আমি কী ভুল করছি?
তুমি নিশ্চয়ই আশা কর না যে আমি তোমার মতো উন্মাদকে এত সহজে আমার প্রসেসরে এসে গুলি করতে দেব! তুমি নিশ্চয়ই জান আমি আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।
রিওন মাথা তুলে তাকাল, বলল, সেটি কীভাবে করবে তুমি কোয়াকম্প?
তোমার মস্তিষ্কের ন্যাচারাল ফ্রিকোয়েন্সি আমি জানি। এই ঘরটিতে আমি তোমার মস্তিকের জন্য সঠিক কম্পনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন পাঠাচ্ছি। তুমি তোমার রিভলবারটি এখন ধীরে ধীরে তোমার নিজের মাথায় ধরবে রিওন। তারপর তুমি ট্রিগার টেনে। ধরবে। আমার এই ছোট ঘরটি তোমার রক্ত, মস্তিষ্ক আর তোমার খুলির অংশবিশেষে মাখামাখি হয়ে যাবে।
রিওন চোখ বড় বড় করে তাকাল, বল সত্যি?
হ্যাঁ। সত্যি। বিদায় রিওন।
রিওন হঠাৎ শব্দ করে হেসে ফেলল, বলল, কোয়াকম্প। তুমি একটা জিনিস লক্ষ করেছ?
কী?
আমি এই ঘরের ভেতরে এসে টুপিটা খুলি নি। কেন খুলি নি, জান?
কেন?
কারণ আমার মাথায় আমি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেঁচিয়ে রেখে সেটা টুপি দিয়ে ঢেকে রেখেছি। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন আটকে রাখার এই সহজ পদ্ধতিটা আমি কোথায় শিখেছি জান?
কোয়াকম্প কোনো কথা বলল না। রিওন ফিসফিস করে বলল, জলমানব নিহনের কাছে। সে আমার মেয়ের প্রাণ রক্ষা করেছে কোয়াকম্প। সে তোমার হাত থেকে আমার মেয়েটিকে রক্ষা করেছে। কোয়াকম্প, আমি আমার মেয়েটিকে খুব ভালবাসি। এই মেয়েটি ছাড়া আমার কেউ নেই। যে আমার মেয়েকে খুন করতে চায় তাকে আমি বাচিয়ে রাখতে পারি না।
কোয়াকম্প কাতর গলায় বলল, আমার ভুল হয়ে গেছে রিওন। আমাকে তুমি ক্ষমা কর।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার যখন ভুল করে তখন সেটি আর কোয়ান্টাম কম্পিউটার থাকে না। সে যখন ক্ষমা চায় তখন সে কিছু জঞ্জাল ছাড়া আর কিছু নয়।
রিওন তার রিভলবারটি উপরে তুলল, কোয়াকম্প আবার কাতর গলায় বলল, রিওন। তোমাকে বিশ্বজগতের দোহাই দিয়ে অনুরোধ করি, তুমি আমাকে হত্যা কোরো না! তুমি আমাকে আর একটি সুযোগ দাও। একটি শেষ সুযোগ…
রিওন ট্রিগার টেনে ধরতেই ছোট ঘরটিতে গুলির প্রচণ্ড শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে ওঠে। গুলির আঘাতে সোনালি প্রসেসরটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তরল নাইট্রোজেনের টিউব ফেটে হিমশীতল গ্যাস ঘরটাকে শীতল করে দেয়। রিওন তার রিভলবারটি তুলে আবার গুলি করল, দ্বিতীয় প্রসেসরটিও সাথে সাথে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। রিভলবারের ছয়টি গুলি দিয়ে পরপর ছয়টি প্রসেসরকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ে রিওন পিছিয়ে আসে। বহু দূর থেকে কাতর। আর্তনাদের মতো একটা এলার্মের শব্দ ভেসে আসতে থাকে।
রিওন পিছিয়ে এসে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে, তার পকেটে যোগাযোগ মডিউলটা শব্দ করছে। রিওন সেটা হাতে নিয়ে নিচু গলায় বলল, প্রতিরক্ষা দপ্তর? তোমাদের বিচলিত হবার প্রয়োজন নেই। আমি কোয়াকম্পকে অচল করে দিয়েছি। আর শোন আমার মেয়ে কাটুস্কাকে খুঁজে বের কর। তার সাথে একটা কমবয়সী ছেলে থাকতে পারে-খবরদার তার যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
রিওন যোগাযোগ মডিউলটা পকেটে রেখে দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। দূর থেকে ইনিয়ে-বিনিয়ে কান্নার মতো একটা শব্দ আসছে, কে কাঁদছে? যন্ত্র কি যন্ত্রণায় কাঁদতে পারে?
