রু-টেক এক মূহুর্ত ইতস্তত করে বলল, সিডিসি বলছে যে স্কাউটশিপটা ট্রাইটনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সেটা–
সেটা কী?
সেটা নাকি আবার উঠে আসছে।
কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলতে পারে না। সবচেয়ে আগে কথা বলল সুশান, কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, ভিতরে কেউ আছে? কোনো প্রাণী?
না। ভিতরে নূতন কিছু নেই, আমরা যা পাঠিয়েছিলাম তাই আছে। রু-টেক একটু থেমে যোগ করল, সিডিসি তাই বলছে।
ঘটনার চমকটা কাটতেই সিসিয়ানে প্রথমবার একটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়ে যায়। সবাই মিলে স্কাউটশিপের নানারকম খবরাখবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিম জিবান বড় মনিটরটিতে স্কাউটশিপের ছবিটাকে ফুটিয়ে তোলে, ঠিক যেভাবে পাঠানো হয়েছিল সেভাবেই ফিরে আসছে, দু’পাশের অত্যন্ত ভঙ্গুর দু’টি এন্টেনা পর্যন্ত আগের মতো আছে। লু ঠোঁট কামড়ে বলল, ট্রাজেক্টরিটা বের কর।
কিম জিবান কয়েকটা বোতাম টিপে মনিটরে কী-একটা পড়ে বলল, চার দশমিক দুই, এপিসেন্টার তিন ডিগ্রী।
আমরা যে-পথে পাঠিয়েছিলাম সেই পথে ফিরে আসছে?
হ্যাঁ।
লু এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, স্কাউটশিপটা আসলে ধ্বংস হয় নি, আমাদের ধোঁকা দেয়া হয়েছিল।
কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলে না। পল কুম চিন্তিত মুখে বলল, সিডিসি, তোমার কী ধারণা?
সিডিসি জানাল, স্কাউটশিপ থেকে যেসব তথ্য এসেছে সেটা থেকে প্রায় নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায় স্কাউটশিপটি ধ্বংস হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু সেটি আবার উঠে আসছে, তার মানে আসলে সেটি ধ্বংস হয় নি, স্কাউটশিপে পাঠানো খবরাখবরে কোনো একটা জটিল ত্রুটি ছিল, সেটি কী, সিডিসি এখন বের করার চেষ্টা করছে।
লু গম্ভীর গলায় বলল, পল আর সুশান, তোমরা দু’জন স্কাউটশিপটিকে যা করতে পাঠিয়েছিলে সেটা করা হয়েছে কি না দেখ। আর জিবান, তুমি হাইপারডাইভের সার্কিটটা চালু করে রাখ।
সুশান আর পল কুম নিজেদের ল্যাবরেটরিতে বসে স্কাউটশিপে পাঠানো বিভিন্ন জৈবিক পদার্থগুলি পরীক্ষা করতে থাকে। স্কাউটশিপের কম্পিউটারে কোনো সমস্যা নেই, নির্দেশ পাঠানোমাত্রই সেটি সিডিসির সাহায্য নিয়ে তার কাজ শুরু করে দেয়। একটি একটি করে সবগুলি জিনিস পরীক্ষা করে দেখা হয়, কোনোটাতে কোনো অস্বাভাবিক কিছু নেই। যখন মাত্র দু’টি জিনিস পরীক্ষা করা বাকি তখন হঠাৎ পল কুমের ভুরু কুঁচকে ওঠে। সুশান এগিয়ে এসে বলল, কি হয়েছে পল?
এই দেখ।
সুশন নিরীহ গোছের একটা গ্রাফের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, এটা তো আমরা পাঠাই নি।
না।
কোথা থেকে এল?
আসার কথা নয়। প্রচণ্ড রেডিয়েশনে মিউটেশান হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু আর কোথাও তো মিউটিশানের চিহ্ন নেই।
তা হলে?
