রমাণ করতে পারবে?
মনে হয় পারব। দাঁড়াও, একটা স্কু খুলে আনি, কাছে থেকে দেখলেই বোঝা যাবে এটা কী ভাবে তৈরি হয়েছে।
লুয়ের সাথে সাথে সিসিয়ানে সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকে।
পল কুমের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে। সে একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার দেখছে, সুশানের সাথে সে স্কাউটশিপে যে-জৈবিক পদার্থটি পাঠিয়েছিল, সেটি এখানে নেই, তার বদলে আছে অন্য একটি জৈবিক পদার্থ, প্রায় আগেরটার মতোই কিন্তু একটু অন্যরকম, দেখে মনে হয় কেউ তাদের পাঠানো পদার্থটি তৈরি করার চেষ্টা করেছে, ঠিক করে পারে নি, কিন্তু যেটুকু পেরেছে, সেটা অবিশ্বাস্য! মানুষ তার পুরো জ্ঞানভাণ্ডার নিয়ে হাজার বছর চেষ্টা করে এখনো একটা ক্ষুদ্র ভাইরাস পর্যন্ত তৈরি করতে পারে নি, কিন্তু কোনো-এক অসাধারণ বুদ্ধিমান প্রাণী কয়েক ঘন্টার মাঝে এধরনের একটা জৈবিক পদার্থ তৈরি করে ফেলেছে। পল কুমের নিজের চোখকে বিশ্বাস হয় না, আরেকবার দেখে নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্যে সে তার কোনাসের উপর বুকে পড়ছিল, ঠিক তখন সে লু’য়ের গলা শুনতে পায়, পল কুম আর রু-টেক।
কি হল?
লু প্রায় মেপে মেপে বলল, তোমরা দু’জন এই মুহূর্তে স্কাউটশিপ থেকে বেরিয়ে এস। আবার বলছি, তোমরা দু’জন এই মুহূর্তে স্কাউটশিপ থেকে বেরিয়ে এস। বাকি দায়িত্ব আমাদের।
কেন? পল কুমের গলা কেপে যায়, কী হয়েছে?
এইমাত্র ট্রাইটন থেকে আরেকটা স্কাউটশিপ বেরিয়ে এসেছে।
ভুয়ের একটা শীতল স্রোত পল কুমের মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায়, নিজেকে জোর করে শান্ত রাখে তবু। মূল্যবান কোনাসকে নিয়ে যাবে কি না এক মুহূর্তের জন্যে চিন্তা করে সে এটাকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। রু-টেক প্রায় অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একটা ছোট স্ক্র পরীক্ষা করছিল, পল কুমকে দাঁড়াতে দেখে সে পিছু পিছু এগিয়ে যায়। দরজাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুলতে হয়, একজন মানুষের জন্যে বেশ শক্ত, পল সরে গিয়ে রু-টেককে খুলতে দেয়, প্রয়োজনে রু-টেক অমানুষিক জোর খাটাতে পারে।
রু-টেক দরজার হাতলটা স্পর্শ করে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ পল কুমের দিকে তাকাল। পল অবাক হয়ে বলল, কি হল, রু-টেক, দরজা খুলছ না কেন?
রু-টেক আস্তে আস্তে বলল, আমরা আটকা পড়ে গেছি, পল।
কী বলছ তুমি। পল ধাক্কা দিয়ে রু-টেককে সরিয়ে দিয়ে দরজার হাতল ধরে ঝাঁকুনি দেয়, সেটা পাথরের মতো শক্ত।
রু-টেক প্রায় ফিসফিস করে বলল, স্কাউটশিপের দরজাটা কম্পিউটার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এই মুহূর্তে সেটা কোনভাবে জ্যাম করে দেয়া হয়েছে। কম্বিনেশান পাল্টে যাচ্ছে আমি শুনতে পাচ্ছি স্পষ্ট, এটা আর কেউ খুলতে পারবে না।
তা হলে?
সরে দাঁড়াও, অ্যাটমিক ব্লাস্টার দিয়ে ভেঙে ফেলি।
পল কুম সরে দাঁড়াতেই রু-টেক দক্ষ হাতে অ্যাটমিক ব্লাস্টারটা তুলে নেয়, দরজার দিকে তাক করে ট্রিগার টানতে গিয়ে থেমে যায় রু–টেক, ওর হাত কাঁপতে থাকে থরথর করে।
কি হল?
কথা বলতে পারে না রু-টেক, অনেক কষ্টে বলে, পা-পারছি না।
কি পারছ না?
কপোট্রনে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে, বার দশমিক আট মেগাহার্টজ তরঙ্গ, সব এলোমেলো করে দিচ্ছে আমার, রুটকের গলার স্বর ভেঙে আসে, পল তু-তুমি চেষ্টা কর, আ-আ-আমি আর পারলাম না। রু-টেকের গলা থেকে হঠাৎ আশ্চর্য ধাতব যান্ত্রিক শব্দ বের হতে থাকে। হাত থেকে অ্যাটমিক ব্লাস্টার প্রায় ছুটে যাচ্ছিল, পল কুম কোনোভাবে ধরে নেয়। রু-টেকের জ্ঞানহীন দেহ স্কাউটশিপে ঘুরপাক খেতে থাকে। পল কুম কাঁপা গলায় ডাকল, লু—লু—
শুনতে পাচ্ছি পল। পল কুমের শুনতে অসুবিধে হয়, হেডফোনে ঝিঝি পোকার মতো আওয়াজ।
রু-টেক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, বার মেগাহার্টজ-এর তরঙ্গ–
বুঝতে পারছি। ওর কপোট্রনের মূল তরঙ্গ এটা, এটা দিয়ে ওকে অচল করে দেয়া যায়। আমি বলছি তোমাকে, কী করতে হবে।
লু, আমার ভয় করছে, খুব ভয় করছে।
আমি বুঝতে পারছি পল। কিন্তু তুমি মাথা ঠাণ্ডা রাখ, তোমাকে আমি বলছি, কী করতে হবে।
লু, দরজা বন্ধ হয়ে গেছে স্কাউটশিপের, আমরা—