.
সমুদ্রের ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছিল। আকাশে একটা অসম্পূর্ণ চাঁদ, তার মৃদু আলোতে পুরো বালুকাবেলাটিতে এক ধরনের নরম আলো। সেই নরম কোমল আলোতে নিহন একটা নৌকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে বলল, চমৎকার!
কাটুস্কা ইতস্তত করে বলল, তুমি সত্যি–সতি এই নৌকা দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেবে? এটা তো একটা খেলনা নৌকার মতো।।
খেলনা নৌকার মতো হলেও এটা সত্যি নৌকা। নিও পলিমারের তৈরি সমুদ্রের লোনা পানিতে ক্ষয়ে যাবে না। আমার জন্য যথেষ্ট।
এই ছোট নৌকা করে তুমি একা একা কয়েক হাজার কিলোমিটার যাবে?
হ্যাঁ।
কীভাবে যাবে?
তোমার কাছে এই শুকনো মাটিটুকু যে রকম আপন আমার কাছে সমুদ্রের পানি সে রকম আপন। এই সমুদ্রের পানি আমার নিজের এলাকা। আমি এখানে দিনের পর দিন থাকতে পারি।
কোন দিকে যেতে হবে তুমি কেমন করে বুঝবে?
বছরের এই সময় একটা বড় স্রোত তৈরি হয়, আন্তঃমহাসাগরীয় বিষুবীয় স্রোত। সেই স্রোত নৌকাটাকে নিয়ে যাবে!
তুমি খাবে কী?
সমুদ্রে কি খাবারের অভাব আছে? কত মাছ। কত রকম সামুদ্রিক লতাপাতা। সমুদ্রে কেউ না খেয়ে থাকে না।
পানি? পানি কোথায় পাবে?
ঠিকভাবে খেলে আলাদা করে আর পানি খেতে হয় না। আমরা ঠিক করে খেতে পারি। তা ছাড়া সমুদ্রের পানি থেকে যে জলীয় বাষ্প বের হয়, আমরা সেটা সগ্রহ করতে পারি
কিন্তু
নিহন হাসার ভঙ্গি করে বলল, এর মধ্যে কোনো কিন্তু নেই কাটুস্কা। আজ হোক কাল হোক আমার সঙ্গে কোনো একটা ডলফিনের ঝাকের সঙ্গে দেখা হবে। আমি তাদের দিয়ে খবর পাঠাব-ঠিক ঠিক খবর পৌঁছে যাবে আমার এলাকায়। আমার পোষা ডলফিন চলে আসবে তখন।
কাটুস্কা অবাক হয়ে বলল, কী আশ্চর্য! তোমরা সত্যিই ডলফিনের সঙ্গে কথা বলতে পার?
হা, পারি। ডলফিন খুব বুদ্ধিমান, তাদের বুকভরা ভালবাসা। কাজেই তুমি আমার জন্য কোনো চিন্তা কোরো না। আমি পৌঁছে যাব। শুধু একটা ব্যাপার।
কী ব্যাপার?
এই যে নৌকাটা আমি নিয়ে যাচ্ছি কাউকে কিছু না বলে এটা তো ঠিক হচ্ছে না। এটা কার নৌকা আমি জানি না।