এক হতে পারে কোনো ধরনের আঘাতে ক্রোমোস্কোপের ক্যালিব্রেশান যদি নষ্ট হয়ে থাকে।
লু’য়ের সাথে কথা বলবে?
ডাক।
লুয়ের সাথে সাথে পুরো দলটি হাজির হয়। লু একটু শঙ্কিত স্বরে বলল, কিছু হয়েছে পল?
বলা মুশকিল, সবগুলি পরীক্ষার ফল বলছে গ্রহটিতে উন্নত কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই। শুধু একটি পরীক্ষা বলছে অন্যরকম।
সেইটি কী বলছে?
পল অস্বস্তির সাথে মাথা চুলকে বলল, ঠিক করে বলা মুশকিল। অন্যান্য জিনিসের সাথে আমরা খানিকটা জটিল জৈবিক পদার্থ পাঠিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল যদি কোনো উন্নত প্রাণীর কাছাকাছি আসে, সেটাতে একটা কম্পন ধরা পড়বে, মেগাসাইকেল রেঞ্জের কম্পন।
দেখা গেছে?
না, কিন্তু অন্য একটা ব্যাপার হয়েছে। কি?
জৈবিক পদার্থটি পাল্টে গেছে, আমরা যেটা পাঠিয়েছিলাম সেটা আর নেই, অন্য একটা কিছু আছে।
লু ভুরু কুঁচকে বলল, অন্য কিছু?
হ্যাঁ।
অন্য কিছু কোথা থেকে আসবে?
আসার কথা নয়, সেটাই হচ্ছে ধাঁধা। এক হতে পারে শক্ত কোনো আঘাতে ক্যালিব্রেশানটি নষ্ট হয়ে গেছে, খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু পুরোপুরি অসম্ভব নয়। ট্রিনিটিতে একবার হয়েছিল বলে শুনেছিলাম।
অন্য কোনোভাবে হতে পারে?
না। সুশান, তুমি কী বল?
সুশান চিন্তিতভাবে মাথা নাড়ে, এক হতে পারে যে কেউ এসে এটা পাল্টে দিয়ে গেছে। কিন্তু কে এসে স্কাউটশিপে ঢুকে এরকম একটা কাজ করবে যে আর কোথাও তার কোনো চিহ্ন থাকবে না?
লু চিন্তিতভাবে নিজের ঠোঁট কামড়াতে থাকে। গ্রহটির সবকিছু কেমন ধোঁয়াটে। ছোট ছোট অনেকগুলি ঘটনা ঘটল, যার প্রত্যেকটা রহস্যময়, মনে হয় অসাধারণ কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর কাজ, কিন্তু সবগুলিতেই কেমন জানি সন্দেহ রয়ে গেছে, সবগুলিকে মনে হয় ছোট ছোট দুর্ঘটনা।
লু সুশান আর পল কুমের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখ, তোমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পার কিনা। যদি প্রমাণ করতে পার এখানে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী নেই, তা হলে আমরা চলে যেতে পারি, আবার যদি প্রমাণ করতে পার এখানে অসাধারণ বুদ্ধিমান কোনো প্রাণী আছে, তা হলেও আমরা চলে যেতে পারি।
স্কাউটশিপটা ফেরত এসে সিসিয়ান থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দুরে এসে দাঁড়ায়, সে-রকমই কথা ছিল। ট্রাইটন থেকে যেসব জিনিসপত্র তুলে এনেছে সেগুলি আরো সুচারুভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, সিলিকনের নানা ধরনের অনু, বিচিত্র ধরনের পলিমার, কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নেই। পল কুম নানাভাৰে তার সবকিছু পরীক্ষা করে দেখল, কিন্তু সেই অস্বাভাবিক জৈবক পদার্থটির কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পেল না।
ঘন্টা দুয়েক পর পল কুম একটা আশ্চর্য প্রস্তাব করে, সে স্কাউটশিপে গিয়ে জৈবিক পদার্থটি পরীক্ষা করে দেখে আসতে চায়।